শেষের পাতা

বেতন হয় না ৭০ মাস, অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির হুমকি

স্টাফ রিপোর্টার

১৩ জুন ২০২১, রবিবার, ৯:৩৭ অপরাহ্ন

দেশের ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ পৌরসভায় দুই থেকে ৭০ মাস পর্যন্ত বেতন-ভাতা বকেয়া। টাকার হিসাবে প্রায় ৮ শ’ ৭৫ কোটি টাকা। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ১১ হাজার ৬শ’ ৭৫ জন পৌর কর্মচারী। আসন্ন ঈদুল আজহার পূর্বে শতভাগ বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ না করলে ২৫শে জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস এসোসিয়েশন (বিএপিএস)। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন সংগঠনের সভাপতি আব্দুল আলীম মোল্লা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে পৌরসভার কর্মচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণ কার্যক্রম চালালেও, কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালির কারণে নিজেদের জীবনই এখন হুমকির মুখে পড়েছে। তাদের ঘরে খাবার নাই। এখন পর্যন্ত ১০২৬ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর প্রায় ৩৮৫ কোটি টাকা অবসরকালীন ভাতাও বকেয়া রয়েছে। বার বার আবেদন করলেও এসব বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে না। অবসরকালীন ভাতা না পেয়ে কোনো কোনো কর্মচারী ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন ধারণ করছেন।
অভিযোগ করে বিএপিএস’র সভাপতি বলেন, পৌরসভায় মেয়রদের স্বেচ্ছাচারিতা অব্যাহত রয়েছে। নতুন মেয়রগণ নির্বাচিত হয়েই পুরাতন মাস্টার রোল কর্মচারীদের ছাঁটাই করে অর্থের বিনিময়ে নতুন কর্মচারী নিয়োগ দিচ্ছেন। অধিকাংশ মেয়র কর্মকর্তাদের জিম্মি করে বেতন বকেয়া রেখে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে রাজস্ব তহবিল থেকে বিধিবহির্ভূত ব্যয় করে আসছেন।
তিনি আরও বলেন, সরকারের অন্যান্য প্রশাসনিক ইউনিটের কর্মচারীদের সঙ্গে সীমাহীন বৈষম্য থাকার কারণে পৌরসভার কর্মচারীদের দুঃখ-দুর্দশা চরম আকার ধারণ করেছে। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক পৌর কর্মচারীগণের রাত-দিন পরিশ্রমের কারণে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সরকারের অন্যান্য প্রশাসনিক ইউনিটের সঙ্গে পৌর কর্মচারীদের বৈষম্য দূর করারও দাবি জানানো হয় এই সংবাদ সম্মেলনে।
সংগঠনের সভাপতি আব্দুল আলীম মোল্লা আরও জানান, বিশ্বের অন্যান্য দেশের স্ব-শাসিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সিংহ ভাগ কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক অনুদান হিসেবে বরাদ্দ পায়। বাংলাদেশ সরকারও এসব প্রতিষ্ঠানের বেতন খাতে বরাদ্দ দিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে পৌর কর্মচারীরা চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা উভয় প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য জাতীয় বাজেটে আলাদা আলাদা বেতন খাত রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ে পৌরসভায় প্রায় ৭১ শতাংশ কম বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে ইউনিয়ন পরিষদের কর্মচারীদের বেতন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২০৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। পৌর কর্মচারীদের বেতন ভাতা খাতে গত বছরের ন্যায় ২৫ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। যা ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এই বৈষম্য দূর করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে পৌরসভা কর্মচারীদের জীবন মান উন্নয়নে উচ্চ আদালতের দেয়া নির্দেশনার বাস্তবায়নসহ ৮ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিসমূহ হচ্ছে- উচ্চ আদালতের আদেশ দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। পৌরসভাসমূহ আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন না করা পর্যন্ত জাতীয় বাজেটে পৌরসভার কর্মচারীদের বেতন খাত নং ৩৬৩১১০১ এর আর্থিক অনুদান বৃদ্ধি করে ইউনিয়ন পরিষদের ন্যায় আসছে সংশোধিত বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা সহ প্রতি বছর এ বরাদ্দ অব্যাহত রাখতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের গঠিত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নকল্পে সকল বকেয়া বেতন-ভাতা ও অবসরকালীন ভাতা স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক গঠিত কমিটির প্রস্তাবিত ৭৯২ কোটি টাকা বেতন খাতে বরাদ্দ প্রদান করতে হবে। তৎকালীন স্থানীয় সরকারের মন্ত্রী জিল্লুর রহমানের ঘোষণা বাস্তবায়নকল্পে কেন্দ্রীয়ভাবে অবসরকালীন ভাতা প্রদান করতে হবে। রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য এ সংক্রান্ত কমিটিতে জনপ্রতিনিধির পরিবর্তে কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক আয়-ব্যয় সংক্রান্ত বিষয়ে সকল পৌরসভাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার ব্যবস্থা করে তদারকি জোরদার করতে হবে। সকল প্রকার নিয়োগে স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্টতা বৃদ্ধি করা। যাতে কর্মকর্তাগণ অনৈতিক কার্যকলাপে বাধা প্রধান করলে হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য কর্মকর্তাদের যোগদান গ্রহণ ও অবমুক্তির বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, সহ-সভাপতি আখতার হোসেন, কাজী মোস্তফা কামাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন দত্ত, শফিকুল ইসলাম আগুন, রোকসানা পারভীন, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম পাটোয়ারী জিসান বাবুসহ কেন্দ্রীয়, বিভাগ ও জেলা ইউনিটের নেতাকর্মীরা।

 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status