দেশ বিদেশ

ঢাকায় বেড়েছে অস্ত্রের বাণিজ্য

আল-আমিন

১২ জুন ২০২১, শনিবার, ৯:১৭ অপরাহ্ন

ঢাকায় অস্ত্রের দোকানের সংখ্যা বাড়ছে। গত ৫ বছরে ৭টি নতুন দোকান হয়েছে। ঢাকায় বর্তমানে অস্ত্রের দোকান রয়েছে ৩২টি। যেখানে বৈধভাবে বিভিন্ন আইটেমের অস্ত্র বিক্রি হচ্ছে। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুসংহত করা, দুর্গম এলাকায় যাতায়াতকরণ, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা প্রহরীদের জন্য ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়ার কারণে অস্ত্রের দোকান বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে অস্ত্রের ৮৪টি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান আছে বৈধ অস্ত্র ব্যবসার জন্য। সারা দেশে ১৪টি প্রতিষ্ঠান সরাসরি বিদেশ থেকে বৈধ অস্ত্র আমদানি করে, যার মধ্যে ১২টি ঢাকা মহানগর এলাকায়। অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা হওয়ার কারণে এলিট ব্যবসায়ীরা দিন দিন এ ব্যবসার পেছনে ঝুঁকছেন। শিল্পপতি, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা অস্ত্রকে বৈধভাবে ব্যবহারের জন্য ওইসব দোকান থেকে অস্ত্র কিনে থাকেন।
কেউ কেউ ব্যক্তিগত আধিপত্য এবং এলাকায় মহড়া দেয়ার জন্য অস্ত্র কিনেন। কেউ আবার অস্ত্র কিনে কৌশলে হাতবদল করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, অস্ত্রের দোকান বৃদ্ধি পেলে অবৈধ অস্ত্রের লেনদেনের আশঙ্কা থাকে। কেউ নিজের লাইসেন্সকৃত অস্ত্র আবার অন্যকে কৌশলে ব্যবহার করতে দেন। এতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা থাকে। তারা বলছেন, যারা নতুন অস্ত্রের দোকান দিচ্ছেন তারা আগে কী ব্যবসা করতেন বা কেন অস্ত্রের দোকান দিলেন এবং পুরনো অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বায়োডাটা তারা হালনাগাদ করছেন। যাতে দোকানগুলো থেকে অস্ত্রগুলো সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তদের হাতে চলে না যায়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ আর্মস ডিলার অ্যান্ড ইমপোর্টার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাসির আহমেদ মানবজমিনকে জানান, ‘ঢাকায় অস্ত্রের দোকান বেড়েছে। ৫ বছর আগে ঢাকায় অস্ত্রের দোকান ছিল ২৫টি। এখন ৩২টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও জানান, অস্ত্রগুলো যাতে সরকারের পর্যাপ্ত নিয়ম অনুযায়ী দেয়া হয় তা আমাদের সমিতি থেকে কঠোরভাবে দেখভাল করা হয়। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া হয় না।
অস্ত্রের দোকান বাড়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার জানান, ‘অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার দমনে আমাদের জিরো টলারেন্স রয়েছে। যারা লাইসেন্স করে অস্ত্র নিয়ে থাকেন তাদের অস্ত্রগুলো অবৈধভাবে ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা ডিবির ই-লিগ্যাল আর্মস বিভাগ দেখাশোনা করে।’ ঢাকার অস্ত্র ব্যবসায়ী ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, পুরানা পল্টন, মতিঝিল, বিজয়নগর, কাকরাইল, ইসলামপুর, ধানমণ্ডি ও মিরপুরে অস্ত্রের ৩২টি দোকান রয়েছে। এসব দোকানে বিক্রি করা হয় পিস্তল, বিভিন্ন বোরের রিভলবার, রাইফেল ও বন্দুক। ক্রেতারা তাদের বৈধ কাগজপত্র দেখিয়ে ওইসব অস্ত্র কিনে থাকেন।
সূত্র জানায়, ২০ বছর আগে শুধু মতিঝিল ও বায়তুল মোকাররম মার্কেট এলাকায় ৫ থেকে ৭টি অস্ত্রের দোকান ছিল। কিন্তু, এখন দিন দিন অস্ত্রের দোকান বাড়ছে। ঢাকার যেসব এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছে সে এলাকায় গড়ে উঠছে নতুন নতুন অস্ত্রের দোকান। দোকান স্থাপন করতে অবশ্যই সরকারের বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে হয়। সূত্র জানায়, অস্ত্রের দোকান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও উদ্বেগ আছে। কারণ যারা বৈধ অস্ত্র ব্যবসা করে, তারা জেলা প্রশাসনের দুর্বল মনিটরিংয়ের সুযোগ নিয়ে বৈধ ব্যবসার আড়ালে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা করে আসছে। অনেক সময় বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের নিয়মিত মনিটরিং করা হয় না। এ ছাড়াও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বেচাকেনার নথিপত্র ম্যানুয়ালি সংরক্ষণ করা থাকে। যার ফলে কোনো একটি অস্ত্র ধরার পর তার প্রকৃত মালিক এবং অস্ত্রটি কয় হাত বদল হয়েছে তা উদ্‌ঘাটন করতে হিমশিম খেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন ডিজিটালভাবে সব বৈধ অস্ত্রের তালিকা ও তথ্য হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বৈধ অস্ত্রগুলো কখন-কার হাতে থাকছে এবং কোথায় হাত বদল হলো কিনা তা জানা যাবে।
সূত্র জানায়, কিছু ক্রেতা বৈধভাবে অস্ত্র কিনে কৌশলে হাত বদল করে অন্যকে ব্যবহার করতে দিচ্ছেন। এটা অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার হচ্ছে। এটা ঠেকাতে মাঠে কাজ করছে ডিএমপি ই-লিগ্যাল আর্মস টিম। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে ১৯২৪ সালের আর্মস অ্যাক্টের আওতায় সামরিক, বেসামরিক, অন্যান্য ব্যক্তিবর্গকে অস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান করা হয়। আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ২৫ থেকে ৩০ বছর। অস্ত্রের জন্য তাকে প্রত্যেক বছর ২ লাখ টাকা সরকারকে কর প্রদান করা হয়। আবার পিস্তলের জন্য পর পর ৩ বছর ৯ লাখ টাকা কর প্রদান করতে হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status