প্রথম পাতা

ওপারে অপুদা এপারে সাইফুল

আমিনুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ থেকে

১১ জুন ২০২১, শুক্রবার, ৯:৩৭ অপরাহ্ন

ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে জেলা প্রশাসনের জরুরি বিধিনিষেধ ও বিজিবি’র কঠোর নজরদারির মধ্যেই ব্যাপক হারে মানুষ এপার-ওপার করছে। এই অবৈধ পারাপারে দুই দেশের দালালরা নিয়োজিত। গতকালও ৬ জন অনুপ্রবেশকারীকে আটক করেছে বিজিবি। মহেশপুর উপজেলার জুলুলী ও বৃত্তিপাড়া গ্রাম থেকে তাদের আটক করা হয় বলে মহেশপুর ৫৮ বিজিবির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম খান গতকাল এক ই-মেইল বার্তায় জানান। এরমধ্যে যশোরের শার্শা উপজেলার সোহেল রানা, ঝিকরগাছা উপজেলার পদ্মপুকুর গ্রামের আলামিন, তার স্ত্রী রোখসানা বেগম ও মেয়ে হাবিবা খাতুনকে অবৈধ পথে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ও সিরাজগঞ্জের দারিয়াপুর গ্রামের যতিন মদক, স্ত্রী কামনা মদক ও ছেলে লিখন মদককে ভারতে প্রবেশের সময় আটক করে বিজিবি। বিজিবি’র হাতে কিছু অনুপ্রবেশকারী আটক হলেও তাদের ছাড়াতে আদালতপাড়ায় ভিড় করেন দালাল চক্রের সদস্যরা। আদালতপাড়ায় কথা হয় এমন দালাল চক্রের এক সদস্যের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘ভারতে অপু দাদা নামে একজন আছেন। তিনি নদীতে নৌকা চালান। তার সঙ্গে আমাদের কথা হয় হোয়াটসঅ্যাপে। কখনো তাকে দেখিনি। ওপারে তার একটি গোডাউন রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশে প্রবেশকারীদের গোপনে রাখা হয়। বর্ডারে তার বিজিবি ও বিএসএফে লোক আছে। রাতে সুযোগ বুঝে গ্রুপ করে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পাচার করে। এপারে (বাংলাদেশ) সাইফুল দাদা তাদের বুঝে নেন।’ সাইফুল দাদাও একই ভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার করেন। ওই সদস্যের ভাষ্যমতে, ‘ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় যারা বিজিবি’র হাতে আটক হয়, তাদের নাম-ঠিকানা ও আইডি কার্ড অপুদা ভারত থেকে আমাদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেন। আমাদের টাকা পাঠান বিকাশে। এরপর আমরা তাদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করি। বাংলাদেশ থেকে সাইফুল দা যাদের পাঠায় ভারতে অপুদা বুঝে নেন। এ কাজে আরও একাধিক চক্র আছে।’ সুবিধা ও পরিস্থিতি বুঝে জনপ্রতি ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। বিজিবি’র হাতে আটক দালাল মহেশপুরের হাদি বাহিনীর প্রধান হাদিসুর রহমান বলেন, ওপারে যোগাযোগ হয় মেইন মেইন মানুষের সঙ্গে। বেনাপোলেরও লোক আছে ওদের সঙ্গে। ওপার থেকে গাড়িতে তুলে ফোন দিয়ে বলে দেয়, একটা গাড়ি যাচ্ছে। তাদের অন্য আরেকটা গাড়িতে তুলে দিও। আমি তাদের অন্য একটা গাড়িতে তুলে দিতাম। তিনি বলেন, বেনাপোল থেকে রাজু জহুরুল, ছালাম আর মহেশপুরের কিতাব, আশা, হান্নানসহ আরও অনেকে এই পাচার কাজের সঙ্গে জড়িত। মহেশপুর ভারতীয় সীমান্তের যাদবপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এবিএম শাহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ভারত থেকে যে হারে অবৈধ পথে মানুষ আসছে তাতে আমরাই বিপদ ডেকে আনছি। অবৈধ যাতায়াত ঠেকাতে হলে সীমান্তে বসবাসকারী স্থানীয়দের সহযোগিতা খুবই দরকার। মহেশপুরের ৫৮ বিজিবি থেকে পাওয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৮৯৮ জনকে আটক করেছে বিজিবি। তাদের বিরুদ্ধে সীমান্তবর্তী মহেশপুর থানায় পাসপোর্ট আইনে ১৬০টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে জানুয়ারি মাসে ১৭৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৭০, মার্চে ২২২, এপ্রিলে ১০৬, মে মাসে ৫৮ জন ও জুন মাসের ১০ দিনে ৬৭ জন আটক হয়েছে। গত ২৬শে এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ থেকে বৈধ পথে ভারতে যাওয়া বন্ধ থাকার কারণে অবৈধ পথে যাতায়াত বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব অবৈধ অনুপ্রবেশের ফলে ঝিনাইদহের সীমান্ত এলাকায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মিথিলা ইসলাম বলেন, ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর মধ্যে যারা ধরা পড়ছে তাদের আমরা কোয়ারেন্টিনে রাখছি। যারা ধরা পড়ছে না তাদের ব্যাপারে আরও বেশি তৎপর হাওয়া প্রয়োজন। ঝিনাইদহ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া মিলন বলেন, ‘১৯৭৩ সালের পাসপোর্ট অধ্যাদেশ আইনে সীমান্ত অনুপ্রবেশে দুই হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের জেল। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুই হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে আদালত থেকে জামিন পেয়ে যাচ্ছেন। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সীমান্ত এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা একান্ত প্রয়োজন। তাছাড়া ১৯৭৩ সালের পাসপোর্ট অধ্যাদেশ আইনকেও যুগোপযোগী করা দরকার। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের মহেশপুর ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল কামরুল আহসান বলেন, ‘সীমান্তে বিজিবি’র টহল জোরদার করা হয়েছে। অবৈধ পথে কেউ যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে এজন্য সীমান্তে বসবাসকারীদের সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে। তাদের সীমান্ত অতিক্রম না করার জন্য বলা হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান বলেন, মহেশপুর সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মিটিং করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা মিটিং করেছেন এবং সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে মানুষকে আসা যাওয়ার কাজে কেউ যেন সহযোগিতা না করে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status