শেষের পাতা

সংকট সহসা কাটছে না

কূটনৈতিক রিপোর্টার

১১ জুন ২০২১, শুক্রবার, ৯:৩২ অপরাহ্ন

করোনার দ্বিতীয় ডোজের প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ টিকার সংকট সহসাই কাটছে না বলে জানিয়েছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, টিকার ঘাটতি পূরণে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছে অনুরোধ করে চলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো রাষ্ট্রের তরফেই টিকা পাঠানোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার পায়নি ঢাকা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সংস্থান না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। গতকাল ঢাকার এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, সবাই বলছে- দিবে কিন্তু টিকা তো হাতে আসছে না। মন্ত্রীর ভাষ্যটি এমন- বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের অক্সফোর্ড -অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের টিকার ঘাটতি পূরণে বিভিন্ন দেশকে অনেকদিন ধরে অনুরোধ জানিয়ে আসছে। জবাবে সবাই বলছে টিকা দিবে কিন্তু কবে দিবে সেটা পরিষ্কার করে বলছে না। বৃহস্পতিবার দুপুরে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের কাছে ?ঔষধ সামগ্রী হস্তান্তর অনুষ্ঠান শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন মন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, আমাদের হাতে যে টিকা রয়েছে তাতে প্রথম ডোজ গ্রহণকারী প্রায় ১৫ লাখ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। সংকটটা এখানেই। ওই ১৫ লাখ মানুষকে আমরা দ্বিতীয় ডোজ দিতে পারছি না। এ কারণে আমরা জরুরি ভিত্তিতে ঘাটতি পূরণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের কাছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা চেয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার অনেক টিকা আছে জেনে সঙ্গে সঙ্গে তাদের অনুরোধ করেছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কিন্তু করোনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা কম বলে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের অগ্রাধিকার তালিকায় রাখেনি। পরে অবশ্য তারা বলেছে, আমাদের কিছু অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেবে। তাছাড়া কোভ্যাক্স থেকেও আমরা কিছু টিকা পাওয়ার আশ্বাস পেয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকাসহ বিভিন্ন ধরনের টিকা পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ আশাবাদী উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, কিন্তু কবে ওই টিকাগুলো হাতে পাবো সেটা তারা এখনো বলছে না। প্রসঙ্গত কোভ্যাক্সের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশকে টিকা দিচ্ছে। সেই তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের উপহারের ওই টিকা বাংলাদেশ পাবে বলে জানিয়েছেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার। বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাতে যুক্তরাষ্ট্র কিছু টিকা দেয় সেই অনুরোধ জানিয়ে ইতিমধ্যে এক হাজার ৬৫৪ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান হোয়াইট হাউসে পিটিশন করেছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমেরিকানরা জবাব দিয়েছে বাংলাদেশে নাকি করোনার প্রভাব কম, এজন্য তারা আমাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করতে পারছে না। করোনার টিকা সর্বজনীন করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রথম থেকে বলে আসছেন টিকা একটি সর্বজনীন পণ্য এবং সব দেশের লোকের বৈষম্যহীনভাবে তা পাওয়া উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মোট টিকার ৯৯ দশমিক ৭ শতাংশ আছে ধনী দেশগুলোর কাছে। মাত্র শূন্য দশমিক তিন শতাংশ টিকা পেয়েছে গরিব দেশগুলো। এ কারণে অনেক রাষ্ট্র টিকার জন্য হাহাকার করছে। অস্ট্রেলিয়ার ২৫ মিলিয়ন লোকের জন্য ৯৩ মিলিয়নের বেশি টিকা মজুত থাকার রিপোর্ট পেয়েছেন দাবি করে মন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের কাছেও টিকা চেয়েছি। তারাও বলেছে দিবে। কিন্তু কবে দিবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
চীনা টিকার দামে ভিন্নতা, ‘ঝামেলা’ তৈরির অভিযোগ নিয়ে জিজ্ঞাসা, মন্ত্রীর দাবি সব ‘ঠিক’ আছে:
এদিকে চীনের কাছ থেকে টিকা পাওয়া নিয়ে এখন আর কোনো ধরনের ঝামেলা নেই বলে দাবি করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। বেসরকারি একটি টেলিভিশনের একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, চীন একেক দেশে একেক দামে টিকা বিক্রি করছে। এ জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের ঝামেলা তৈরি হয়েছে। চীন এত বড় দেশ তাদের তো ওপেন মার্কেটে যাওয়া উচিত ছিল। চীন আমাদের সঙ্গে যেটা করেছে সেটাকে আপনি কীভাবে দেখেন, এটা কি তারা ঠিক করলো? জবাবে মন্ত্রী চীন থেকে টিকা সংগ্রহে কোনো ‘ঝামেলা’ নেই দাবি করে বলেন, তারা ঠিক করেছে কিনা- সেই প্রশ্নের জবাব তারাই ভালো দিতে পারবেন, তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন। মন্ত্রী বলেন, ব্যবসায় অনেক গোপনীয় বিষয় থাকে। তথ্য প্রকাশ করবো না- মর্মে আমরা একটি চুক্তিতে সই করেছি। একটি চাইনিজ কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যেসব আইন-কানুন গ্রহণ করেছি, সেটি আমাদের মেনে চলা উচিত। দাম প্রকাশ করায় চীনে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল সেই ইঙ্গিত করে মন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের বলেছি, এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল এবং আমরা বুঝিনি। এরপর তারা বুঝেছে এবং আমাদের গ্রহণ করেছে।
দ্বিতীয় ডোজের সংকট নিরসনে জাপানেরও সহায়তা চেয়েছে ঢাকা: ওদিকে একদিন আগেই পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানিয়েছেন- দ্বিতীয় ডোজের ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশ সম্ভাব্য সব রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের কাছে অতিরিক্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আছে। কিন্তু তাদের ঔষধ প্রশাসনের অনুমতির একটি বিষয় জড়িয়ে আছে। ফলে তারা এ নিয়ে এখনো কিছু বলেনি। তবে বাংলাদেশ তাদের টিকা পাওয়ার বিষয়ে খুবই আশাবাদী। যত দিন যাচ্ছে দ্বিতীয় ডোজের সংকট ততই প্রকট হচ্ছে উল্লেখ করে সচিব বলেন, সরকার বসে নেই। অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেতে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি জাপানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, জাপানের কাছে অতিরিক্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আছে। তারা তাইওয়ানকে কিছু অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়েছে। এটা রাজনৈতিক কারণে হয়তো দিয়েছে। বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে আমরাও তাদের কাছে এ বিষয়ে সহায়তা চেয়েছি।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের ঘাটতি পূরণে সম্ভাব্য সব সোর্সের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ প্রসঙ্গে সেগুনবাগিচা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকা উদ্বৃত্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা থেকে ২০ লাখ টিকা বাংলাদেশ চেয়েছে। টিকা নিয়ে আলোচনার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থোনিও ব্লিনকেনের সরাসরি সাক্ষাতের অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। আগামী সপ্তাহে মন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের আয়োজনে পূর্ব নির্ধারিত দু’টি বহুপক্ষীয় সভায় অংশ নিয়ে তিনি ওয়াশিংটন যাবেন।

উৎপাদন শুরু হলে দেশে আর টিকার সংকট থাকবে না
ওদিকে করোনার টিকা উৎপাদন বিষয়ে চলমান আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, শিগগিরই দেশে যৌথভাবে টিকা উৎপাদন বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে। তবে তিনি অবশ্য বলেছেন, বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের জন্য স্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারি কোম্পানি নির্বাচন করার বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা দেখছেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মন্ত্রী বলেন, তারা আসবেন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সক্ষমতা যাচাই করে উৎপাদন বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন। মোমেন বলেন, একবার উৎপাদন শুরু হলে দেশে আর টিকার কোনো সংকট তৈরি হবে না। আশা করি আমরা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে একদিন টিকা রপ্তানিকারক হতে পারবো। এক দিন আগে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশের টিকা সংগ্রহ এবং যৌথভাবে টিকার উৎপাদনের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।



   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status