বাংলারজমিন

বৃক্ষবন্ধু আব্দুর রহমান

আলাউদ্দিন কবির, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) থেকে

১১ জুন ২০২১, শুক্রবার, ৭:৫২ অপরাহ্ন

কাক ডাকা ভোরে ঘুম ভাঙে। সকালের নাস্তাটা কোনোরকম সেরেই ভাঙাচুরা বাইসাইকেলে ছুটে চলেন গ্রামে গ্রামে। আর বিকালে অবস্থান নেন কোনো না কোনো হাট-বাজারে। লক্ষ্য একটাই স্বল্পমূল্যে মানুষের হাতে গাছের চারা পৌঁছে দেয়া। মানুষকে বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ করা। ভ্রাম্যমাণ এ বিক্রেতার নাম আব্দুর রহমান। স্থানীয়রা তাকে কখনো বৃক্ষপ্রেমী, কখনো বৃক্ষবন্ধু বলে ডাকেন। তার বাড়ি কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের হাসিমপুর গ্রামে। প্রবাসফেরত ত্রিশোর্ধ্ব এই যুবক তিন বছর থেকে বাইসাইকেলে করে গাছ নিয়ে ছুটে চলেছেন মানুষের কাছে। স্বল্পমূল্যে বিক্রি করছেন বনজ, ফলজ ও ঔষধি গাছ।
আব্দুর রহমান প্রতিদিন কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গাছ নিয়ে যান। গড়ে ৩০-৪০ কিলোমিটার এলাকা প্রতিদিন ঘুরেন। ফেরার পথে অবিক্রীত গাছগুলো স্থানীয় কোনো হাট-বাজারে বিক্রি করেন। অন্য কোনো পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত না করে গাছ বিক্রি করাটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছেন তিনি। তার মতে, মানুষ অনেক সময় গাছের চারা খুঁজে এনে রোপণ করতে আগ্রহী হয় না, হাতের কাছে পৌঁছে দিলে মানুষ তা ক্রয় করে। বাজারদরের চেয়ে কম দামেও অনেক সময় চারা বিক্রি করেন তিনি। ‘দাম মুখ্য নয়, সবুজায়ন হোক প্রতিটি বাড়ি’- গাছের চারা বিক্রির এটাই তার মূল উদ্দেশ্য।
গত ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে গাছ বিক্রিকালে কথা হয় আব্দুর রহমানের সঙ্গে। এ সময় চ্যালেঞ্জিং এ পেশায় আসার পেছনের গল্পটা তুলে ধরেন তিনি। বলেন, প্রায় ১৫ বছর আগে কর্মধা উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। ভাগ্যবদলের আশায় পাড়ি দিই সৌদি আরবে। জেদ্দায় একটি কোম্পানিতে প্রথমে কন্সট্রাকশনের কাজ করি। পরবর্তীতে ফোরম্যানসহ একাধিক দায়িত্ব পালন করি। অনেক অর্থ রোজগার করেছি। একপর্যায়ে দীর্ঘদিন কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের কাজ করি। কিন্তু দুর্ভাগ্য আইনি জটিলতায় পড়ে দেশে ফেরত আসতে হয়। দীর্ঘদিন কাজের মধ্যে ডুবে থাকা আব্দুর রহমান দেশে আসার পর অর্থসংকটে পড়েন। তবে কিছু একটা করতে চান। গতানুগতিক কোনো কাজ বা পেশায় সম্পৃক্ত না হয়ে ভিন্ন কিছু করার পরিকল্পনা করেন। সেই চিন্তা থেকে ভ্রাম্যমাণ গাছ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। তার মতে গাছ মানুষের হাতে পৌঁছে দিলে সুরক্ষিত থাকবে পরিবেশ। যা থেকে ব্যক্তির পাশাপাশি সমাজ উপকৃত হবে। অনেক বৃক্ষপ্রেমীরা তার এ কর্মকে সাধুবাদ জানান। স্থানীয় বাসিন্দা চিকিৎসক পিটার রুরাম বলেন, বৃক্ষকে ভালোবাসি। তবে সচরাচর ভালোমানের গাছের চারা পাওয়া যায় না। কিন্তু আব্দুর রহমান এই পেশায় আসার পর প্রায়ই গাছ ক্রয়ের সুযোগ হয়।
মায়ের দোয়া নিয়ে প্রতিদিনের কর্মতৎপরতা শুরু হয় আব্দুর রহমানের। ভাঙাচুরা বাইসাইকেলে পেছনের সিটে একটি ঝুঁড়ির মধ্যে শ’খানেক চারা গাছ বেঁধেই অবিরাম পথচলা তার। ঝড়-বৃষ্টি-তাপদাহ কিছুই তার গতিরোধ করতে পারে না। কুলাউড়ার বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন নার্সারি থেকে তা সংগ্রহ করেন। পাশাপাশি গাছ সঠিকভাবে রোপণ করতে কেউ আগ্রহ দেখালে তিনি তা রোপণ করে দেন। পরবর্তীতে রোপণ করা গাছগুলোর পরিচর্যা ও খোঁজখবর নেন নিজে থেকেই।
পরিবারে মা আছেন। ৭ ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই। ভিটা বাদে বাড়িতে যতটুকু জায়গা রয়েছে সবখানে চারা রোপণ করেছেন। বৃহৎ আকারে একটি গাছের চারা বাগান করা তার স্বপ্ন। তবে সে সামর্থ্য নেই। তিলে তিলে সঞ্চয় করেও হলে লক্ষ্যে পৌঁছতে চান আব্দুর রহমান। সরকারি, বেসরকারি বা ব্যক্তি পর্যায়ের কোনো সহায়তা পেলে আব্দুর রহমানের স্বপ্ন দ্রুত ডানা মেলবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status