বিশ্বজমিন
দুই ধনকুবেরের লড়াই: অ্যামাজন বনাম রিলায়েন্স
মানবজমিন ডেস্ক
১০ জুন ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১২:১৭ অপরাহ্ন
রানি পিল্লাইয়ের প্রিয় সুপারমার্কেট নিয়ে লড়াই হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ধন্যাঢ্য দুই কোম্পানি অ্যামাজন ও রিল্যায়েন্সের। ৪৭ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত নার্স রানি পিল্লাই দিল্লির এক মধ্যবিত্ত শহরতলীতে মেট্রো স্টেশনের নিচে অবস্থিত সুপার মার্কেট ‘বিগ বাজার’-এর নিয়মিত ক্রেতা। গত বছর করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আরোপিত লকডাউনের সময় অনলাইনে বাজার করার চেষ্টা করেন তিনি। তবে বিগ বাজারে ঢুকে বাজারের সঙ্গে তার তুলনা হয় না। পিল্লাই বলেন, আমি জিনিস দেখে নিতে চাই। এখানে আমি পণ্যগুলো কেনার আগে দেখতে পারি।
বিগ বাজারের মালিকানা প্রতিষ্ঠান ফিউচার গ্রুপ। ভারতজুড়ে তাদের ১ হাজার ৫০০ সুপার মার্কেট, ৪০০ ফ্যাশন আউটলেট রয়েছে। ভারতের দ্রুত বাড়তে থাকা প্রযুক্তি ও ই-কমার্স বাজারের ভাগ নিতে চাওয়া কোম্পানিগুলোর জন্য এসব সুপার মার্কেট বেশ লোভনীয়। এমন কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে মার্কিন ই-কমার্স ও প্রযুক্তি জায়ান্ট আমাজন। ইতিমধ্যে ভারতের ই-কমার্স বাজারের এক-তৃতীয়াংশই তাদের দখলে। তা সত্ত্বেও দেশটিতে আরো বড় বিনিয়োগ করে চলেছে তারা।
ফিউচার গ্রুপের রিটেইল (খুচরা) সম্পদগুলো কিনতে দুই বছর আগে ২০ কোটি ডলারের প্রস্তাব দেয় আমাজন। তারা এমনভাবে চুক্তিটি তৈরি করে যাতে স্থানীয় ব্যবসাগুলোয় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশীদারিত্ব ঘিরে ভারত সরকারের কঠোর সীমাবদ্ধতা এড়ানো যায়। কিন্তু এটি করতে গিয়েই ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানির সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে আমাজন। আম্বানি রিলায়েন্স ইনডাস্ট্রিজ এর মালিক—ভারতের সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। গত আগস্টে আমাজনকে সরিয়ে ফিউচার গ্রুপের সঙ্গে তাদের সব অঙ্গপ্রতিষ্ঠান কিনে নিতে ৩৪০ কোটি ডলার চুক্তি করে ফেলে রিলায়েন্স।
আমাজন এখন সিঙ্গাপুরে আরবিরট্রেশন (সালিশি) প্রক্রিয়ায় রিলায়েন্স ও ফিউচারের মধ্যকার চুক্তিটি ঠেকাতে চাইছে। তাদের সে লড়াই এখন গড়িয়ে ভারতের আদালতে এসে পৌঁছেছে। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে আমাজন আবেদন করেছে, সিঙ্গাপুরে আরবিট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া অবধি যেন চুক্তিটি স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ভারতের অনলাইন ব্যবসার সম্ভাবনা করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বড় আঘাতের শিকার হয়েছে। কিন্তু মহামারি শেষে এ সম্ভাবনা আবার বড় আকারে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশটির বিশাল জনসংখ্যা ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো অনেক দিক দিয়ে চীনের বৈশ্বিক ব্যবসার কথা মনে করিয়ে দেয়। কয়েক বছরের মধ্যে জনসংখ্যা বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট-ভিত্তিক বাজারের দেশ হয়ে উঠেছে চীন।
ফরেস্টার রিসার্চ অনুসারে, ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতের অনলাইন বাজার ৮ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার হয়ে উঠবে। আমাজনের পাশাপাশি ফেসবুক, ওয়ালমার্ট ও অন্যান্য বড় প্রতিষ্ঠানগুলো দেশটিতে ব্যাপক হারে বিনিয়োগ করে চলেছে।
ভারতের বাড়ন্ত এই মার্কেটের একটি ছোট অংশ হচ্ছে অনলাইন মুদি বাজার। বর্তমানে ভারতের অনলাইন বাজার মূলত ফ্যাশন পণ্য ও মুঠোফোন ভিত্তিক। তবে ‘ব্রিক অ্যান্ড মর্টার’ (রাস্তার পাসে অবস্থিত ক্রেতাদের সশরীরে সেবা প্রদানকারী দোকান) ঘরানার দোকানগুলো অনলাইন ব্যবসার শীর্ষে আসতে বেশ সহায়ক হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের মুদি ব্যবসা গড়ে তুলতে চার বছর আগে হোল ফুড কিনে নিয়েছিল আমাজন। মুদি দোকানের মাধ্যমে সহজেই বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করা যায় এবং এতে ব্র্যান্ডের নাম পরিচিত হয়ে উঠে। সরবরাহকারীদের সম্পর্কও দীর্ঘ-মেয়াদী হয়।
ফরেস্টার রিসার্চের বিশ্লেষক সতিশ মীনা বলেন, এখানে কেউ মাসিক বা প্রান্তিক ভিত্তিতে লড়ছে না। এটা ১০-১৫ বছরের খেলা।
তবে এ খেলায় খুব একটা ভালো অবস্থান গড়তে পারছে না আমাজন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার উৎপাদন, ইন্টারনেট ও অন্যান্য শিল্পের দেশীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাইছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ভারতের বাজারে ব্যবসা কঠিন করে তুলেছে।
আমাজনের সঙ্গে রিলায়েন্সের লড়াই নিয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা মোটাদাগে নীরব ভূমিকায় রয়েছে। তবে অন্যান্য দিক দিয়ে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক এবং ফেডারেল অপরাধ তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ভারতের বিদেশি বিনিয়োগ বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের সন্দেহে আমাজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চালু করেছে। এছাড়া, দেশটির এন্টিট্রাস্ট নিয়ন্ত্রক কম্পিটিশন কমিশন অব ইন্ডিয়া আমাজন, ফ্লিপকার্ট ও ওয়ালমার্টের বিরুদ্ধে পণ্য বিক্রি প্রক্রিয়া নিয়ে আরেকটি আইনি মামলা দায়ের করেছে।
আমাজন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তাদের কর্মীরা সকল প্রয়োগযোগ্য আইন ও নীতিমালা গুরুত্বের সঙ্গে মেনে চলে। আর নিজেদের অধিকার রক্ষার চেষ্টায়ই রিলায়েন্স-ফিউচার চুক্তি ঠেকাতে চাইছে তারা।
আমাজন বলেছে, আমরা এফডিআই নীতিমালা ব্যবহার করে উদ্দেশপ্রণোদিতভাবে অসম প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরির চেষ্টা নিয়ে হতাশ।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে রিলায়েন্স ও ফিউচার গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনো সাড়া পায়নি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
২০১৮ সালে ভারত সরকারের পাস করা এক আইন অনুসারে, বিদেশি-মালিকানাধীন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল নিরপেক্ষ মার্কেটপ্লেস (বাজার) হিসেবে কাজ করতে পারবে, যেখানে স্বতন্ত্র বিক্রেতারা নিজেদের পণ্য বিক্রি করে থাকে।
ভারত সরকারের মতে, এই আইন দেশটির ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোকে রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাজনের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর নিজস্ব পণ্য বিক্রি সীমিত হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ওই আইন অনুসারে, আমাজন তাদের জনপ্রিয় ইকো ডিভাইস নিজেরাই বিক্রি করতে পারবে না। আইনটি মূলত আম্বানির জন্য লাভজনক হয়েছিল।
ব্যবস্থাপনা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টেকনোপাক এডভাইজরস-এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক অরবিন্দ সিংহাল বলেন, ভারতের রিটেইল বিষয়ক বিদেশি বিনিয়োগ আইনগুলো শতকের প্রথম দশকের মাঝামাঝি সময়ে পাস হয়। সেগুলো তখনো যুক্তিহীন ছিল, এখনো যুক্তিহীন আছে। এই আইনগুলো মা-বাবা দোকান রক্ষার নামে বড় খেলোয়াড়দের রক্ষা করে চলেছে।
প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও ফিউচার গ্রুপের সঙ্গে আমাজন সতর্কভাবে চুক্তির পদক্ষেপ নিয়েছিল। ২০১৯ সালে ফিউচার গ্রুপ যখন ব্যাপক ঋণের বোঝায় ন্যুব্জ অবস্থায় ছিল তখন তাদের সঙ্গে চুক্তি করে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি। ভারতে রিটেইল খাতে বিদেশি বিনিয়োগ সম্পর্কিত সকল কঠোর আইন মেনেই সে চুক্তি করা হয়।
ফিউচার গ্রুপের সঙ্গে চুক্তিটি আমাজনের জন্য ভারতে ব্রিক অ্যান্ড মর্টার দোকান বৃদ্ধির জন্য একটি ভালো অপশন ছিল। বিবাদে জড়ানোর আগে বিগ বাজার থেকে ক্রেতারা আমাজন এপ দিয়ে কেনাকাটা করতে পারতো।
তবে রিলায়েন্সের আম্বানিও ফিউচার গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি থেকে একইরকম সম্ভাবনা দেখেছিলেন। চুক্তির পর রিলায়েন্স রিটেইলের আর্থিক প্রধান দিনেশ থাপাড় বলেন, আমাজনের মতো তারাও ফিউচার গ্রুপ থেকে কেনা দোকানগুলো বিতরণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতে চান। এমনকি চুক্তির আগেও রিলায়েন্স তাদের নিজস্ব দোকানের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অনলাইন পণ্য সরবরাহ সেবা দিয়ে আসছে।
স্বাধীন প্রযুক্তি বিশ্লেষক অরুণ মোহন সুকুমারের মতে, রিলায়েন্স ও আমাজনের মধ্যকার আইনি লড়াইয়ে জয়ী প্রতিষ্ঠানটি ভারতে ই-কমার্স ব্যবসার গতিপথ নির্ধারণ করে দিতে পারে। তিনি বলেন, পেমেন্ট, লজিস্টিকস, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিংসহ নানা ছোট স্টার্ট-আপের এক বাস্তুসংস্থান তৈরি করতে পারে ই-কমার্স।
(দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে অনূদিত)
বিগ বাজারের মালিকানা প্রতিষ্ঠান ফিউচার গ্রুপ। ভারতজুড়ে তাদের ১ হাজার ৫০০ সুপার মার্কেট, ৪০০ ফ্যাশন আউটলেট রয়েছে। ভারতের দ্রুত বাড়তে থাকা প্রযুক্তি ও ই-কমার্স বাজারের ভাগ নিতে চাওয়া কোম্পানিগুলোর জন্য এসব সুপার মার্কেট বেশ লোভনীয়। এমন কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে মার্কিন ই-কমার্স ও প্রযুক্তি জায়ান্ট আমাজন। ইতিমধ্যে ভারতের ই-কমার্স বাজারের এক-তৃতীয়াংশই তাদের দখলে। তা সত্ত্বেও দেশটিতে আরো বড় বিনিয়োগ করে চলেছে তারা।
ফিউচার গ্রুপের রিটেইল (খুচরা) সম্পদগুলো কিনতে দুই বছর আগে ২০ কোটি ডলারের প্রস্তাব দেয় আমাজন। তারা এমনভাবে চুক্তিটি তৈরি করে যাতে স্থানীয় ব্যবসাগুলোয় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশীদারিত্ব ঘিরে ভারত সরকারের কঠোর সীমাবদ্ধতা এড়ানো যায়। কিন্তু এটি করতে গিয়েই ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানির সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে আমাজন। আম্বানি রিলায়েন্স ইনডাস্ট্রিজ এর মালিক—ভারতের সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। গত আগস্টে আমাজনকে সরিয়ে ফিউচার গ্রুপের সঙ্গে তাদের সব অঙ্গপ্রতিষ্ঠান কিনে নিতে ৩৪০ কোটি ডলার চুক্তি করে ফেলে রিলায়েন্স।
আমাজন এখন সিঙ্গাপুরে আরবিরট্রেশন (সালিশি) প্রক্রিয়ায় রিলায়েন্স ও ফিউচারের মধ্যকার চুক্তিটি ঠেকাতে চাইছে। তাদের সে লড়াই এখন গড়িয়ে ভারতের আদালতে এসে পৌঁছেছে। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে আমাজন আবেদন করেছে, সিঙ্গাপুরে আরবিট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া অবধি যেন চুক্তিটি স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ভারতের অনলাইন ব্যবসার সম্ভাবনা করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বড় আঘাতের শিকার হয়েছে। কিন্তু মহামারি শেষে এ সম্ভাবনা আবার বড় আকারে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশটির বিশাল জনসংখ্যা ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো অনেক দিক দিয়ে চীনের বৈশ্বিক ব্যবসার কথা মনে করিয়ে দেয়। কয়েক বছরের মধ্যে জনসংখ্যা বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট-ভিত্তিক বাজারের দেশ হয়ে উঠেছে চীন।
ফরেস্টার রিসার্চ অনুসারে, ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতের অনলাইন বাজার ৮ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার হয়ে উঠবে। আমাজনের পাশাপাশি ফেসবুক, ওয়ালমার্ট ও অন্যান্য বড় প্রতিষ্ঠানগুলো দেশটিতে ব্যাপক হারে বিনিয়োগ করে চলেছে।
ভারতের বাড়ন্ত এই মার্কেটের একটি ছোট অংশ হচ্ছে অনলাইন মুদি বাজার। বর্তমানে ভারতের অনলাইন বাজার মূলত ফ্যাশন পণ্য ও মুঠোফোন ভিত্তিক। তবে ‘ব্রিক অ্যান্ড মর্টার’ (রাস্তার পাসে অবস্থিত ক্রেতাদের সশরীরে সেবা প্রদানকারী দোকান) ঘরানার দোকানগুলো অনলাইন ব্যবসার শীর্ষে আসতে বেশ সহায়ক হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের মুদি ব্যবসা গড়ে তুলতে চার বছর আগে হোল ফুড কিনে নিয়েছিল আমাজন। মুদি দোকানের মাধ্যমে সহজেই বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করা যায় এবং এতে ব্র্যান্ডের নাম পরিচিত হয়ে উঠে। সরবরাহকারীদের সম্পর্কও দীর্ঘ-মেয়াদী হয়।
ফরেস্টার রিসার্চের বিশ্লেষক সতিশ মীনা বলেন, এখানে কেউ মাসিক বা প্রান্তিক ভিত্তিতে লড়ছে না। এটা ১০-১৫ বছরের খেলা।
তবে এ খেলায় খুব একটা ভালো অবস্থান গড়তে পারছে না আমাজন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার উৎপাদন, ইন্টারনেট ও অন্যান্য শিল্পের দেশীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাইছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ভারতের বাজারে ব্যবসা কঠিন করে তুলেছে।
আমাজনের সঙ্গে রিলায়েন্সের লড়াই নিয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা মোটাদাগে নীরব ভূমিকায় রয়েছে। তবে অন্যান্য দিক দিয়ে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক এবং ফেডারেল অপরাধ তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ভারতের বিদেশি বিনিয়োগ বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের সন্দেহে আমাজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চালু করেছে। এছাড়া, দেশটির এন্টিট্রাস্ট নিয়ন্ত্রক কম্পিটিশন কমিশন অব ইন্ডিয়া আমাজন, ফ্লিপকার্ট ও ওয়ালমার্টের বিরুদ্ধে পণ্য বিক্রি প্রক্রিয়া নিয়ে আরেকটি আইনি মামলা দায়ের করেছে।
আমাজন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তাদের কর্মীরা সকল প্রয়োগযোগ্য আইন ও নীতিমালা গুরুত্বের সঙ্গে মেনে চলে। আর নিজেদের অধিকার রক্ষার চেষ্টায়ই রিলায়েন্স-ফিউচার চুক্তি ঠেকাতে চাইছে তারা।
আমাজন বলেছে, আমরা এফডিআই নীতিমালা ব্যবহার করে উদ্দেশপ্রণোদিতভাবে অসম প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরির চেষ্টা নিয়ে হতাশ।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে রিলায়েন্স ও ফিউচার গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনো সাড়া পায়নি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
২০১৮ সালে ভারত সরকারের পাস করা এক আইন অনুসারে, বিদেশি-মালিকানাধীন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল নিরপেক্ষ মার্কেটপ্লেস (বাজার) হিসেবে কাজ করতে পারবে, যেখানে স্বতন্ত্র বিক্রেতারা নিজেদের পণ্য বিক্রি করে থাকে।
ভারত সরকারের মতে, এই আইন দেশটির ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোকে রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাজনের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর নিজস্ব পণ্য বিক্রি সীমিত হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ওই আইন অনুসারে, আমাজন তাদের জনপ্রিয় ইকো ডিভাইস নিজেরাই বিক্রি করতে পারবে না। আইনটি মূলত আম্বানির জন্য লাভজনক হয়েছিল।
ব্যবস্থাপনা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টেকনোপাক এডভাইজরস-এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক অরবিন্দ সিংহাল বলেন, ভারতের রিটেইল বিষয়ক বিদেশি বিনিয়োগ আইনগুলো শতকের প্রথম দশকের মাঝামাঝি সময়ে পাস হয়। সেগুলো তখনো যুক্তিহীন ছিল, এখনো যুক্তিহীন আছে। এই আইনগুলো মা-বাবা দোকান রক্ষার নামে বড় খেলোয়াড়দের রক্ষা করে চলেছে।
প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও ফিউচার গ্রুপের সঙ্গে আমাজন সতর্কভাবে চুক্তির পদক্ষেপ নিয়েছিল। ২০১৯ সালে ফিউচার গ্রুপ যখন ব্যাপক ঋণের বোঝায় ন্যুব্জ অবস্থায় ছিল তখন তাদের সঙ্গে চুক্তি করে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি। ভারতে রিটেইল খাতে বিদেশি বিনিয়োগ সম্পর্কিত সকল কঠোর আইন মেনেই সে চুক্তি করা হয়।
ফিউচার গ্রুপের সঙ্গে চুক্তিটি আমাজনের জন্য ভারতে ব্রিক অ্যান্ড মর্টার দোকান বৃদ্ধির জন্য একটি ভালো অপশন ছিল। বিবাদে জড়ানোর আগে বিগ বাজার থেকে ক্রেতারা আমাজন এপ দিয়ে কেনাকাটা করতে পারতো।
তবে রিলায়েন্সের আম্বানিও ফিউচার গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি থেকে একইরকম সম্ভাবনা দেখেছিলেন। চুক্তির পর রিলায়েন্স রিটেইলের আর্থিক প্রধান দিনেশ থাপাড় বলেন, আমাজনের মতো তারাও ফিউচার গ্রুপ থেকে কেনা দোকানগুলো বিতরণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতে চান। এমনকি চুক্তির আগেও রিলায়েন্স তাদের নিজস্ব দোকানের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অনলাইন পণ্য সরবরাহ সেবা দিয়ে আসছে।
স্বাধীন প্রযুক্তি বিশ্লেষক অরুণ মোহন সুকুমারের মতে, রিলায়েন্স ও আমাজনের মধ্যকার আইনি লড়াইয়ে জয়ী প্রতিষ্ঠানটি ভারতে ই-কমার্স ব্যবসার গতিপথ নির্ধারণ করে দিতে পারে। তিনি বলেন, পেমেন্ট, লজিস্টিকস, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিংসহ নানা ছোট স্টার্ট-আপের এক বাস্তুসংস্থান তৈরি করতে পারে ই-কমার্স।
(দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে অনূদিত)