প্রথম পাতা

বিদেশফেরতরা প্রণোদনার কী পেয়েছেন

এম এম মাসুদ

১০ জুন ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:৪২ অপরাহ্ন

ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের এই মহামারিতেও প্রতি মাসে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে রেকর্ড হলেও রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের জন্য আশানুরূপ বরাদ্দ বাড়েনি প্রস্তাবিত বাজেটে। আগের দেয়া রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ প্রণোদনাই বহাল আছে। এই মুহূর্তে দেশের সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের খাত হচ্ছে রেমিট্যান্স। অন্যদিকে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে বিদেশফেরত ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য সরকারের নেয়া ঋণ কার্যক্রমেও গতি স্থবির। গত বছরের জুন মাসে প্রবাসীদের কম সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার জন্য ৭০০ কোটি টাকা সরকার থেকে বরাদ্দ করা হয়। এর মধ্যে সরকার থেকে ছাড় করা হয় ২৫০ কোটি টাকা। এ অর্থ থেকে গত ১১ মাসে বিতরণ করা হয়েছে ২১৫ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
রেমিট্যান্সযোদ্ধারা বলছেন, তারা অনেক ঘুরেও নানা জটিলতায় ঋণ পাননি। ঋণ পাওয়া নিয়ে নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। তাহলে বিদেশফেরতরা প্রণোদনার কী পেলেন প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের।
অভিবাসন নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর জরিপ অনুযায়ী, করোনার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বিদেশ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছে। দেশে এদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য সরকার ২০২০ সালের জুন মাসে ৭০০ কোটি টাকার ঋণ কর্মসূচি হাতে নেয়। এর মধ্যে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড তহবিল থেকে ২০০ কোটি টাকা এবং সরকার থেকে বরাদ্দ দেয়া হয় ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার ২৫০ কোটি টাকা ছাড় করেছে। সরকারের বাকি ২৫০ কোটি ও ওয়েজ আর্নার্স তহবিলের ২০০ কোটি টাকা এখনো ছাড় করা হয়নি। তবে একটি সূত্র বলছে, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার মধ্যে নগদ ১৫ কোটি টাকা পেয়েছে। এ অর্থ থেকে মোট ৩৯০ জনকে সাত কোটি ৬৬ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে ব্যাংক।
এসব অর্থে গত বছরের জুলাই থেকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেশে ফেরত আসা প্রবাসীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য অভিবাসী কর্মী পুনর্বাসন ঋণ কর্মসূচি চালু করে। গত ১১ মাসে এ খাতে ২১৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ব্যাংকের ৮২টি শাখার মাধ্যমে এ ঋণ দেয়া হচ্ছে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শুধুমাত্র প্রবাসীদের মধ্যে ঋণ দেয়ার কারণে বিতরণ কম। শাখার সংখ্যা কম হওয়ায় সব প্রবাসীকে ঋণের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। সব উপজেলায় শাখা নেই। ফলে অনেক দূর থেকে প্রবাসীরা ঋণের জন্য আসে না। তবে করোনা শুরুর পর থেকে ঋণ বিতরণে গতি এসেছিল। যেমন; প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর ৫২ হাজার ২২৩ জন প্রবাসীর মাঝে ৭৩০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু করোনার শুরুর পর গত ১১ মাসে ৯৪৪৭ জনের মাঝে ২১৫ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। সেই হিসাবে ভালো গতি এসেছিল। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে অর্থাৎ বিধিনিষেধের কারণে ঋণ বিতরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ফেরত আসা প্রবাসীদের পুনরায় বিদেশে যেতে এবং দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে ঋণ দিচ্ছে। ঋণের সুদের হার ৪ শতাংশ। ১ থেকে ৯ মাস গ্রেস পিরিয়ড। ২ থেকে ৫ বছর মেয়াদি ঋণ। এর মধ্যে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে। কৃষি, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পসহ বেশকিছু খাতে এ ঋণ নিতে পারবেন প্রবাসীরা।
জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী বলেন, সহজ শর্তের কথা বলে ঋণ পাওয়া আরও কঠিন করা হয়েছে।
দুবাই থেকে ছুটিতে এসে আটকে পড়া সিরাজগঞ্জের আতিক ব্যাংকের চাহিদামতো সব কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। নিজেদের পারিবারিক দোকানে নতুন ধরনের ব্যবসা শুরু করবেন তিনি। ব্যাংকের পক্ষ থেকে তদন্ত শেষে মৌখিক নিশ্চয়তাও দেয়া হয়েছে তাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যাংক বলেছে, নতুন করে ব্যবসা শুরুর পর ঋণের আবেদন করতে হবে। তিনি বলেন, চরম অভাবের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা খরচ করিয়ে ঋণ দেয়নি।
শরীয়তপুরের শাইফুল আলম। সৌদি আরবে ১৮ বছর ধরে কাজ করতেন। করোনার কারণে গত মার্চে তিনি দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু তার জমানো টাকা এরইমধ্যে খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু কবে ফিরে যেতে পারবেন, তার কোনো আশ্বাস পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, এরই মধ্যে এক লাখ টাকা ধার করেছি।
কয়েকজন প্রবাসী জানান, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সব নিয়মকানুন পরিপূর্ণ করার পরও সুপারিশ কমিটির আন্তরিকতার অভাবে ঋণ পেতে অনেক ক্ষেত্রে মাস বা তার চেয়েও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। সুপারিশ কমিটির প্রধানের আন্তরিকতায় খুব সহজেই কিছু প্রবাসী ঋণ পাচ্ছেন।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, প্রথমদিকে ঋণ পাওয়ার শর্ত নিয়ে কিছু সংশয় ছিল। শাখা অফিসগুলো সিদ্ধান্ত নিতে পারতো না, কিছু জটিলতা ছিল, সেগুলো আমরা দূর করেছি। আগের চেয়ে ঋণ প্রদান প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়েছে।
বেসরকারি সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) সামপ্রতিক এক হিসাব অনুযায়ী, করোনায় দেশে ফেরা প্রবাসী প্রায় সাড়ে তিন লাখ। এ ছাড়া ভিসা করেও প্রায় দেড় লাখ ব্যক্তি বিদেশে যেতে পারেননি। ফলে তারাও সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এক গবেষণায় জানায়, দেশে ফেরা প্রবাসীদের ৭০ শতাংশ জীবিকার সংকটে রয়েছেন। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলেও ৬১ শতাংশ পরিবার রেমিট্যান্স পায়নি। ৮৭ শতাংশের আয় নেই। ফলে তারা পরিবার নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন।
ব্র্যাক প্রবাস থেকে ফিরে আসা কর্মীদের মধ্যে একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। ৫৫৮ জন কর্মীর ওপর পরিচালিত জরিপে ৮৭ ভাগ বলেছেন তাদের অন্য কোনো আয়ের উৎস নাই। ৬০ ভাগ বলেছেন- তারা যে জমানো টাকা নিয়ে এসেছেন তা আর নাই, খরচ হয়ে গেছে। ৭৪ শতাংশ তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।   
বায়রা’র সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমাদের রেমিট্যান্স বাড়ানোর আরও সুযোগ আছে। শ্রমবাজার নিয়ে আমাদের ব্যাপক গবেষণা দরকার। আমাদের কারিগরি প্রশিক্ষণ ল্যাব ও ইনস্টিটিউট দরকার। শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন তারা এ খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status