বিশ্বজমিন

ট্রাক-হামলায় চার হত্যা

কানাডায় মুসলিমদের মধ্যে হতাশা, ক্ষোভ, তিন দিনের শোক

মানবজমিন ডেস্ক

৯ জুন ২০২১, বুধবার, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ন

মুসলিমবিদ্বেষী হামলায় কানাডায় একটি মুসলিম পরিবারের চারজনকে হত্যা করা হয়েছে রোববার। এ ঘটনায় সেখানকার মুসলমানদের মধ্যে হতাশা, ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের চোখের সামনে নতুন করে কমপক্ষে চার বছর আগে কুইবেকে একটি মসজিদে নৃশংসভাবে চারজন মুসলিমকে হত্যার নিষ্ঠুর স্মৃতি ফিরে এসেছে। সাম্প্রতিক এসব হামলার পর মুসলিমদের মধ্যে ভয়াবহ এক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ হামলার ঘটনায় কানাডার লন্ডন শহরে তিন দিনের শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র এডওয়ার্ড হোল্ডার। অন্যদিনের মতো, অন্য মানুষের মতোই করোনা ভাইরাস মহামারির সময়ে রোববার সন্ধ্যাবেলায় বাইরে হাঁটতে বেরিয়েছিল সালমান আফজালের পরিবার। তারা অন্টারিওর লন্ডন শহরের রাস্তা পাড় হওয়ার সময় একজন ট্রাকচালক ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিয়ে হত্যা করেছে। পুলিশ বলেছে, এটা ছিল মুসলিম বিদ্বেষী হামলা। এতে আফজাল পরিবারের চার সদস্য নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় হৃদয়ে ক্ষরণ হচ্ছে মুসলিমদের। তাদেরই একজন ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে গ্রাজুয়েটের ছাত্রী সেলমা তোবাহ (৩১)। তিনি কমপক্ষে ১০ বছর ধরে কানাডার লন্ডনে বসবাস করছেন। বলেছেন, এই হামলার শিকার হতে পারতাম আমিও। ওই পরিবারটি ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সবেমাত্র হাঁটতে বেরিয়েছিল। তাদের মতো আমিও বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সন্ধ্যাবেলা হাঁটতে বের হই। আমি, মা, আমার বোন এবং বান্ধবীরা সবাই হিজাব পরি। ফলে এমন মুসলিম বিদ্বেষী হামলার শিকার আক্ষরিক অর্থেই আমরা যেকেউ হতে পারতাম।
সোমবার লন্ডন পুলিশ সাংবাদিকদের বলেছেন, রোববার স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৪০ মিনিটের সময় আফজাল পরিবার হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। এ সময় তাদের দলে ছিলেন তিনজন প্রাপ্ত বয়স্ক এবং দু’টি শিশু। কিন্তু ওই ট্রাকচালক ইচ্ছাকৃতভাবে তাদেরকে তার ট্রাক দিয়ে আঘাত করে। পুলিশ প্রধান স্টিভ উইলিয়ামস বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি নিহতরা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করেন। তারা মুসলিম। এ কারণেই তাদেরকে টার্গেট করা হয়েছে। তার হামলায় নিহত হয়েছেন ৪৬ বছর বয়সী একজন পুরুষ, ৭৪ বছর এবং ৪৪ বছর বয়সী দু’জন নারী এবং ১৫ বছর বয়সী একটি মেয়ে। তারা সবাই একই পরিবারের। আহত হয়েছে একটি বালক। সে মারাত্মক আহত হয়েছে। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে সে সুস্থ হবে।
পরিবার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং কানাডার মিডিয়াগুলো একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে ওই পরিবারের যারা নিহত হয়েছেন তারা হলেন সালমান আফজাল, তার স্ত্রী মাদিহা, তাদের কন্যা ইয়ুমনা। সালমানের মা-ও নিহত হয়েছেন। তবে তার নাম প্রকাশ করা হয়নি। ওদিকে আহত বালকটির নাম ইচ্ছা করে প্রকাশ করা হচ্ছে না।
এ ঘটনায় কানাডার লন্ডনে নাথানিয়েল ভেল্টম্যান নামে (২০) বছরের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে তার বিরুদ্ধে চার দফা ফার্স্ট ডিগ্রি হত্যা এবং এক দফা হত্যা চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। লন্ডনে মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা আব্দ আলফাতাহ তাওয়াক্কাল বলেছেন, আমাদের যে বেদনা হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। আমাদের মনের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো বসে আছে কষ্ট। তিনি আরো বলেন, একই সঙ্গে উদ্বেগ, ভীতি দেখা দিয়েছে। কারণ, এই ঘটনা আমাদের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সন্ত্রাসী হামলার আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেছেন, কানাডার খুব পুরনো জনবসতির একটি লন্ডন। সেখানে মুসলিমদের প্রতি সমর্থন ও সংহতি প্রকাশ করছেন অনেক মানুষ। ওদিকে মার্চে স্ট্যাটিসটিকস কানাডা বলেছে, পুলিশি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ২০১৯ সালে মুসলিমদেরকে টার্গেট করে ঘৃণাপ্রসূত অপরাধ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৮১। এর আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ১৬৬।
লন্ডন শহরে ট্রাক হামলার ঘটনায় মেয়র এডওয়ার্ড হোল্ডার বলেছেন, এটা ছিল গণহত্যা, মুসলিম এবং লন্ডনের মানুষের বিরুদ্ধে হামলা। অবর্ণনীয় এক ঘৃণা থেকে এই হামলা চালানো হয়েছে। এ জন্য সোমবার অটোয়াতে দেশের পার্লামেন্টে নীরবতা পালন করা হয়েছে। হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, এটা ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ঘৃণাপ্রসূত এক সন্ত্রাসী হামলা। ওই পরিবারের সদস্যদের জীবন কেড়ে নেয়া হয়েছে নৃশংসভাবে কাপুরুষোচিতভাবে। এই হত্যাকা- কোনো দুর্ঘটনা নয়।
শিক্ষার্থী সেলমা তোবাহ বলেছেন, লন্ডন এবং পুরো দেশে মুসলিম বিরোধিতা এবং ইসলামভীতি নতুন কিছু নয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status