প্রথম পাতা

যে কারণে ঝুলে আছে সিনহা হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম

মরিয়ম চম্পা

৯ জুন ২০২১, বুধবার, ৯:৫১ অপরাহ্ন

আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রম ঝুলে আছে। করোনা মহামারির মধ্যে আদালতের কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ায় মামলায় এ পর্যন্ত কোনো শুনানি হয়নি। মামলার পরবর্তী শুনানির বিষয়টি নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। এ অবস্থায় সময় দীর্ঘায়িত হলে মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্য দেয়া নিয়ে জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে মনে করছে সিনহার পরিবার। এ মামলায় ১৪ জন আসামি কারাগারে আছেন। সাগর দেব নামে একজন পলাতক রয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১২ জন ইতিমধ্যে নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে। তবে বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ এবং কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে জবানবন্দি দেননি। ইতিমধ্যে র‌্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা ৮৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেন। বিভিন্ন ধরনের আলামত ও ডিজিটাল কন্টেন্ট আমলে এনে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। মোট ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে সিনহা হত্যা মামলার তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ই ডিসেম্বর আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় র‌্যাব। এরপরই এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।

মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ৯ জন পুলিশ সদস্য, তিনজন এপিবিএনের সদস্য এবং তিনজন স্থানীয় বাসিন্দা। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমারসহ, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এস আই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এপিবিএনের এস আই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিনসহ অভিযুক্ত ১৪ জন কারাগারে রয়েছেন।

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা মানবজমিনকে বলেন, সর্বশেষ গত ৮ই এপ্রিল বিচারিক আদালতে আলোচিত এই মামলার শুনানির দিন ধার্য ছিল। করোনার প্রকোপ বাড়ায় সরকারের বিধিনিষেধ জারির কারণে কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। আদালত বন্ধের কারণে সাক্ষীর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নথিপত্র আদালতে উপস্থিত করা যায়নি।

এই আইনজীবী বলেন, মামলার ১৪ জন আসামি কারাগারে থাকলেও এখন পর্যন্ত সাগর দেব নামে একজন পলাতক রয়েছে। বিচার পরিচালনা করতে পলাতক আসামির জন্য আদালত থেকে সমন জারি করা হয়। তখন আসামি হাজির না হলে হুলিয়া জারি এবং জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। যদি তাতেও আসামি হাজির না হয় তাহলে তার অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ শুরু হয়। এই মামলার পলাতক আসামির বিচারের জন্য ইতিমধ্যে ওয়ারেন্ট, পেপার পাবলিশসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এ ছাড়া জজ কোর্টে ফাইল ট্রান্সফার হয়ে গেছে। তার অনুপস্থিতিতে বিচার শুরু করতে এখন আইনগত আর কোনো বাধা নেই বলে জানান তিনি।

মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার মানবজমিনকে বলেন, লকডাউন কবে শেষ হবে তার ওপর হেয়ারিং নির্ভর করছে। যেটা আমাদের জন্য এখন বড় একটি চ্যালেঞ্জ। মামলার চার্জশিট পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। যখন কোর্টে হেয়ারিং শুরু হবে তখন বোঝা যাবে কতটা সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত হবে। তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যে গত ডিসেম্বরে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। যেটা একটি ইতিবাচক দিক। সর্বশেষ গত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে হেয়ারিং হওয়ার কথা ছিল। প্রথম হেয়ারিং হওয়ার পর তখনই বোঝা যাবে বিচার কার্যক্রম কোন্‌ দিকে যাচ্ছে। নিম্ন আদালতের চেয়ে উচ্চ আদালতের বিষয়টি অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে বলে জানান তিনি। শারমিন বলেন, হেয়ারিং যেহেতু শুরু হয়নি। তাই শুরু না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। এ ছাড়া আমার কাছে এখন অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে হয় সাক্ষীদের কতদিন রাখা যাবে। সাক্ষী হয়তো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে। নিম্ন আদালতে সাক্ষীদের তো আসতে হবে। এরপর উচ্চ আদালতে কাগজপত্র দেখে কাজ করবে। সেখানে সাক্ষী লাগবে না। এই সাক্ষীগুলো যদি হারিয়ে যায় বিশেষ করে তাদের প্রয়োজনে দেশের বাইরে চলে যেতে পারে কেউ কেউ। এটাকে এখন পর্যন্ত আমার কাছে খুব বড় একটি চ্যালেঞ্জ বলে মনে হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৩১শে জুলাই কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। ওই বছরের ৫ই আগস্ট এই ঘটনায় ৯ জন পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন মেজর (অব.) সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার। এর আগে এ ঘটনায় পুলিশ দুটি মামলা করে। হত্যা মামলা এবং পুলিশের দায়ের করা মামলার তদন্ত পায় র‌্যাব। হত্যাকাণ্ডের চার মাস পর ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেন র‌্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা। চার্জশিটে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়। টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনা করেন বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status