বাংলারজমিন
সিলেটে নাজিমের মৃত্যু নিয়ে ‘রহস্য’ শাহনিয়া গ্রেপ্তার
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
৯ জুন ২০২১, বুধবার, ৯:১৮ অপরাহ্ন
সিলেট শহরতলীর পীরেরবাজারে বাড়ি রাবিদ আহমদ নাজিমের। বাড়িতে স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে। কিন্তু পরিবারের অজান্তে সিলেট নগরীর কাজিটুলায় আরেক পরিবারের সঙ্গে সাবলেট থাকতেন নাজিম। পরিচয় দিতেন বাসার মহিলা তার খালা। আর খালা পরিচয়ে ওই মহিলার স্বামী সঙ্গছাড়া মেয়ে শাহনিয়াকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন শহরে। গত সোমবার সকালে ওই বাসার নিচ থেকে নাজিমের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বাসার ৫ তলার ছাদ থেকে ছিটকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে নাজিমের। ঘটনার তদন্ত করতে অনেক রহস্য খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। নাজিমের পরিবারও ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা মেনে নিতে নারাজ। এ কারণে নাজিমের পিতা নুর মিয়া সোমবার রাতে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করলেও পুলিশ শাহনিয়া ও তার দুই ভাইকে আটক করেছে। এ ঘটনায় গত দু’দিন ধরে সিলেটে তোলপাড় চলছে। কাজিটুলা উঁচাসড়কস্থ চৌধুরী ভিলা নামক ৫ তলা বাসার পঞ্চম তলার বি-৫ ফ্ল্যাটটি গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভাড়া নিয়েছিলেন শাহনিয়ার ভাই আকবর। ওই সময় কথাবার্তায় নাজিমও ছিল। বাসার মালিকের স্বজন মারুফ আহমদ জানিয়েছেন, দেড় বছর ধরে খালা পরিচয়ে নাজিম ওই পরিবারের সঙ্গে সাবলেট হিসেবে বসবাস করতেন। ঘটনার দিন সকাল ৯টায় বাসার এক পাশে নাজিমের লাশ পাওয়া যায়। এ সময় তিনি ওই বাসায় বসবাসকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানিয়েছিল নাজিম ৫ তলা থেকে পা পিছলে পড়ে মারা গেছে। এদিকে ঘটনার পর পুলিশ নাজিমের মৃত্যুর তদন্ত শুরু করে। নাজিমের পিতা নুর মিয়া ও চাচা আব্দুল জলিল সহ স্বজনরা পীরের বাজার থেকে ছুটে আসেন কাজিটুলায়। তারা জানান, ওই বাসায় নাজিম থাকতো সেটি তারা কখনোই জানেন না। তার ওখানে খালা পরিচয়ে থাকা মহিলা তাদের স্বজন নয়। নাজিমের পরিবারের ভাষ্য জানার পর পুলিশের কাছে বিষয়টি আরও রহস্যজনক মনে হয়। এ সময় পুলিশ নাজিমের বসবাসকারী কক্ষে তল্লাশি চালায়। সেখান থেকে তারা কয়েক পিস ইয়াবা পান। এ ছাড়া ঘরে ইয়াবা সেবনের আরও নানা উপকরণ পান। নাজিমের সঙ্গে সম্পর্কের সঠিক কারণও জানাতে পারে বাসায় বসবাসকারী শাহনিয়া ও ভাইরা। নাজিমের স্বজনরা ধারণা করেন ইয়াবা ব্যবসার দ্বন্দ্বের জের ধরে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হতে পারে নাজিমকে। এ কারণে রাতে নাজিমের পিতা পীরেরবাজারের আটগাঁও কেওয়া গ্রামের নুর মিয়া বাদী হয়ে রাতে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি শাহনিয়া ও তার ভাইদের আসামি করেন। রাত ১টার দিকে পুলিশ ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে নিজামের সঙ্গে এক ফ্ল্যাটে থাকা নারী শাহনিয়া বেগম, তার ভাই আকবর ও ইয়ামিনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের বাবার নাম আলাউদ্দিন আনোয়ার। তাদের বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জ থানার গহরপুর এলাকায়। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মুখ খুলেনি। গতকাল দুপুরে পুলিশ আদালতে সোপর্দ করে তাদের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল দুপুরে পরিবারের কাছে নাজিমের লাশ হস্তান্তর করা হয়। নাজিমের চাচা আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, সোমবার সকালে নাজিমের বাবাকে কাজিটুলা থেকে কে বা কারা ফোন করে বলেন- নাজিম পাঁচতলা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছে। তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। খবর পেয়ে নাজিমের পরিবারের সদস্যরা ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে তাকে মৃত দেখতে পান। এর আগে রোববার রাতে কে বা কারা নাজিমকে ফোন করে কাজিটুলায় নিয়ে আসে বলে পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ। তিনি বলেন, রাতে আর নাজিম বাড়ি ফেরেনি, তার ফোনও বন্ধ ছিল। নাজিমের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের জট এখনো খুলেনি। এ মৃত্যুর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন শাহনিয়া নামের বিবাহিত এক নারী। যার সঙ্গে নাজিম এক ফ্ল্যাটে খালাতো ভাইবোন পরিচয়ে থাকতেন। যদিও নাজিমের বাসা ভাড়া নিয়ে থাকার বিষয়টি জানতেন না তার পরিবার। সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি এসএম আবু ফরহাদ জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসতে পারে বলে জানান তিনি। গতকাল মঙ্গলবার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।