বাংলারজমিন

আজ খোলা হবে নতুন দরপত্র

মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায়ে সাড়ে ৫ বছরে বাড়তি ব্যয় ৪২৩ কোটি টাকা

বিল্লাল হোসেন রবিন, নারায়ণগঞ্জ থেকে

৯ জুন ২০২১, বুধবার, ৮:৩৩ অপরাহ্ন

অনিয়মের বেড়াজালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা ও গোমতী সেতুর টোল আদায়ে গত সাড়ে ৫ বছরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) ব্যয় হয়েছে ৪২৩ কোটি টাকার বেশি। এতে সরকারের কোষাগার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পকেটভারি হয়েছে টোল আদায়কারী সংস্থার। ২০১৫ সালের ১লা অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ৩১শে মার্চ পর্যন্ত টোল অপারেটিং খাতে এ বাড়তি ব্যয় হয়েছে। এসময়ে টোল আদায় হয়েছে ১ হাজার ৭৯৫ কোটি ৪৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা। ‘একক উৎসে’ নিয়োগ পাওয়া সিএনএস লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠান সেতু দুটি থেকে টোল আদায়ের কাজ করছেন। এর আগে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে নিয়োগ পাওয়া অপর একটি প্রতিষ্ঠান ২০১০ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ৫ বছর টোল আদায় করে। ওই সময়ে টোল আদায়ে ব্যয় হয়েছিল ৯ কোটি ১১ লাখ ৪২ হাজার টাকা। ‘একক উৎসে’ নিয়োগ দেয়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টোল আদায়ের কারণে সাড়ে ৫ বছরে বিপুল পরিমাণ এই অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হয়েছে।
এদিকে, টোল আদায় ও পরিচালনার জন্য নতুন করে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের জন্য আহ্বানকৃত উন্মুক্ত দরপত্র আজ খোলা হবে।
টোল আদায়ে নিয়োজিত বর্তমান সার্ভিস প্রোভাইডারকে টোল নীতিমালা-২০১৪ এবং পিপিআর-২০০৮ যথাযথভাবে অনুসরণ করে নিয়োগ করা হয়নি।
আইনের ব্যত্যয়, তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে কোনো রকম চুক্তি ছাড়াই সিএনএস লিমিটেডকে টোল আদায়ে নিযুক্ত করা হয়। ২০১৬ সালের ৭ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সওজ চুক্তিবদ্ধ হয়। এই ক্রয় প্রক্রিয়া পিপিআর-২০০৮ এর ১০৪(২)(অ)(ই) বিধি অনুযায়ী করা হয়েছে বলে চুক্তিতে বলা হয়েছে। তবে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) দেয়া পরামর্শ বিধি-১১০(৭) অনুযায়ী সকল কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি।
নেগোসিয়েশনে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থতা, ২০১৫ সালের ৩, ৬ ও ৯ ডিসেম্বর নেগোসিয়েশন সভায় দর চূড়ান্ত করা হয়। আলোচনা করে চূড়ান্ত নেগোসিয়েশন হয় মোট টোল আদায়ের ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ (ভ্যাট ও আয়কর ব্যতীত) হারে প্রতিষ্ঠানটিকে দেয়ার। কিন্তু নেগোসিয়েশন সভায় প্রতি বছর যানবাহন বৃদ্ধির ফলে টোল আদায় বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনায় আনা হয়নি। যে সংখ্যক জনবল নিযুক্তির সিদ্ধান্ত চুক্তিতে রয়েছে সে সংখ্যক জনবলের প্রয়োজন আছে কি-না? জনবলের বেতন-ভাতা যৌক্তিক কি-না? এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে- এমন তথ্য নেগোসিয়েশন সভার বিবরণীতে নেই।
আড়ালে ব্যয়ের প্রকৃত তথ্য: সিএনএসকে ভ্যাট ও আয়করসহ বর্তমানে মোট কমিশন পরিশোধ করা হচ্ছে আদায়কৃত টোলের শতকরা ২৪ দশমিক ৩১ ভাগের বেশি। চুক্তি অনুযায়ী আদায়কৃত মোট টোলের ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ (ভ্যাট ও আয়কর ব্যতীত) কমিশন দেয়ার কথা। ফলে প্রকৃত ব্যয় আড়ালেই থাকছে।
ব্যয়ের ব্যবধান: গত মার্চ মাস পর্যন্ত পর্যন্ত সাড়ে ৫ বছরে টোল আদায়ে ‘একক উৎসে’ নিয়োগ করা প্রতিষ্ঠান সিএনএসকে ভ্যাট ও আয়করসহ কমিশন বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৪৩২ কোটি ৫১ লাখ ৮২ হাজার টাকার বেশী। অপরদিকে ২০১০ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত টোল অপারেট করেন উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণ করে নিয়োগ দেওয়া অন্য এক প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানকে ওই সাড়ে ৫ বছরে টোল আদায় বাবদ ৯ কোটি ১১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ উন্মুক্ত পদ্ধতির পরিবর্তে একক উৎসে নিয়োগ দেওয়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টোল অপারেট করায় সরকারের (সাড়ে ৫ বছর টোল অপারেটিংয়ে) প্রায় ৪২৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার বেশী অতিরিক্ত খরচ হয়েছে।
অডিট আপত্তি: সওজ সূত্র জানায়, চুক্তিতে অনিয়মের বিষয়ে ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের অডিটেও আর্থিক ক্ষতির বিষয়ে আপত্তি দেয়া হয়েছিল। অডিট আপত্তিতে বলা হয়েছিল, মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায়ে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে অপারেটর নিয়োগ না করে একক উৎস ভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে অপারেটর নিয়োগ করায় ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ( এক বছরে) ৩৯ কোটি ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার ১৮৭ টাকা ক্ষতি হয়েছে। ওই অডিট আপত্তি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি বলে নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগ সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের মতামত: ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী গত ১০ই ডিসেম্বর এক পত্রে প্রধান প্রকৌশলীকে বলেছেন, গত ৫ বছরে প্রতি বছর গড়ে ১১.০৯% হারে টোল আদায় বেড়েছে। সিএনএস’র সঙ্গে চুক্তির তুলনায় বর্তমানে দেড় গুণের বেশী টোল আদায়ের পরিমান বৃদ্ধি হওয়ায় অনেক কম কমিশনে নতুন সার্ভিস প্রোভাইডার নিয়োগ করা যেতে পারে। বছরে ১১.০৯ % হারে টোল আদায় বৃদ্ধির ফলে এই বর্ধিত টাকার কমিশনও বর্তমান প্রতিষ্ঠানটি গ্রহণ করেছে। যার কারণে কমিশনও বেশী পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
টোল আদায় ও যানবাহন বৃদ্ধির হার: বিআরটিএ এর তথ্য মতে ২০১৫ সালের ৩১শে ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৯২ শতাংশ। একই সময়ে টোল আদায় বেড়েছে প্রায় ৪৯ শতাংশ।
টোল নীতিমালায় যা আছে: টোল নীতিমালা-২০১৪ অনুযায়ী ওএন্ডএম পদ্ধতিতে পরিচালিত টোল প্লাজা পরিচালনায় উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে তিন বছর মেয়াদে অপারেটর নিয়োগ করতে হয়। কোন কারণে অপারেটর নিয়োগ সম্ভব না হলে বিভাগীয় পদ্ধতিতে টোল আদায় করতে হয়। টোল নীতিমালায় আর কোন বিকল্প বিধান রাখা হয়নি।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মেহেদী ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নানা বিষয় এড়িয়ে গিয়ে বলেন, সিএনএস লিমিটেডের মেয়াদ ৩০শে জুন শেষ হয়ে যাবে। টোল আদায় ও পরিচালনার জন্য নতুন করে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ৯ই জুন তা খোলা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন জনবল নিয়োগ হলে টোল আদায়ে খরচ আগের চেয়ে ডেফিনেটলি কমবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status