এক্সক্লুসিভ

রাজশাহীতে আইসিইউ’র জন্য হাহাকার

আসলাম-উদ-দৌলা, রাজশাহী থেকে

৮ জুন ২০২১, মঙ্গলবার, ৮:৫৬ অপরাহ্ন

সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চলে করোনা চিকিৎসার শেষ আশ্রয়স্থল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) বেড সংকটে স্বজনদের হাহাকার যেন থামানোর কেউ নেই। হাসপাতালটিতে করোনায় প্রতিদিনই মৃত্যু হচ্ছে। আর থেমে থেমে বাড়ছে স্বজনদের কান্নার রোল। করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও শনাক্তের হার রয়েছে ঊর্ধ্বমুখী। আশেপাশের জেলা চাঁপাই নবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, পাবনায় করোনা চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় হাসপাতালটিতে রোগী প্রতিনিয়ত বাড়ছে। স্বাভাবিক সময়ে এই অঞ্চলের মানুষ রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে ভারতের ওপর নির্ভর করতেন। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসার জন্য সীমান্ত পাড়ি দিতেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সে সুযোগ না থাকায় রাজশাহী অঞ্চলে চিকিৎসা ব্যবস্থার চরম অব্যবস্থাপনার চিত্র ফুটে উঠছে। সীমিতসংখ্যক ভেন্টিলেটর ও উচ্চ প্রবাহের অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা থাকা শয্যা দিয়ে বাড়তে থাকা রোগীর সামলাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। অভিযোগ আসছে, সঠিক সময়ে করোনা পরীক্ষার ফলাফল জানতে পারছেন না। অনেকে বলেছেন, পরীক্ষার ফলাফল জানতে দেরি হওয়ায় বা জানতে না পারায় সংক্রমণের আরও বিস্তার ঘটছে। এমতাবস্থায় বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে হাসপাতাল ও চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধির দাবি জোরদার হচ্ছে। তবে     পৃষ্ঠা ১৭ কলাম ৪
চিকিৎসাসেবার পরিধি বৃদ্ধিতে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে শুধু ‘বিশেষ লকডাউন’ জারি করা বা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কঠোর লকডাউনে যাওয়ার দাবিতে ব্যস্ত থাকায় ক্ষুব্ধ এখানকার জনসাধারণ।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তরের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার নিয়ামত আলী (৭০) শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এমন চিত্রের দেখা মেলে প্রায় প্রতিদিনই। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে নিতান্ত বাধ্য না হলে রামেকমুখো হতে চান না কেউ। ফলে অজানা থেকে যায় বেদনাগাঁথা-চাপা ক্ষোভের গল্প।
রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে বর্তমানে ১৮টি আইসিইউ বেডে করোনা রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ২৭৫টি সাধারণ বেডে করোনা রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। চালু রয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম। তবে ১৮টি আইসিইউ বেড করোনার জন্য পর্যাপ্ত নয়। তৈরি হয়েছে আইসিইউ বেডের সংকট। বেডের বিপরীতে সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে করোনা রোগীদের অনেকেরই মৃত্যু হচ্ছে বেড না পেয়ে। সূত্র জানায়, রাজশাহী বিভাগে আইসিইউ বেড রয়েছে ৫৫টি। তার মধ্যে ১০টি বেসরকারি ক্লিনিকে এবং ৪৫টি সরকারি হাসপাতালে। যা এ বিভাগের জন্য মোটেও পর্যাপ্ত নয়।
গতকাল হাসপাতালে সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রোগীর স্বজনরা আক্রান্ত সংকটাপন্ন নিকটাত্মীয়দের বাঁচাতে আইসিইউ বেড পাওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ টাকার মাধ্যমে ওয়ার্ডে দায়িত্বরতদের ম্যানেজ করে বেড কেনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু শত চেষ্টা করেও প্রয়োজনের মুহূর্তে পাওয়া যাচ্ছে না বেড। হাসপাতালের ৩, ১৬, ২২, ২৫, ২৯, ৩০, ৩৯ এবং ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের অবস্থা বেশি ভয়াবহ। এ ওয়ার্ডগুলোতে বর্তমানে ২৩২ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এদের মধ্যে অন্তত ৩৫-৪০ জন রোগী সংকটাপন্ন। অথচ আইসিইউ বেড মাত্র ১৮টি, ফাঁকা নেই একটিও। আইসিইউ বেডের চাহিদার সিরিয়াল যাচ্ছে ৪০-৪৫ পর্যন্ত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ২০ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ১৬, চাঁপাই নবাবগঞ্জের ৩ ও নওগাঁর ১ জন। একই সময় হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৩ জন। এছাড়া রাজশাহীতে কিছুটা কমেছে করোনাভাইরাস     পৃষ্ঠা ১৭ কলাম ১
সংক্রমণের হার। রোববার রাজশাহীর দুইটি ল্যাবে ৪৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ১৯৭ জনের করোনা পজেটিভ এসেছে। রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দুইটি ল্যাবের করোনার নমুনা পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফলে নাজুক অবস্থা তৈরি হতে যাচ্ছে হাসপাতালে আইসিইউ বেড নিয়ে। তবে বেড বৃদ্ধির বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রোববার দুই ল্যাবে তিন জেলার ৬০৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৪১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর ৪৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৯৭ জনের পজেটিভ এসেছে। আর চাঁপাই নবাবগঞ্জের ৪৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৯ জন এবং নওগাঁ জেলার ৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৫ জনের করোনা পজেটিভ এসেছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, ‘সময় যতই গড়াচ্ছে করোনা রোগীর সংখ্যা ততই বাড়ছে। রাজশাহী বিভাগে মোট আইসিইউ বেড রয়েছে ৫৫টি। তবে আইসিইউ বেডের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না করতে পারলেও, আমরা জেনারেল বেডে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করছি। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। জেনারেল বেডে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলেও চলবে। আর কোনো রোগীকে আইসিইউ সাপোর্ট দেয়ার প্রয়োজন হবে না।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status