কলকাতা কথকতা
কলকাতা কথকতা
ববির চোখে জল, ফুঁসছেন মদন, সুব্রত স্তব্ধ, প্রেসিডেন্সি জেলের দেয়ালে মাথা ঠুকলেন বৈশাখী
জয়ন্ত চক্রবর্তী, কলকাতা
১৮ মে ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:০৯ পূর্বাহ্ন
দুগ্ধফেননিভ বিছানা ছিল না। নেই বাতানুকূল যন্ত্রের আরামদায়ক ব্যবস্থা। শুধু চার বন্দির বয়স ও পদমর্যাদার কথা ভেবে পুরনো আমলের টেবিল ফ্যান আর একটা করে চাদরের ব্যবস্থা করেছিলেন প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষ। তাতে আধ বসা হয়েই রাত কাটালেন চার ভিআইপি। নারোদা মামলায় ব্যাঙ্কশাল কোর্টে জামিন পেয়েছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ ববি হাকিম, বিধায়ক মদন মিত্র এবং কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু সন্ধ্যায় পাওয়া এই জামিন খারিজ হলো হাইকোর্টে গভীর রাতে। সিবিআই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাশে আবেদন করার পর সোমবার গভীর রাতে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায়ে বুধবার পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দেয়। সঙ্গে সঙ্গে ঠিক হয়ে যায় যে, চার হেভিওয়েটকেই বুধবার পুনরায় হাইকোর্টে শুনানি না হওয়া পর্যন্ত থাকতে হবে প্রেসিডেন্সি জেলেই। রাত ১০টার পর থেকে চারজনকে প্রেসিডেন্সি জেলে নেয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়। রাত একটা বেজে ২০ মিনিট নাগাদ কড়া নিরাপত্তায় প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়া হয় চারজনকেই। প্রিজনভ্যানে ওঠার সময় ফিরহাদ ববি হাকিমের চোখের কোণে জল দেখা যায়। বলেন, আমাকে কলকাতার কোভিড নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনের প্রধান করা হয়েছিল। কলকাতার মানুষকে ওরা বাঁচতে দেবে না। ক্রোধে, উত্তেজনায় ফুঁসছিলেন মদন মিত্র। প্রিজনভ্যানে ওঠার সময় শুধু বললেন, আমরা খারাপ, আর মুকুল, শুভেন্দুরা ভালো। বেশ বিচার! স্ত্রী ছন্দবাণী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাত নেড়ে কথা বলা ছাড়া নিরুত্তর ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। রাত একটা বেজে ৩৬ মিনিট নাগাদ কনভয় পৌঁছায় আলিপুরের প্রেসিডেন্সি জেলে। একে একে চার নেতাকেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে সই করিয়ে ঢুকিয়ে নেয়া হয় জেলের ভিতরে। ফিরহাদ ববি হাকিমের দুই মেয়ে প্রিয়দর্শিনী ও ছন্দবাণী জেলের দরজা পর্যন্ত ছিলেন বাবার সঙ্গে। মদন মিত্র জেলে ঢোকার আগে ছেলেকে নির্দেশ দিয়ে গেলেন, হোম আইসোলেশনে থাকা মায়ের দেখভালের জন্য। চার নেতা প্রেসিডেন্সি জেলে ঢুকে যাওয়ার পর জেলের প্রাচীরে আকুল কান্নায় ভেঙে পড়লেন শোভন চট্টোপাধ্যায় এর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ওষুধটুকু পর্যন্ত নিতে দিলোনা। উনি ডায়াবেটিকের রোগী, সিওপিডি আছে। কিচ্ছু খেতে পর্যন্ত দেয়নি। এত বড় অন্যায় কিভাবে হচ্ছে? আমি ওর জন্য প্রাণ পর্যন্ত দিতে রাজি আছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে বৈশাখী বলেন, দিদি যথার্থ ক্যাপ্টেন। দলের খেলোয়াড়দের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
রাত দুটোয় প্রেসিডেন্সি জেলের বাইরে নিথর রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে হটাৎ স্লোগান উঠলো- ববি হাকিম জিন্দাবাদ। এক মধ্যবয়স্কা রমণি ছুটে এসে তৃণমূল কর্মীদের স্লোগান দিতে নিষেধ করলেন- শ্রীমতি ববি হাকিম। পরিবহন মন্ত্রীর স্ত্রী।