দেশ বিদেশ

হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত হওয়ার দাবি, ৫০ যুদ্ধবিমান থেকে বোমা হামলা

মানবজমিন ডেস্ক

১৮ মে ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:৪২ অপরাহ্ন

 আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল থেকে যুদ্ধবিরতির দাবি জোরালো হলেও রক্তের নেশায় মেতে উঠেছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তার নির্দেশে গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা হচ্ছে। অকাতরে মরছে শিশু, নারীসহ নিরপরাধ বেসামরিক মানুষ। সোমবার ভোরেও বোমার আঘাতে কেঁপে ওঠে গাজা। বৃষ্টির মতো বোমা পড়তে থাকে। ইসরাইলের সেনাবাহিনীই স্বীকার করেছে, মাত্র ২০ মিনিট সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ৫০টি যুদ্ধবিমান অভিযানে অংশ নিয়েছে। এ সময়ে ৩৫টি স্থাপনা টার্গেট করা হয়। ধ্বংস করে দেয়া হয় কমপক্ষে ১৫ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ টানেল। তবে ইসরাইলের সেনাবাহিনীর দাবি এদিন হামলায় নিহত হয়েছেন গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার হুসাম আবু হারবিড। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে ইসরাইলের সেনাবাহিনী বলেছে, ইসরাইলের দিকে বেশ কিছু ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের নেপথ্যে ছিলেন তিনি। তবে হামাস বা অন্য কোনো সূত্র থেকে এ খবরের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অনলাইন বিবিসি বলেছে, এক সপ্তাহ আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে ভয়াবহ যে কয়েকটি হামলা হয়েছে গাজায়, তার মধ্যে অন্যতম ছিল সোমবার ভোর রাতের হামলা। ইসরাইলের দাবি, তারা হামাসের রকেট হামলার জবাব দিয়েছে। এ সময়ে তারা হামাস ও তাদের  বেশ কয়েকজন কমান্ডারের বাড়ি টার্গেট করে। কিন্তু প্রধান সড়কের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বৈদ্যুতিক লাইনের। এ অবস্থায় গাজাবাসী তাদের আতঙ্কের কথা বলেছেন। ফিলিস্তিনের মানবাধিকারকর্মী ও দু’সন্তানের মা নাজলা শাওয়া বলেছেন, আমি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। এই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে আমি শান্তি পেতে চাই। তিনি বলেন, যেসব মানুষকে চিনতাম, জানতাম, যাদের সঙ্গে কাজ করেছি তারা নিহত হয়েছেন। তারা সাধারণ মানুষ। পেশাদার। তরুণ ও বৃদ্ধ। ইসরাইলের সেনাবাহিনী বলেছে, তারা হামাসের কমান্ডারদের কমপক্ষে ৯ জন পদস্থ কর্মকর্তার বাড়িতে আঘাত করেছে। এ ছাড়া গাজা সীমান্তের কাছ থেকে স্থল হামলা চালানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে এই যুদ্ধ শুরু হয়েছে ইসরাইল কর্তৃক দখলীকৃত পূর্ব জেরুজালেমকে কেন্দ্র করে। এই স্থানটি মুসলিম ও ইহুদিদের কাছে অতি সম্মানের। বর্তমানে গাজা নিয়ন্ত্রণ করে হামাস। তাদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের অভিযোগ, তারা রকেট হামলা করেছে ইসরাইলে। কিন্তু রকেট হামলার জবাবে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। তারা আকাশচুম্বী সব ভবন মাটির সঙ্গে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। মিডিয়া হাউজগুলোও তাদের উন্মত্ত হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। তাদের নির্বিচার বোমা হামলায় কমপক্ষে ৫৮টি শিশু, ৩৪ জন নারী সহ কমপক্ষে ১৯৮ জন নিহত হয়েছেন গাজায়। আহত হয়েছেন ১২৩০ জন। সোমবার আবারো ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে পাল্টা হিসেবে বেশ কয়েকটি স্থানে রকেট সতর্কীকরণ সাইরেন বাজানো হয়। একটি রকেট আঘাত করে আশদুদ শহরের একটি এপার্টমেন্ট ভবনে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পক্ষান্তরে গাজায় ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলেছেন, রাতভর হামলা চালানো হয়েছে গাজায়। এর ফলে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ধ্বংস হয়েছে অসংখ্য বাড়ি ও অন্য ভবন।
ওদিকে যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোমবার মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি বলেছেন, যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে তার দেশ অনেক দূর যাচ্ছে। এখনো আশাবাদী তিনি। ওদিকে রোববার পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। এই বৈঠক থেকে মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁ সতর্ক করে বলেছেন, আরো যুদ্ধ হলে তাতে নিরাপত্তা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়বে এবং মানবিক সংকট দেখা দেবে। তিনি অবিলম্বে এই ভয়াবহ সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এ নিয়ে কোনো যৌথ বিবৃতি দিতে পারেনি। গাজায় ইসরাইলি নৃশংসতায় পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন আছে বলে অভিযোগ আছে। এই শক্তিতে পূর্ণোদ্যমে হামলা চলবে এবং এর শেষ হতে সময় লাগবে বলে দম্ভভরে উচ্চারণ করেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি চাপে থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাকে সমর্থন দেয়ার জন্য।
শুক্রবার থেকে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য ইসরাইলে অবস্থান করছেন জো বাইডেনের দূত হাদি আমর। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল এবং আরো অনেক দেশ হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে, তাই হাদি আমর যুদ্ধরত দু’পক্ষের একটি পক্ষের সঙ্গে কোনো বৈঠক করবেন না। আরো পরিষ্কার করে বলা যায়, তিনি ফিলিস্তিন বা হামাসের সঙ্গে কোনো আলোচনা করবেন না। এক্ষেত্রে হামাসের যদি কোনো বার্তা থাকে তাহলে তা মিশর অথবা কাতারের মতো মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে পৌঁছাতে হবে। স্থানীয় রিপোর্ট অনুযায়ী, কয়েক দিন ধরেই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়ে আসছে হামাস। তবে সে প্রস্তাব গ্রহণ করা না করার দায় ইসরাইলের। দৃশ্যত তারা এখন হামাসকে ভেঙে দেয়ার জন্য হামলা অব্যাহত রেখেছে। ইসরাইল এখন সেই কাজটিই করতে চায়, যতক্ষণ আন্তর্জাতিক মাধ্যমে বেসামরিক লোকজনের মৃত্যু নিয়ে সোচ্চার, প্রতিবাদ ও চাপ বৃদ্ধি না পায়। গাজায় মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি না হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status