প্রথম পাতা
জামিন পেলেন তৃণমূল কংগ্রেসের ৩ নেতা ও প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়
দিনভর নাটকীয়তা
জয়ন্ত চক্রবর্তী, কলকাতা
১৮ মে ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:৩০ অপরাহ্ন
তৃণমূল কংগ্রেসের দুই মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বিধায়ক মদন মিত্রকে জামিন দিলো ব্যাঙ্কশাল আদালত। ছ’টা পঞ্চান্ন মিনিটে রায় শোনান বিচারপতি অনুপম মুখোপাধ্যায়। সিবিআই কার্যত আদালতে দশ গোল খেলো তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে। নারদ কাণ্ডে স্টিং অপারেশনে টাকা নেয়ার অভিযোগে সোমবার ভোরে গ্রেপ্তার হলেন চার হেভিওয়েট নেতা। সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়। এর মধ্যে ফিরহাদ ও সুব্রত মমতা মন্ত্রিসভার সদস্য। মদন মিত্র বিধায়ক। শোভন চট্টোপাধ্যায় কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। সকালে প্রত্যেকের বাড়িতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিশেষ টিম গিয়ে আটক করে এদের। নিয়ে যাওয়া হয় মধ্য কলকাতার নিজাম প্যালেসে। সেখানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরই বিক্ষোভে উত্তাল হয় কলকাতা। চেতলায় পথ অবরোধ, নিজাম প্যালেসের সামনে জনরোষ, গেট ভাঙার চেষ্টা, বাদ-প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে কলকাতা। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ নিজাম প্যালেসে পৌঁছে পনেরো তলায় সিবিআই’র এন্টি করাপশন বিভাগের লিফটের সামনে বসে পড়ে বলেন-আমাকে গ্রেপ্তার করুন। কারণ নেতাদের গ্রেপ্তার বেআইনি। সিআরপিসি’র ৪১ ধারা অনুযায়ী অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আগে নোটিশ দেয়া হয়নি। নিজাম প্যালেসের সামনে তখন জনতা উত্তাল। টায়ার জ্বলছে, চলছে গেট ভাঙার চেষ্টা। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী লাঠি চালায়। রাজভবন অবরোধ করার চেষ্টা করেন তৃণমূল কর্মীরা। গেটের উপর উঠে পড়েন অনেকে। ক্রুদ্ধ রাজ্যপাল তখন একের পর এক টুইট করছেন। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে। এর দায় রাজ্যকে নিতে হবে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সিবিআই সিদ্ধান্ত নেয় ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে অভিযুক্তদের পেশ করার। নারদ মামলায় ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে চার্জশিট পেশ করা হয়। সিবিআইএ’র আইনজীবীরা গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের ১৪ দিনের জেল হেফাজত চাওয়া হয়। বলা হয় যে, অভিযুক্তরা প্রভাবশালী। বাইরে থাকলে এরা সাক্ষীদের প্রভাবিত করবেন। প্রমাণ লোপাট করতে পারেন। তাই, তাদের ১৪ দিনের জেল হেফাজত চাই। অভিযুক্তদের পক্ষে তৃণমূলের আইনজীবী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সওয়াল করেন যে, চার্জশিট দাখিল হয়ে গেছে, এরপর এদের গ্রেপ্তারের কোনো প্রয়োজন নেই। তাছাড়া, এদের গ্রেপ্তারে রাজ্যপাল যে অনুমোদন দিয়েছেন তা বেআইনি। স্পিকারের অনুমতি নেয়া হয়নি। বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গ্রেপ্তারের ব্যাপারে তাকে কিছু জানানো হয়নি। তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ, সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়, সৌগত রায় বলেন- গ্রেপ্তার কেন হলেন না মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী, শঙ্কুদেব পণ্ডারা। তাদেরও টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল। বিজেপি তাদের ভোটে পরাজয় মানতে পারছে না বলে তারা প্রতিহিংসার মানসিকতা নিয়েছে। এদিন, বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতির জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন।