বাংলারজমিন

শেরপুরে দুস্থদের ভিজিএফ’র টাকা হরিলুট

শফিকুল ইসলাম শফিক, শেরপুর (বগুড়া) থেকে

১৮ মে ২০২১, মঙ্গলবার, ৮:৩০ অপরাহ্ন

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরিব অসহায়দের মাঝে বিতরণের জন্য সরকারি বরাদ্দের ভিজিএফ’র নগদ অর্থ শেরপুরে ভুয়া মাস্টার রোলের মাধ্যমে হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। ঢাকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এবং শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আদেশে ভিজিএফ-এর নগদ টাকা বিভাজন করা হয়। এরপর গ্রামীণ জনপদের অতিদরিদ্র দুস্থ-অসহায় পরিবারকে ঈদ উৎসব উপলক্ষে আর্থিক সহায়তা হিসেবে চালের পরিবর্তে এ বছর সরকারিভাবে জনপ্রতি ৪৫০ টাকা হারে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। শেরপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের জন্য ভিজিএফ-এর জন্য মোট ১৭ হাজার ৩১২ কার্ডের বিপরীতে ৭৭ লাখ ৯০ হাজার ৪০০ টাকা নগদ বরাদ্দ দেয়া হয়।
ভিজিএফ বিতরণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ মহিলাদের অগ্রাধিকার দিয়ে ওই টাকা এক সপ্তাহের মধ্যে বিতরণ করে তদারকি কর্মকর্তার স্বাক্ষরসহ  প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। এজন্য শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম গত ২২শে এপ্রিল তার দপ্তর থেকে স্বাক্ষরিত সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের পত্র প্রেরণ করেন। এদিকে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিব এবং মেম্বারগণ অহেতুক কালক্ষেপণ করে ঈদুল ফিতরের আগে সরকারি অফিস বন্ধ হওয়ার পর তড়িঘড়ি করে বিতরণের জন্য মাস্টাররোল প্রস্তুত করেন। এ মাস্টাররোলে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের নাম বাদ দিয়ে মৃত ও সচ্ছল ব্যক্তি, ব্যবসায়ীসহ সমাজের প্রতিষ্ঠিতদের নাম তালিকাভুক্ত করে হাত-পায়ের আঙ্গুলের টিপসই বসিয়ে সরকারি লাখ লাখ টাকা ভুয়া মাস্টাররোলের মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। গত ১২ই মে শেরপুর উপজেলার ১০নং শাহবন্দেগী ইউনিয়নের শহরতলীর কাঁঠাল তলায় ভাড়া করা অফিস গোডাউনের ভেতরে সকাল ১০টা থেকে ভিজিএফ-এর টাকা বিতরণের ঘোষণা দেয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে বিকাল ৩টার পর থেকে শুরু হয় বিতরণ কার্যক্রম। এরপর প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে বিশেষ কয়েকজন সুবিধাভোগীকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে শতাধিক মাস্টাররোলের ঘরে টিপসই নিয়ে অন্যদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। এ খবর শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পৌঁছিলে তিনি সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ইউপি সচিব ইকবাল হোসেন দুলাল জানান, মোট বরাদ্দকৃত কার্ডের মাঝে শতকরা ৩০টি হারে সরকারদলীয় নেতারা ৫ হাজার ১৯৩টি কার্ডের ২৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকা দলীয় কর্মীদের মাঝে বিতরণের জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে কেটে নেন। এরপর অবশিষ্ট কার্ডের সংখ্যা চেয়ারম্যান-মেম্ব্বারগণ তালিকা প্রস্তুত করে বিতরণ করেন। সেখানেও আছে আত্মীয়করণ। ফলে অসংখ্য দুস্থ এবং অসহায় মানুষের নাম ভিজিএফ-এর সুবিধা থেকে বাদ পড়ে যায়। দলীয়ভাবে দেয়া কার্ডের সুবিধা কে বা কারা পায় সেটা কেউ জানেন না। শেরপুরের শেরুয়া বটতলা শাহবন্দেগী ইউপি পরিষদে গত মঙ্গলবার ও বুধবার দিনভর ঘুরেও নিজের নামের অর্থ পাননি শত শত দুস্থ-অসহায় মানুষ। এদিকে শেরপুরের খন্দকার টোলা গ্রামের মনোয়ারা বিবি, আছমা বিবি, নেছাতন বেওয়া, গোলাপী খাতুন, আয়েশা বেগম, সাজেদা বেওয়া, হাসনা বেওয়া, মনোয়ারা বেওয়াসহ শত শত সুবিধাভোগীদের নামের টাকা ভুয়া টিপসই দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
অপরদিকে শেরপুর পৌরসভার ১নং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর গত সোমবার পৌরসভার মেয়রের কাছে কান্নাকাটি করে অভিযোগ করেন, ২নং সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ববি ভুয়া মাস্টাররোল জমা দিয়ে গরিবের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সেইসঙ্গে পৌরসভার ৯নং সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফিরোজ আহম্মেদ জুয়েল প্রকাশ্যে মাস্টাররোলে টিপসই নিয়ে সরকারি টাকা গরিবদের হাতে দেননি। এ বিষয়ে জানতে ফিরোজ আহম্মেদ জুয়েল মোবাইলে একাধিকবার ফোন করে তাকে পাওয়া যায়নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status