বাংলারজমিন

কর্মহীন শ্রমিকদের মানবেতর জীবনযাপন

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

১৮ মে ২০২১, মঙ্গলবার, ৮:১০ অপরাহ্ন

ঈদের আগের দিন পরিচিত একজনের দেয়া সেমাই চিনিতে ঈদ হয়েছে খুলনার ক্রিসেন্ট জুটমিলের এক বদলি শ্রমিক মো. আনোয়ার হোসেনের। দুই সন্তান আর মাসহ তাদের পরিবার। আয় করেন তিনি একা। বিগত ৯ মাস ধরে বেকার। পিতাও মিলে চাকরি করতেন। মারা গেছেন আগেই। সরকারি সাহায্যের মধ্যে তিনি একবার ৭ কেজি চাল ও একশ’ টাকা পেয়েছেন।
মিলের কাছে পাওনা টাকা পেলে ব্যবসা করার চিন্তা করছেন স্টার জুট মিলের শ্রমিক হামজা গাজী। তিনি ছিলেন মেকানিক্যাল বিভাগের বদলি শ্রমিক। তার পাওনা আছে পৌণে ৪ লাখ টাকা। ছেলে-মেয়েকে নতুন জামা কাপড়তো দূরের কথা তার সংসারে ঈদের দিনও সেমাই রান্না হয়নি বলে জানান।
প্ল্যাটিনামের পিপিয়ারিং বিভাগের বদলি শ্রমিক ছিলেন মো. বুলু। মিল বন্ধের পর দৈনিক ভিত্তিক মজুরি করার পাশাপাশি রংয়ের কাজও করেন। কিন্তু দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে কাজও নেই। বাসাভাড়া দুইমাসের বকেয়া পড়েছে। মিলের কাছে তার পাওনা আছে পৌনে দু’লাখ টাকা।
একই মিলের বদলি শ্রমিক ছিলেন আব্দুল মান্নান। বিগত ৩ বছর ধরে তিনি অসুস্থ। প্যারালাইসিসে ভুগছেন। বড় ছেলেও প্ল্যাটিনামের তাঁত বিভাগে বদলি শ্রমিক ছিলেন। ছোট ছেলেটা একটি মুদি দোকানে কাজ করে। ছেলেরা ধরে এনে প্ল্যাটিনামের ২নং নম্বর গেটে বসিয়ে দিয়ে যান আর তিনি সেখানে বসে সারাদিন বাদাম বিক্রি করেন। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বিকাশে ২৫শ’ টাকা পেয়েছেন তিনি। এছাড়া শ্রম অধিদপ্তরের দেয়া ৪/৫ কেজি চাল ও অর্ধেক মুরগি দেয়া হয়েছিল একবার। এর বাইরে আর কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাননি। তার সংসারেও এবার ঈদে কোনো নতুন কাপড় কেনা হয়নি। জানা গেছে, ২০২০ সালের জুলাই মাসে দেশের ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের ফলে সারা দেশের ন্যায় খুলনাঞ্চলের পাটকল শ্রমিকরাও বেকার হয়ে পড়েন। ইতিমধ্যে স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ শুরু হলেও বদলি ও দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিকদের পাওনার বিষয়টি ঝুলে আছে। তাদের পাওনার ব্যাপারে বিজেএমসির সম্মতি হয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। লকডাউনের কারণে এখনো সেটি সিদ্ধান্তহীন। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে মজুরি কমিশন ঘোষণা হওয়ায় সেই থেকে মিল বন্ধের আগ পর্যন্ত তাদের বর্ধিত হারের মজুরি যেমন পাওনা রয়েছে তেমনি ২০১৯ সালের ৬ সপ্তাহের পাওনা বাবদ ২৫টি মিলের বদলি শ্রমিকদের বকেয়ার পরিমাণ প্রায় পৌণে ৪শ’ কোটি টাকা বলেও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
বদলি শ্রমিকদের সাবেক নেতা এবং বন্ধ হওয়া মিলের স্থায়ী শ্রমিক মো. নূর ইসলাম বলেন, শিল্পাঞ্চলে বর্তমানে হতদরিদ্র বা অভাবী লোকদের তালিকা করলে আগেই আসবে পাটকলের বদলি শ্রমিকদের নাম। কিন্তু তাদের কথা কেউ মনে করছে না। এটি অনেকটা অমানবিক বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বদলি শ্রমিকদের সংগঠন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের বদলি/দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিক কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ খুলনা-যশোর আঞ্চলিক কমিটির আহ্বায়ক মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, সারা দেশের ২৫টি পাটকলের বদলি শ্রমিকদের প্রায় পৌণে চারশ’ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। যা পরিশোধ না করায় কর্মহীন শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় শ্রম পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, পাটকল বন্ধের পর স্থায়ী শ্রমিকদের মধ্যে যারা অবসরে গেছেন এবং অবসান দেয়া হয়েছে তাদের পাওনা পরিশোধ কার্যক্রম চলছে। বদলি শ্রমিকদের বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদনের পরই পাওনা দেয়া শুরু হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status