প্রথম পাতা

বিশেষ সম্পাদকীয়

আল জাজিরা ও এপি’র পাশে মানবজমিন

১৭ মে ২০২১, সোমবার, ৯:১২ অপরাহ্ন

আক্রান্ত মিডিয়া। আক্রান্ত আল জাজিরা, এপি। কী অবলীলায় একটি মিডিয়া ভবন গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে তার সাক্ষী পুরো দুনিয়া। ঘটনাটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে আল জাজিরা। কয়েকটি মুহূর্ত। বহুতল ভবনটি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে মিশে গেল মাটিতে। যেন একটি প্রতীকী দৃশ্য। বাকস্বাধীনতা আর গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ধুলায় মিশিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা। মেসেজ  লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার। তোমরা চুপ হয়ে যাও।
১১ বছর ধরে ভবনটিতে অফিস করতেন আল-কাহলাউত। গাজায় ইসরাইলি বর্বরতার খবর দিয়ে এরইমধ্যে বিশ্বব্যাপী এক পরিচিত মুখ। আল জাজিরার এই সংবাদদাতা গতকাল বিবরণ দিচ্ছিলেন তার দীর্ঘ দিনের স্মৃতি বিজড়িত অফিসটি কীভাবে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। তিনি বলেন, এই ভবন থেকে আমি অনেক খবর প্রচার করেছি। এখানে সহকর্মীদের সঙ্গে আমাদের অনেক সুখ-স্মৃতি রয়েছে। কিন্তু মাত্র দুই সেকেন্ডে এটিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে।
ক’দিন ধরেই অশান্ত গাজা। আকাশে ইসরাইলি বোমারু বিমানগুলো উড়ছে। মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্রের হানা। মারা যাচ্ছে মানুষ। নারী-শিশু রেহাই মিলছে না কারোরই। ঈদের নতুন জামা পরে ঘুমিয়েছিল শিশুগুলো। পরক্ষণেই মিলেছে তাদের লাশ। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার হয়েছে পাঁচ মাস বয়সী একটি শিশু। জীবিত। কিন্তু তার পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। বাঁচার জন্য কী করছেন তারা? দুটি মাত্র কৌশল। পরিবারের সবাই এক রুমে ঘুমাচ্ছেন। যেন মরলে সবাই একসঙ্গেই মরেন। আবার কেউ কেউ আলাদা আলাদা রুমে ঘুমাচ্ছেন। পরিবারের কেউ একজন বেঁচে থাক। দাফনটা যেন ভালোমতো হয়। ক’দিনে এটাই গাজার কাহিনী।
এই বাস্তবতার খবরই দুনিয়ার সামনে তুলে ধরছিল আল জাজিরা। পশ্চিমা মিডিয়া বরাবরই ফিলিস্তিন সংকটের খবর প্রচার করতে গিয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। হামাস তাদের চোখে সন্ত্রাসী। কারণ তারা রকেট ছোড়ে। কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যারা মানুষ হত্যা করে তাদের ব্যাপারে তারা নীরব। তবুও মিডিয়া যতটুকু সরব সেটাও যেন পছন্দ নয় ইসরাইলের। যে কারণে এভাবে প্রকাশ্যে মিডিয়া ভবন গুঁড়িয়ে দেয়া হলো। ১০ মিনিট বাড়তি সময় চেয়েছিলেন ভবনের মালিক। তাতেও সাড়া দেয়নি ইসরাইলি বাহিনী। ইসরাইলের পক্ষ থেকে ওই ভবনে হামাসের কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ করা হয়েছে। যা একবাক্যে নাকচ করে দিয়েছেন ভবনটির মালিক ও গণমাধ্যম কর্তৃপক্ষ। বার্তা সংস্থা এপি এ ব্যাপারে প্রমাণ চেয়েছে ইসরাইলের কাছে। এপি’র প্রেসিডেন্ট গ্যারি প্রুইত এক বিবৃতিতে বলেন, এই ভবনটিতে ১৫ বছর ধরে এপি’র ব্যুরো অফিস। কিন্তু এ সময়ে ভবনটিতে হামাসের কোনো অস্তিত্ব বা সক্রিয়তা আমরা দেখিনি। এ ব্যাপারে ইসরাইলকে প্রমাণ দিতে হবে।
কেন এই হামলা? আগেই বলেছি, বার্তা পরিষ্কার। গাজায় বর্বরতার ছবি যেন আড়ালে চলে যায়। মিডিয়া যেন চুপ হয়ে যায়। আল জাজিরার জেরুজালেম ব্যুরো প্রধান অবশ্য সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘এটা কখনো সম্ভব নয়। আমরা চুপ করবো না।’
আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় গাজায় মিডিয়া ভবনে এই হামলার নিন্দা জানাই। আমরা দাবি করছি, পুরো ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্তের। দোষীদের যেন বিচারের আওতায় আনা হয়। আর এই কঠিন সময়ে মানবজমিন সহমর্মিতা ও সমর্থন প্রকাশ করছে আল জাজিরা ও এপিসহ আক্রান্ত গণমাধ্যমের প্রতি। সত্যের জন্য এ লড়াই ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। আপনাদের এই ত্যাগ নিশ্চয়ই মানব জাতি স্মরণ করবে, বহুদিন। সত্যের জন্য লড়াই চলবে। বোমারু বিমান যতোই গর্জাক না কেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status