প্রথম পাতা

হাস্যকর

স্টাফ রিপোর্টার

১৭ মে ২০২১, সোমবার, ৯:১১ অপরাহ্ন

সরকারি বিধিনিষেধ। বন্ধ ছিল দূরপাল্লার যান। কিন্তু মানুষের বাড়ি যাওয়া ঠেকানো যায়নি। অন্তত ৬০ লাখের বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। ফেরিঘাটে দেখা গেছে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। ভিড়ের চাপে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এখন আবার শুরু হয়েছে ঢাকায় ফেরার লড়াই। গতকালও ফেরিঘাটগুলোতে দেখা গেছে ভিড়। কোথাও কোথাও দূরপাল্লার বাসও চলতে দেখা গেছে। এই যখন অবস্থা তখন যারা ঢাকা ছেড়েছেন তাদের ১৪ দিন পরে ফেরার অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল রোববার দুপুরে ভার্চ্যুয়াল ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম এ অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, সরকার পরামর্শ দিয়েছিল আমরা যেন এবারের ঈদে নিজ নিজ অবস্থান  ছেড়ে বাইরে চলে না যাই। কিন্তু আমরা দেখেছি, বড় সংখ্যক মানুষ এই পরামর্শ উপেক্ষা করেও নানাভাবে ঘরে ফেরার চেষ্টা করেছেন। সেখানে কিছু মর্মান্তিক দৃশ্যও দেখেছি। যারা বাড়িতে গেছেন, এখনো অফিস  খোলেনি। স্কুল-কলেজে দেরি করে ফিরলেও কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, তারা অন্তত সাত থেকে ১৪ দিন দেরি করে ফিরে আসবেন। তিনি আরো বলেন, যাদের ইতিমধ্যে উপসর্গ দেখা গেছে, তারা নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা জেলা সদর হাসপাতালে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা অবশ্যই করিয়ে নেবেন। ফিরে আসার সময় শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে। ভারত থেকে যারা আসছেন তাদের কাউকে কাউকে আমরা দেখেছি আইন অমান্য করে পালিয়ে যেতে। তারা এই কাজটি যেন না করেন। অন্যের জীবনকে যেন ঝুঁকির মুখে না ফেলেন। জেনেশুনে আমরা যেন নিজের দেশের ক্ষতির কারণ না হই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিধিনিষেধ বহাল থাকলেও মানুষ বাড়ি গেছেন। সেক্ষেত্রে ফেরি চলেছে। বাস, ট্রেন, লঞ্চ ছাড়া অন্য সব যানবাহনই চলেছে। উল্টো মানুষ বাস না পেয়ে গাদাগাদি করে বাড়ি গেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই ছিল না। এখন ফেরার ক্ষেত্রেও একই দৃশ্যই দেখা যাবে। শুধু অনুরোধ না করে মানুষ যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে, অন্তত মাস্ক পরে ফেরেন সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
এবার ফেরার লড়াই: ঈদের ছুটি শেষ। এবার শুরু হয়েছে ঢাকায় ফেরার লড়াই। নানা উপায়ে কর্মস্থলে ফিরছেন কর্মজীবী মানুষ। কয়েক দফায় গাড়ি বদলিয়ে গাদাগাদি করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানীতে আসছেন তারা। গুনতে হচ্ছে কয়েক গুণ বাড়তি ভাড়াও। বাস টার্মিনালগুলোতে বেড়েছে বাড়তি চাপ। লকডাউনে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকার কথা থাকলেও কোথাও কোথাও চলছে এসব বাস। দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে ঢাকামুখী মানুষ নিয়ে দূরপাল্লার বাস আসতে দেখা গেছে। ফেরিঘাটগুলোতে বাড়ছে ঢাকামুখী মানুষের চাপ।  মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, সিএনজি ও অটোরিকশা সহ বিভিন্ন মাধ্যমে ঢাকায় ঢুকছেন তারা। তবে এতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মতো পরিস্থিতি থাকছে না। ঢাকায় ফেরা যাত্রীরা বলছেন, সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হয়েছেন তারা। ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতেও ভোগান্তির সম্মুখীন হয়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর প্রবেশপথ গাবতলী ও আব্দুল্লাহপুরে বেড়েছে মানুষের উপস্থিতি। গতকাল থেকে দূরপাল্লার বাস ঢাকার ভেতরে ঢুকতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বাস ঢাকার সীমানায় এসে যাত্রী নামিয়ে দিতে দেখা গেছে। এদিকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যেসব কর্মস্থল চালু থাকার কথা, ঈদের ছুটি শেষে সেগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হওয়ায় রাজধানীতে ধীরে ধীরে ফিরতে শুরু করেছে প্রাণচাঞ্চল্যতা।
এদিকে রোববার সকালে রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, বগুড়া, রংপুর থেকে দূরপাল্লার বেশকিছু বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। তবে সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল এলাকায় পৌঁছলে বাসগুলোকে আটকে দেয় পুলিশ। দূরপাল্লার বাস ঠেকাতে গাবতলী প্রবেশমুখে ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। বাস ঠেকালেও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করেছে। এতে গাবতলী, আমিনবাজার, হেমায়েতপুরে এলাকায় সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। এদিকে গতকাল সকাল থেকেই শিবচরে বাংলাবাজার ও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চাপ লক্ষ্য করা গেছে। যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকায় ঘাটের দুই পাশেই আটকে ছিল কয়েক শতাধিক ছোট-বড় যানবাহন। যানবাহনের তুলনায় যাত্রীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে মাহেন্দ্র, সিএনজি, মাইক্রোবাস, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেলে করে বাংলাবাজার ঘাটে আসছে যাত্রীরা। পরে ফেরিতে গাদাগাদি করে পদ্মা পার হচ্ছেন তারা। এদিকে দৌলতদিয়া ও শিমুলিয়া ঘাট থেকে মোটরবাইক ও ভাড়া কার মাইক্রোবাস ও অটোরিকশায় সরাসরি ঢাকায় ঢুকছে মানুষ।
মেহেরপুর থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ঢাকায় ফেরা এক ব্যক্তি বলেন, ফেরিতে চাপ কিছুটা কম থাকলেও, সড়কপথে ঢাকামুখী মানুষের চাপ বেড়েছে। ফেরিঘাট থেকে নামার পর ঢাকামুখী যাত্রীরা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন দীর্ঘক্ষণ। অনেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে ঢাকায় আসছেন। সেখানে মোটরসাইকেল, সিএনজি ও মাইক্রোবাসগুলো চুক্তিভিত্তিক ভাড়া দেয়া হচ্ছে। মোটরসাইকেলে ৩ জন করে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। এতে কেউ মানছে না স্বাস্থ্যবিধি। অনেকের মুখেও নেই মাস্ক। খুলনা থেকে আসা এক যাত্রী জানান, দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল না করায় ঢাকায় ফিরতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন মাধ্যমে বেশি ভাড়া দিয়ে ঢাকায় আসতে হয়েছে। এতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিটি যানবাহনে মানুষের চাপ বেশি। এতে দুর্ভোগ ভোগান্তির শিকার সাধারণ যাত্রীরা।
বাংলাবাজার ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) মো. আশিকুর রহমান বলেন, ঈদ ছুটি শেষে যাত্রীরা কর্মস্থলে যোগ দিতে ঢাকামুখী হচ্ছে। সকাল থেকে ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। ফেরিতে যানবাহনের তুলনায় যাত্রীই বেশি।
পাবনা থেকে আসা মোস্তাফিজুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। ৩ দিনের ছুটি পেয়ে ঈদের আগের দিন গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। ঈদ শেষে রোববার সকালে চাকরিতে জয়েন করি। আন্তঃজেলার বাসে ঢাকায় আসতে চাইলে যমুনা ব্রিজে আটকে দেয়া হয়েছে। এর পর ভেঙে ভেঙে ঢাকায় এসেছি।
এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ মোসাদ্দেক হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেকেই তা মানছে না। আমরা চেষ্টা করছি, তা বন্ধ করার কিন্তু যাত্রীদের চাপে তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আগামীকাল (আজ) থেকে যে নির্দেশনা আসবে তা কঠোরভাবে মানা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status