শেষের পাতা

নতুন সম্ভাবনা কারা পণ্য

আল-আমিন

১৭ মে ২০২১, সোমবার, ৯:০০ অপরাহ্ন

কারাগার কেবল বন্দিশালা নয়, সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তুলতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। সংশোধনের পাশাপাশি কয়েদিদের দেয়া হচ্ছে উপার্জনমুখী প্রশিক্ষণ। যাতে তারা মুক্ত হয়ে কারা অভ্যন্তর থেকে নেয়া প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জন করে পরিবারের ভরণ-পোষণ করতে পারে এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে। দেশের প্রায় ২৮টি কারাগারের কয়েদিরা প্রায় ৩৮টি পণ্য উৎপাদন করছে। কারাগারে থেকেই তারা মোটা অঙ্কের টাকা আয় করছে।
এগুলো বিক্রির লভ্যাংশের ৫০ ভাগ বন্দিদের হিসাবে জমা হয়। তাদের জমা হওয়া অর্থ থাকছে কারা ফান্ডে। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর তারা ওই টাকা নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারবেন। কোনো কোনো কয়েদি আবার মাসিক বেতন পরিবারের কাছে হস্তান্তর করছেন। হাজার হাজার বন্দির হাতে তৈরি হওয়া এই কারা পণ্য সৃষ্টি হয়েছে নতুন সম্ভাবনার। কর্তৃপক্ষ বলছে, এ কার্যক্রমের পরিধি আরো বাড়ানো হবে। এতে উৎপাদিত পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে। এতে যোগ হবে দেশের অর্থনীতিতে বিদেশি রেমিট্যান্স।   
এ বিষয়ে কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন মানবজমিনকে জানান, ‘কারাগারের কয়েদিরা ৩৮টি পণ্য উৎপাদনে নিযুক্ত রয়েছে।’  
কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিচার কার্য শেষ হয়ে যাদের মামলার রায় হয়ে গেছে তারাই কয়েদি বন্দি হিসেবে গণ্য হয়। সাজা হওয়া এইসব বন্দির জেলখানায় নানা রকম কাজ করতে দেয়া হয়। শারীরিক যোগ্যতা এবং কাজের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী তাদের কাজ করতে দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, কয়েদি পুরুষ ও মহিলারা তাঁত, ফাস্ট ফুডসহ বিভিন্ন রান্না, সেলাই, ইলেকট্রিক অ্যান্ড হাউজ ওয়্যারিং, লন্ড্রি, বেকারি, নার্সারি, বিউটি পার্লার ও কুটির শিল্পের বিভিন্ন কাজ শেখানো হচ্ছে। এ ছাড়াও কয়েদিরা কাঠ, বেত, বাঁশ, সুতা, তাঁত ও বিভিন্ন ধরনের উপকরণ দিয়ে তৈরি করছে ছোট, বড় ও মাঝারি মোড়া, চেয়ার, ঝুড়ি, বাঁশের দোলনা, কলমদানি ও বেতের ঝুড়িসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক ব্যবহারিক সামগ্রী। কোনো কোনো কয়েদিকে নানা রকম হস্তশিল্প কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের ২৮টি কারাগারে এ কার্যক্রম চলছে। কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কেন্দ্রীয় কারাগারের পার্ট কাশিমপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ ১০টি কারাগারের সামনে বন্দিদের তৈরি পণ্যের শো-রুম স্থাপন করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। ঢাকায়ও আরো একাধিক শো-রুম করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকাসহ আরো কয়েকটি কারাগারে ছোট ছোট গার্মেন্টও আছে।
ইতিমধ্যে কারাগারের কয়েদিরা জামদানি শাড়ি তৈরি করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সেটি বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করছে কারা কর্তৃপক্ষ। তাদের জামদানি শাড়ির সাড়া পড়েছে বিভিন্ন মহলে। কারাগারে যেসব বন্দি পণ্য তৈরিতে দক্ষ হয়ে উঠছে তাদের দিয়ে বিভিন্ন কারাগারের বন্দিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। বন্দিদের মধ্যে অনেক উপকরণ বিভিন্ন সরকারি ও  বেসরকারি সংস্থায় প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়াও প্রশিক্ষিত বন্দিদের সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের সার্টিফিকেট ও উপকরণ দিচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর কারাগারকে সংশোধনাগারে পরিণত করার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে। আগে কয়েদিরা বিভিন্ন মামলায় সাজা হওয়ার পর জেলখানায় অলস সময় কাটাতেন। এতে তাদের মন ও মানসিকতায় নানারকম অস্থিরতা বিরাজ করতো। কারা কর্তৃপক্ষের এ উদ্যোগের ফলে কয়েদিদের মধ্যে অস্থিরতা কমে এসেছে। তারা কারাগারের মধ্যে থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কারাগারের বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছেন।
সূত্র জানায়, কারা কর্তৃপক্ষ বর্তমানে ৩৮টি বিষয়ে কয়েদিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এর পরিধি আরো বাড়ানো হবে। যাতে কয়েদিরা নিত্য নতুন বিষয় প্রশিক্ষণ নিয়ে অন্যান্য সেক্টরে উৎপাদনে ভূমিকা পালন করতে পারে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status