বিশ্বজমিন

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন

যুক্তরাষ্ট্রের হাতে বিলি করার মতো টিকা নেই

মানবজমিন ডেস্ক

১৬ মে ২০২১, রবিবার, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন

করোনা মহামারি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের হাতে ৬ কোটি অতিরিক্ত টিকা আছে। এর মধ্যে আছে মডার্নার অব্যবহৃত কমপক্ষে ২ কোটি ৭০ লাখ ডোজ। ফাইজারের ৩ কোটি ৫০ লাখ ডোজ। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-এর মতে এই পরিমাণ টিকা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। কিন্তু টিকা সঙ্কটে ভারতসহ যেসব দেশ মারাত্মকভাবে ভুগছে, এসব টিকা তাদেরকে দিয়ে দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ব্লুমবার্গের এক খবরে বলা হয়েছে, হতে পারে অতিরিক্ত অনেক টিকা বাক্সবন্দি আছে। কিন্তু তা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের দেশগুলোকে পাঠানো বাস্তবেই অধিক জটিল ব্যাপার। কারণ, মডার্নার এই যে টিকা তা কোনো একক গুদামে সংরক্ষণ করা নেই-  যে চাইলেই তা পাঠিয়ে দেয়া যাবে। বেশির ভাগ অব্যবহৃত টিকা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষিপ্তভাবে হাজার হাজার স্থানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সেসব স্থানে এগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন স্থাপনা, স্থানীয় ফার্মাসি, টিকাদান কেন্দ্র এবং অন্যান্য সব স্থান। এসব স্থান থেকে টিকাগুলো নতুন করে সংগ্রহ করে তা দেশের বাইরে পাঠানোর ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণহীন বা আনম্যানেজেবল এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে যে প্রচেষ্টা তা খর্ব হতে পারে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন করা ফাইজারের কিছু টিকা বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া সামনের সপ্তাহ বা মাসগুলোতে জনসন অ্যান্ড জনসন (জেঅ্যান্ডজে) এবং এস্ট্রাজেনেকার অব্যবহৃত কয়েক লাখ ডোজ বিদেশে পাঠানো হবে। তবে কবে- এমন কোনো নির্দিষ্ট তারিখ জানা যায়নি।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে টিকার যে বিপুল অব্যবহৃত সম্ভার আছে সেখান থেকে ভারতের মতো প্রচণ্ডসঙ্কটে থাকা দেশগুলোকে টিকা দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। সান ফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার চিকিৎসক ও মেডিসিনের প্রফেসর মোনিকা গান্ধী বলেছেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রে চাহিদার অতিরিক্ত টিকা সরবরাহ দেখতে পাচ্ছি। আপনারাও জানেন এখানে অতিরিক্ত টিকা আছে। তিনি তার কমপক্ষে দু’ডজন সহকর্মীর সঙ্গে একটি যৌথ চিঠিতে মডার্নার এসব টিকা ভারতে পাঠানোর জন্য মার্কিন প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে এখন করোনার টিকাদান ধীরগতির। জমা করা হয়েছে প্রচুর টিকা। তবে স্বাস্থ্য, নৈতিকতা ও কূটনৈতিক দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন এক ক্রসরোডে। কারণ, অন্য দেশগুলোর তুলনায় অধিকার পরিমাণে টিকা রপ্তানি করছে চীন। এর মধ্য দিয়ে তারা আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উন্নত করছে। প্রভাব বাড়াচ্ছে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের কি এক সপ্তাহের মধ্যে উচিত হবে কিনা লাখ লাখ এমআরএনএ টিকা কিনে তা বিতরণ করা ওই সব মানুষের কাছে- যাদের টিকা নেয়ার কোনো হুড়োহুড়ি নেই বা ঝুঁকি খুবই কম? অথবা তারা কি তাদের অর্ডার স্থগিত করবে, যাতে প্রচ- প্রয়োজন এমন দেশগুলোর জন্য টিকা উৎপাদন করতে পারে প্রস্তুতকারকরা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন এত তাড়াতাড়ি তার নীতির পরিবর্তন করবে বলে মনে হয় না। হোয়াইট হাউজের কোভিড রেসপন্স টিমের সিনিয়র উপদেষ্টা অ্যান্ডি স্লাভিট বলেছেন, ৪ঠা জুলাইয়ের আগেই শতকরা ৭০ ভাগ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত যেসব টিকা ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে তার মধ্যে দুই ডোজের এমআরএনএ টিকা সর্বোচ্চ কার্যকারিতা প্রদর্শন করেছে। তবে এর বেশির ভাগই সংরক্ষণ এবং শিপমেন্টে পাঠানো সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাথমিকভাবে এসব টিকা কিনে নিয়েছে ধনী দেশগুলো। মার্কিনিরা কোন টিকা নিতে চান তা বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কারণ, তাদের স্টকে পর্যাপ্ত টিকা আছে। এরই মধ্যে ১২ থেকে ১৫ বছর বয়স্ক বাচ্চাদের ফাইজারের টিকা দেয়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আরো কম বয়সী বাচ্চাদের এই টিকা দেয়ার অনুমতি দেয়া হবে সহসাই। কিন্তু এই বয়সীরা কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার তুলনামূলক অনেক কম ঝুঁকিতে। রবার্ট উড জনসন ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিচার্ড বেসের বলেছেন, প্রতিটি দেশই তার নিজেকে সুরক্ষিত রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। এ জন্যই মার্কিনিরা তাদের সন্তানদের অড়গ্রাধিকার দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রকৃতপক্ষে কি পরিমাণ টিকা অতিরিক্ত আছে তা অনুধাবন করতে প্রয়োজন সরবরাহ চেইন প্রকৃতপক্ষে কিভাবে কাজ করছে তা জানা। মডার্নার শিপমেন্ট তদারকি করে কেন্দ্রীয় সরকার। কোম্পানি তাদের টিকা হস্তান্তরের পর চলে যায় ম্যাকেসন করপোরেশনের কাছে। তারাই এগুলো বিতরণ করে। প্রথমে তারা এগুলো সংরক্ষণ করে এবং টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে পাঠিয়ে দেয়।
সিডিসির মতে, ১২ই এপ্রিল নাগাদ মডার্নার কমপক্ষে ১১ কোটি ৭০ লাখ টিকা হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রতি মাসে তারা ৪ থেকে ৫ কোটি ডোজ উৎপাদন করছে। এর অর্থ হলো তারা এ সপ্তাহে সরবরাহ করেছে প্রায় ১৫ কোটি ৭০ লাখ থেকে ১৬ কোটি ৭০ লাখ ডোজ পর্যন্ত। এর মধ্যে প্রায় ১৪ কোটি ডোজ এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে এবং রাজ্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বাকি এক কোটি ডোজ অর্ডারে অথবা ট্রানজিটে রয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status