অনলাইন

কীভাবে কাটে পুলিশ সদস্যদের ঈদ?

মরিয়ম চম্পা

১৪ মে ২০২১, শুক্রবার, ৯:০৪ অপরাহ্ন

ফাইল ছবি

সকাল সাড়ে দশটা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের বিপরীতে ফুটপাথে বসে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিন পুলিশ সদস্য। পেশায় তারা উপ-পরিদর্শক এবং কনস্টেবল। প্রথমজন গত ১৩ মাস আগে পুলিশে যোগদান করেন। পরের দু’জন কিছুটা সিনিয়র। তারা ঢাকা মেট্রোপলিটনে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দায়িত্বরত আছেন। গত বছরের মতো এবারও থাকতে হবে কর্মস্থলে। চাকরির আগে প্রতিটি ঈদ কাটতো পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এখন কেবলই স্মৃতি। তিন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা হয় মানবজমিন-এর। কথা বলতে গিয়ে আক্ষেপ করে তারা বলেন, পুলিশের কোনো ঈদ নেই। আমাদের যখন ছুটি হয় তখনই ঈদ। ঈদের দিন কীভাবে কাটে জানতে চাইলে জুনিয়র এক পুলিশ সদস্য বলেন, এখন যেমন, ঈদের দিনও একইরকম কাটে আমাদের। পুলিশের আবার ঈদ আছে নাকি? যতবার ছুটিতে যাই ততবার ঈদ। এটাই পুলিশের জীবন। ঈদের দিনের শুরুটা কীভাবে হয়? জানতে চাইলে অপর পুলিশ সদস্য বলেন, খুব সকালে আমাদের ডিউটি চার্ট দেয়া হবে। সেখান থেকে যে যার ডিউটিতে চলে যাবো। ঈদের নামাজ ভাগ্যে থাকলে পড়া হয়। না হলে হবে না। ঈদগাহে ডিউটি থাকলে যদি ব্যাচমেট ভালো হয় তাহলে কখনো কখনো ঈদের নামাজ পড়া যায়। তবে মারামারির আশঙ্কা বা জরুরি কোনো অবস্থা থাকলে তখন আর নামাজ পড়ার সুযোগ থাকে না। তাও অর্ধেক অর্থাৎ চারজন থাকলে দু’জন নামাজ পড়তে পারবে। ঈদের দিন যাদের ডিউটি থাকে তারা ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে কর্মস্থলে চলে যাবে। ঈদের সকালের খাবার প্রসঙ্গে আরেক পুলিশ সদস্য বলেন, যারা মেসে খাবার খায় তাদেরকে ঈদের ফিরনি-সেমাই টাকা দিয়ে ক্রয় করে খেতে হয়। বিনা টাকায় খেতে হলে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে। কারণ, নির্দিষ্ট সময়ের পর আর খাবার দেয়া হয় না। কোনো কারণে যদি গাড়ি না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে বেতন বন্ধ হয়ে যাবে, পানিশমেন্টসহ বিভিন্ন ধরনের ঝক্কি পোহাতে হয়। গত বছরের ঈদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে এই পুলিশ সদস্য বলেন, অনেক কষ্ট হয়েছে ঈদের নামাজ আদায় করতে। এরপরে অফিসে ব্যাচমেটদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়েছি। কারণ, ওরাই আমাদের ভাই-বোন, ওরাই মা-বাবা। আপনারা যেমন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে উদযাপন করেন আমরাও সহকর্মীদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করি। এছাড়া বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলা হয়। গত বছর করোনার কারণে ১৫ দিন ডিউটি করে এক সপ্তাহ বিশ্রামের সুযোগ ছিল। তখন ঈদের দিন এক সপ্তাহ বিশ্রাম নিতে পেরেছিলাম। এ সময় আমার পাশের বেডের সহকর্মীরা ডিউটিতে ছিল। ওই সময়টাতে খুব কষ্ট লাগে। কেন জানেন! পুরো মাস রোজা রেখে ঈদের নামাজ না পড়তে পারাটা অনেক কষ্টের। তাছাড়া, ঈদের দিন ডিউটি থাকলে মনে খুব অভিমান তৈরি হয়। কেন চাকরিতে এলাম? এ ধরনের হাজারো প্রশ্ন থেকে তখন মুঠোফোন বন্ধ রেখে চুপচাপ বসে থাকি। তখন কথা বলার ইচ্ছা থাকলেও দূরে থাকায় ফোন দেয়ার পর পরিবারের সদস্যরা বিশেষ করে মা-বাবারা কেঁদে ফেলেন। তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারি না। গত বছরের ডিসেম্বরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবা মারা যান। এরপর থেকে প্রতিদিন মা’কে ফোন দিয়ে কথা না বললে খুব কাঁদেন। এ বছর ঈদে ছুটির জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু ছুটি হয়নি। রোজার মাঝামাঝি সময়ে মা জানতে চেয়েছিলেন এবার ঈদে বাড়ি আসছিতো? মা’কে বলেছি এবার মা’য়ের সঙ্গে ঈদ করবো। এখন প্রায় প্রতিদিনই মা ফোনে বলেন, কবে বাড়ি আসবি? কিন্তু ঈদের ছুটি হয়নি এটা বলার সাহস পাইনি মা’কে। কারণ, মা যদি জানতে পারেন এবারও তার সঙ্গে ঈদে বাড়িতে থাকতে পারবো না। এটা শুনলে সে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। বাবাকে হারিয়েছি। এখন নতুন করে মা’কে হারাতে চাই না। পাশে থাকা অপর পুলিশ সদস্য বলেন, দেশের কঠিন সময়ে সাধারণ মানুষের সেবা করছি, এটাই বা কম কিসে!
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status