অনলাইন

দেয়া হয় হোম ডেলিভারি

অনলাইনে ছদ্মনামে বিক্রি হচ্ছে মাদক

রুদ্র মিজান

১৪ মে ২০২১, শুক্রবার, ৭:৫০ অপরাহ্ন

করোনাকাল। কোভিড-১৯ এর প্রকোপ বেড়েছে। চলছে লকডাউন। অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রা। থেমে গেছে বর্ণিল নানা উৎসব। কিন্তু থামেনি মাদকের নেশা। করোনার এই সময়েই অবাধে বিক্রি হচ্ছে মাদক। মিয়ানমার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় ঢুকছে ইয়াবা। ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে আসছে ফেন্সিডিল ও গাঁজা। তা খুচরা বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন কৌশলে। এক্ষেত্রে একটি শ্রেণি ব্যবহার করছে সামাজিক যোগাযোগা মাধ্যম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন প্রাইভেট গ্রুপ খুলে বিক্রি করা হচ্ছে মাদক। দেয়া হচ্ছে হোম ডেলিভারিও। এসব গ্রুপের সদস্য এডমিনের পরিচিত মাদকসেবী বা ক্রেতা।


গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এরকম অনেকগুলো গ্রুপের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করে তা পরিচালনা করা হচ্ছে। কোনো গ্রুপ পরিচালনা করা হচ্ছে দেশের বাইরে থেকে। মূলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতেই এ রকম নানা কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। ইয়াবাসহ প্রতিটি মাদকের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে সাংকেতিক নাম। কোনো কোনো গ্রুপে সাংকেতিক নামের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে কোড নম্বর।


উত্তরা, গুলশান, নিকেতন, বনানী, মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি, খিলগাঁও, সবুজবাগ, মিরপুর, রূপনগর ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় এ রকম বিভিন্ন গ্রুপের সন্ধান পাওয়া গেছে। অনলাইনে এসব গ্রুপ পরিচালনা করে তরুণ মাদক ব্যবসায়ীরা। এমনকি মাদক ব্যবসায় জড়িত তরুণীরাও সেসব গ্রুপের এডমিন। বেশিরভাগ গ্রুপের এডমিনরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। উঠতি বয়েসের মাদকসেবারী এসব গ্রুপের সদস্য।


আমরা শান্তি চাই, রঙিন দুনিয়া, ওম শান্তি, জাস্ট এনজয়, এসো মজা করি.. এ রকম নানা নামে পরিচালিত হচ্ছে এসব গ্রুপ। এমন একটি গ্রুপের সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইয়াবাকে তারা কমলা বলে সম্বোধন করেন। ছোটগুলো চায়না কমলা, বড়গুলো ইন্ডিয়ান। এছাড়া কোনো গ্রুপে আপেল বলে থাকে ইয়াবাকে। শাক-সবজি বলা হয় গাঁজাকে। ফেন্সিডিলকে জুস, সিরাপ ইত্যাদি। মোহাম্মদপুর কেন্দ্রিক একটি গ্রুপ পরিচালাতি হয় মালয়েশিয়া থেকে। ওই গ্রুপের সদস্যদের হোম সার্ভিসও দেয়া হয়। মাদক পৌঁছে দেয়া হয় ঢাকার বিভিন্ন বাসায়-বাসায়। এই দায়িত্বে রয়েছে ২০-২৫ জন তরুণ-তরুণী। উত্তরা আজমপুর এলাকার আরো একটি চক্র একইভাবে হোম সার্ভিস দিচ্ছে। এই চক্রটি বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে তাদের ক্রেতাদের সঙ্গে।


ক্রেতা সেজে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে বলে গতকাল হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয় শুভ্রা নামে এক তরুণীর সঙ্গে। প্রথমে তিনি অস্বীকার করেন। জানান, এটা জাস্ট ফান গ্রুপ। মাদক বিক্রির প্রশ্নই ওঠে না। এ সময় তাদের একজন ক্রেতার রেফারেন্স দিলে তিনি জানান, ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার পর নিশ্চিত হয়ে এ বিষয়ে কথা বলবেন তিনি।
আরো একটি চক্র তেজগাঁও, যাত্রাবাড়ী, দয়াগঞ্জ, জুরাইন, কদমতলী এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করছে। এক শ্রেণির গাড়িচালক, রিকশাচালক ও শ্রমিকরা তাদের ক্রেতা। এই চক্রটি মূলত গাঁজা ও ইয়াবা বিক্রি করে থাকে। তেজগাঁও থানার রেললাইন সংলগ্ন কাওরান বাজার এলাকায় দিনভর হকারদের মতো ডেকে ডেকে বিক্রি করা হয় গাঁজা ও ইয়াবা। সন্ধ্যার পর মাদকের হাট বসে ওই এলাকায়। একই অবস্থা জুরাইন রেললাইন এলাকায়। এসব এলাকায় নারী ও শিশু-কিশোররা বিক্রি করছে মাদক।



চট্টগ্রাম হয়ে বিভিন্ন কৌশলে ঢাকায় আসছে ইয়াবা। তারপর মাদকের ডিলারদের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ছে ঢাকাসহ সারা দেশে। গত ৭ই মে রাত সাড়ে ৯টার দিকে নিউ মার্কেট এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে মাদকের একটি চালান জব্দ করে র‌্যাব। এ সময় রাজশাহীর সবুজ মিয়া (৪০), চাঁপাই নবাবগঞ্জের কামরুজ্জামান (৩৭) ও আজিমুল (৩৭)কে আটক করা হয়। তাদের ব্যবহৃত প্রাইভেট কার থেকে ২৮৫ বোতল ফেন্সিডিল জব্দ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় যে, প্রাইভেটকারে যাত্রী পরিবহনের আড়ালে মূলত তারা মাদক পাচার করে থাকে। তারা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে মাদক বহন করে রাজধানীর বিভিন্ন মাদক কারবারিদের নিকট পৌঁছে দেয়। একইভাবে প্রায় প্রতিদিনই মাদক জব্দ করছে পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।


এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি সোহেল রানা বলেন, মাদক নির্মূলে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই মাদক জব্দ ও জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। মাদক কারবারিরা নানা কৌশল অবলম্বন করছে, পুলিশও তথ্য প্রযুক্তিসহ নানা কৌশলে তা প্রতিহত করছে বলে জানান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status