বিশ্বজমিন

‘ভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বের জন্য উদ্বেগ’, প্রতিবেশীদের জন্য অশনি সঙ্কেত

মানবজমিন ডেস্ক

১১ মে ২০২১, মঙ্গলবার, ১২:৩৮ অপরাহ্ন

গত বছর প্রথমবার ভারতে পাওয়া যায় করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট বি.১.৬১৭। এই ভাইরাসকে বিশ্বের জন্য উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা বলেছে, ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে যে গবেষণা হয়েছে তাতে বি.১.৬১৭ অন্য সব ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে অতি সহজে এবং দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে এমন প্রমাণ মিলেছে। এ জন্য আরো গবেষণা করা প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের কমপক্ষে ৩০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভ্যারিয়েন্ট। ভারতে যখন করোনা ভাইরাসে মৃত্যু এক বীভিষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে, প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মানুষ এতে মারা যাচ্ছে, তখন এই ভাইরাস পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। অনলাইন বিবিসি বলছে, বৃটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলে শনাক্ত হওয়া অন্য তিনটি ভ্যারিয়েন্টকেও বিশ্বের জন্য উদ্বেগজনক বলে আখ্যায়িত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। করোনা ভাইরাসের রূপান্তরকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ থেকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ হিসেবে শ্রেণিকরণ করা হয়েছে। যখন করোনা ভাইরাস এর মধ্যে কোনো একটির ক্রাইটেরিয়া পূর্ণ করে তখন তাকে শ্রেণিকরণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে সহজেই বিস্তার লাভ করা, অধিক ভয়াবহভাবে অসুস্থ করে তোলা, এন্টিবডির নিষ্ক্রীয়করণ কমিয়ে দেয়া অথবা চিকিৎসার কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়া, টিকার কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়া। ভারতে ভয়াবহভাবে করোনা ভাইরাসের সার্জ ছড়িয়ে পড়ার জন্য এই ভ্যারিয়েন্ট কতটুকু দায়ী তা নিয়ে গবেষণা চলছে। বর্তমানে ভারতের হাসপাতালগুলো রোগীতে উপচে পড়ছে। শ্মশানে লাশ দাহ করার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। এরই মধ্যে বিহারের বক্সারে গঙ্গা নদীতে ভেসে এসেছে ৪০/৪৫ টি লাশ। এ বিষয় সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। এগুলোর কোনটি ফুলে উঠেছে। কোনটি অর্ধগলিত। স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসন মনে করছেন, করোনায় মারা যাওয়া লাশ নদীতে এভাবে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। কারণ, শ্মশান বা কবরস্তানে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। নদীতে এভাবে লাশ ভাসিয়ে দেয়ার ফলে ভাইরাসের বিস্তার ত্বরান্বিত হবে বলেও তাদের আশঙ্কা। এর মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টকে ‘বৈশ্বিক উদ্বেগ’ বলে অভিহিত করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে নতুন করে তিন লাখ ৬৬ হাজার ১৬১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, একই সময়ের মধ্যে মারা গেছেন তিন হাজার ৭৫৪ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটিতে প্রকৃত সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে ৫ থেকে ১০ গুন বেশি হতে পারে। ভারতে এখন পর্যন্ত তিন কোটি ৪৮ লাখ মানুষ টিকার দুটি ডোজই নিয়েছেন। যা মোট জনসংখ্যার মাত্র দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ। এরই মধ্যে সেখানে হাসপাতালে বেড, অক্সিজেন ও ওষুধ সঙ্কটে পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করে তুলেছে। করোনা চিকিৎসায় ওষুধ রেমডেসিভির নিয়ে চলছে কাড়াকাড়ি। সোমবার দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, রাজধানীতে আর মাত্র তিন বা চার দিনের ভ্যাকসিন মজুত আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বর্তমান ভ্যাকসিনগুলো ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেও কার্যকর। তবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রযুক্তিগত নেতৃত্ব জানিয়েছে, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কিছু প্রমাণ থাকতে পারে।
নতুন ভ্যারিয়েন্ট ও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার মধ্যে যোগসূত্র আছে বলে ভারত সরকার প্রমাণ পেয়েছে বলে জানিয়েছে। তবে, এটি এখনও প্রতিষ্ঠিত নয় বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংক্রমণ ঠেকাতে গত একমাসে ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্য নিজেদের মতো করে লকডাউন, কারফিউ ও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা ও ভাইরাসের বিস্তার বন্ধের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার চাপের মধ্যে থাকলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো ঘোষণা আসেনি। মারাত্মক সংক্রমণের মধ্যেও ধর্মীয় উৎসব ও নির্বাচনী সমাবেশ করায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
অক্সিজেন সঙ্কট ভারতে এখন প্রাণসংহারি হয়ে উঠেছে। প্রায়দিনই খবর আসছে হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কটে রোগী মৃত্যুর। সোমবারও অন্ধ্র প্রদেশের একটি হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কটে মারা গেছেন কমপক্ষে ১১ রোগী।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status