শেষের পাতা

কর খেলাপিদের কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ বন্ধের দাবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১০ মে ২০২১, সোমবার, ৯:২০ অপরাহ্ন

আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে নতুন কোনো কর আরোপ বা কর হার বৃদ্ধি না করে প্রশাসনিক দক্ষতায় কর খেলাপিদের কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরমের আহ্বায়ক ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। রোববার নাগরিক প্ল্যাটফরম ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২২: পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কী থাকছে’ শীর্ষক সংলাপে এ আহ্বান জানান তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী ও সিপিডি’র বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, এ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, সিপিডি’র বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, বিজিএমইএ’র পরিচালক আসিফ ইব্রাহীম।
সংলাপে বাজেটে শেয়ারবাজার, জমি-ফ্ল্যাট ও ব্যাংকের মতো অনুৎপাদনশীল খাতে ঢালাওভাবে কেন কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা। অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা সাদা করার যদি সুযোগই দেয়া হয়, সেটি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও শিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে কেন নয় সেটিও জানতে চেয়েছেন তারা। বক্তারা বলেন, ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ করে দেয়া নীতি ও সাম্যের পরিপন্থি। এই সুযোগ দীর্ঘ মেয়াদে হতে পারে না।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, আগামী বাজেটে নতুন কোনো কর কিংবা কর হার বৃদ্ধি করা উচিত হবে না। প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে করের আওতা বাড়ানো ও কর ফাঁকি কমিয়ে আনতে হবে। যারা কর দেয় না, তাদের কাছ থেকে কর আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীক গোষ্ঠীর সুবিধায় বিভিন্ন রেয়াতি সুবিধা রয়েছে; যা এখন বাদ দিতে হবে। আবার অভ্যন্তরীণ বাজারে শ্রমঘন শিল্পের ক্ষেত্রে কর হার নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখা জরুরি।
ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার কঠোর সমালোচনা করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, সৎ করদাতার সঙ্গে এটি অন্যায় আচরণ। সংবিধানে সব নাগরিকের সমান অধিকারের কথা বলা থাকলেও সেটিও ভঙ্গ হচ্ছে। কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অর্থনৈতিকভাবে যুক্তিহীন, নৈতিকভাবে গর্হিত, সাম্যের পরিপন্থি এবং রাজনৈতিকভাবেও অপকারী হচ্ছে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ। এসব সুযোগ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, যে তিনটি খাতে কালোটাকার সুযোগ দেয়া হয়েছে, সেখান থেকে নতুন কিছু উৎপাদন হয় না। অনুৎপাদনশীল খাতেই এটি বিনিয়োগ হচ্ছে। তিনি বলেন, একদিকে দরিদ্রের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি করতে পারবো না, অন্যদিকে অবৈধ অর্থকে বৈধ করার সুবিধা স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে আদৌ গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করি। আর যারা নিয়মিত কর দেয় তাদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি সহ ইত্যাদি কাজ যেন বন্ধ করা হয়।
দেবপ্রিয় প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলেন, গত অর্থবছর আমরা এক অদ্ভূত সময়ের মধ্যে পার করেছি। ওই বছর কর আদায়ের হার ও সরকারের ব্যয় কমেছিল। চলতি অর্থবছরেও কর আদায় ও সরকারি ব্যয়ের হার প্রয়োজনের তুলনায় কমেছে। কর আদায় যেখানে হওয়া উচিত ছিল ১০-১২ শতাংশ হারে, সেখানে প্রথম ৯ মাসে ৭ শতাংশের কিছু বেশি কর আদায় হয়েছে। সরকারি ব্যয় বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নিম্ন হারে রয়েছে। যেখানে বাড়ার কথা, সেখানে গত বছরের তুলনায় ৪.৩০ শতাংশ কমেছে। তিনি বলেন, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক বেশি ইতিমধ্যে নিয়ে ফেলেছি। বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে যেখানে ঋণ নেয়ার কথা ৪৫ শতাংশের নিচে, সেখানে ইতিমধ্যে ব্যাংক থেকে ২৮৬.৪৩ শতাংশ ঋণ নিচ্ছি। অর্থ্যাৎ অন্য ঘটতিগুলো ব্যাংকের টাকা নিয়ে পূরণ করছি। একইভাবে ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকেও ইতিমধ্যে ২৫২ শতাংশ ঋণ নেয়া হয়ে গেছে। তাহলে আমরা তিন-চার রকমের সমস্যার মধ্যে আছি। কর আদায় বাড়ছে না, সরকারি ব্যয় বাড়ছে না। বাজেট ঘাটতি পূরণে সহজ মাধ্যম বৈদেশিক সাহায্য থেকে না নিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নিচ্ছি।
আগামী বাজেট কেমন হওয়া উচিত সে প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, বাজেট হওয়া উচিত সমপ্রসারণমূলক। আসছে বাজেটে মানুষের ভোগ ব্যয় বাড়াতে হবে। ভোগ ব্যয় না বাড়লে পুষ্টিহীনতা বাড়বে। দারিদ্র্যের হার আরও বাড়বে। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থানও বাড়বে না। সরকারি ব্যয় বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে নেট রপ্তানি বাড়াতে হবে।
নাসিম মঞ্জুর বলেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ পুরোপুরি অনৈতিক। আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছি, আমরা ৩০ শতাংশ হারে কর দিচ্ছি। আর যারা কালোটাকা সাদা করছেন, তারা ১০ শতাংশ কর দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। সৎ করদাতাদের কাছে এটি একটি ভুল বার্তা যাচ্ছে। এর মাধ্যমে পরোক্ষভাবে আমাদের কর দিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কালোটাকা সাদা করার সুযোগ যদি দিতেই হয় সেটি হতে পারে শিল্প খাতে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে।
আসিফ ইব্রাহীম বলেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দীর্ঘ মেয়াদে কোনো পরিকল্পনা হতে পারে না। রাজস্ব আদায়ের নাম করে এই অনৈতিক সুযোগ বেশি দিন দেয়া ঠিক হবে না।
রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, দিনের পর দিন বছরের পর বছর বাংলাদেশে শিক্ষা খাত অবহেলিত রয়ে গেছে। মাধ্যমিকে (এমপিওভুক্ত নয়) হাজার হাজার শিক্ষক অন্য কাজে চলে যাচ্ছেন। তাদের এই পেশায় ধরে রাখতে আগামী বাজেটে কী থাকছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এই দুই মাসে কত সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে, তার তথ্য কেউ জানি না। শিক্ষা গবেষণায় বরাদ্দ পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status