শেষের পাতা

বিশিষ্ট নাগরিকদের সংবাদ সম্মেলন

ঈদের আগে কারাবন্দি ছাত্রদের মুক্তি দাবি

স্টাফ রিপোর্টার

৯ মে ২০২১, রবিবার, ৯:০২ অপরাহ্ন

আসন্ন ঈদে কারাবন্দি ছাত্রদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। তারা বলছেন, আজকে বিচারক ও আদালতগুলো সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু পাকিস্তান আমলেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হলে নিম্ন আদালতেই জামিন দিয়ে দেয়া হতো। হাইকোর্টে যাওয়া লাগতো না। অথচ আজকে আমাদের ৫৯ জন ছাত্র জামিন পাচ্ছে না। শনিবার দুপুরে প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি এবং ঈদের আগেই গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রদের জামিনে মুক্তির দাবিতে নাগরিক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। গত কয়েক মাসে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫৯ জন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে ঈদের আগে মুক্তি দিতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছে নাগরিক সমাজ।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ডা. কামাল হোসেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।
সংবাদ সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে গণফোরামের সভাপতি বিশেষজ্ঞ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেন, ছাত্রদের জামিন দেয়া উচিত, জামিন একটা অধিকারের ব্যাপার। জামিন কোনো দয়া-মায়ার ব্যাপার না। আর বিশেষ করে ছাত্র সমাজ আমাদের একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখে এসেছে। তারা সময় উপযোগী বিষয়গুলো নিয়ে জনমত গঠন করে। আন্দোলন করে। এগুলোকে আমরা সব সময় উৎসাহিত করেছি। এখনো সেটা হওয়ার কথা। সুতরাং এসব ব্যাপারে আলোচনা করে আমাদের সুচিন্তিত বক্তব্যগুলো দিতে পারি, তাদেরকে অবশ্যই জামিন দেয়া উচিত।
জামিন নিয়ে আমাদের ঐতিহ্য আছে বলে উল্লেখ করে ড. কামাল হোসেন বলেন,  নিম্ন আদালতগুলো এখানে একটি সাহসী ভূমিকা রেখেছে। অনেক সময় তারা জামিন দিয়েছে। আমাদের মনে আছে অতীতে ব্যাপক আন্দোলনের সময় নেতাদের বক্তব্যের কারণে জেলে নেয়া হতো, তখন আবেদন করলে সঙ্গে সঙ্গে জামিন দেয়া হতো। এই রকম করতে করতে তো আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হলো, মানুষজনকে কারান্তরীণ করে রাখা হলো। তখন এই জামিনে যে একটা শক্তি ছিল, তখন সেটা আমরা দেখিয়েছিলাম। যাকে ধরা হোক সঙ্গে সঙ্গে নিম্ন আদালতই জামিন দিয়ে দিতো, হাইকোর্টেও আসা লাগতো না। জামিন যে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য সেটাকে আমাদের স্মরণ করানো দরকার।     
তিনি আরো বলেন, আজকে আমরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি, এসব ব্যাপারে আইনের একটা সমাধান থাকা দরকার। বিভিন্ন রকমের সংকট দেখা দিচ্ছে, এগুলোর ব্যাপারে আইন একটা অধিকার ও অবদান রাখতে পারে। আইনের প্রতিষ্ঠানগুলো, আইনজীবীরাও এসব ব্যাপারে ভূমিকা রাখার কথা, অতীতেও তারা রেখে এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জামিন আমাদের মানবিক ও আইনগত অধিকার। এটা তো আমাদের ছাত্রজীবন থেকে খুব সহজ সরলভাবে বুঝে এসেছি। আজকে আমাদের মূল সমস্যা হলো বিচারকগণ বিবেকবান নয়। তারা অত্যধিকভাবে সরকার ও পুলিশ নিয়ন্ত্রিত। সেখানে কোর্টে গেলে বলে, সরকার না বললে তো হবে না। এই জিনিসটাই আমাদের প্রধান বিচারপতিকে বলেছি। তার কাছে জানতে চেয়েছি যে, এই বিচারের দীর্ঘসূত্রতা- এটাই বড় অত্যাচার। আজকে এক মাস হয়ে গেছে এখনো মামলা উঠে না। তারপর একই ধরনের মামলা ৫টা দেয়া আছে। তখন ৫টার জন্যই জামিন নিতে হয়। এই ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন। বাধ্যতামূলক নির্দেশনা প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, আর কয়েকদিন পরে ঈদ। তাই আমরা সরকারের কাছে আবেদন করেছি। সেইসঙ্গে প্রধান বিচারপতিকেও বলেছি, তার যে সাংবিধানিক অধিকার ও ক্ষমতা আছে সেটাকে প্রয়োগ করে এই ছাত্রদের ঈদের পূর্বে জামিনের ব্যবস্থা করুন। এটা হচ্ছে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব, আরেকটা হলো মানবিক। মনে রাখতে হবে এই ছাত্ররাই আজকের বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে। তারা বাংলা ভাষার আন্দোলন করেছিল বলেই বাংলাভাষা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, আমি একটা বিষয় দুর্ভাগ্যের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, মাতৃভাষায় তাদের বিচারের রায়গুলো দেবেন। কিন্তু লক্ষ্য করুন ক’জনে বাংলায় রায় লিখছে। তার কথা মানছেন না অনেকে। তার কথা না মানা হচ্ছে বিচার ব্যবস্থা না মানা, এটা কোনো ব্যক্তির নির্দেশ নয়। আমি এই সঙ্গে প্রধান বিচারপতিকে তার কঠোরতম দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status