বাংলারজমিন

এবার ঈদে ঘুরে আসুন

পত্নীতলার ঐতিহাসিক দিবর দীঘি

ইখতিয়ার উদ্দীন আজাদ, পত্নীতলা থেকে

৯ মে ২০২১, রবিবার, ৭:৪৩ অপরাহ্ন

বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে নওগাঁ জেলার গুরুত্ব অপরিসীম। সেই সঙ্গে নওগাঁ জেলা বাংলাদেশের পরিচিত একটি জেলা। প্রাচীন বাংলার এক সমৃদ্ধ জনপদের নাম বরেন্দ্রভূমি। অনেক দর্শনীয় স্থান, পর্যটন কেন্দ্র থাকলেও এই জেলায় আরো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ইতিহাসকেন্দ্রিক স্থান। তার মধ্যে একটি দিবর দীঘি। নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলা থেকে ১৬ কি.মি. পশ্চিমে সাপাহার-নওগাঁ সড়কের পাশেই ঐতিহাসিক দিবর দীঘি অবস্থিত। দিবর দীঘির ঐতিহাসিক পটভূমি ছাড়াও এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বরেন্দ্র অঞ্চলের বিশেষ ভূমিরূপ এবং আদিবাসী সাঁওতালদের জীবনধারা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য অন্যতম।
ফিরে যাই পেছনে: ইতিহাস অনেক কিছু বলে আর এই ইতিহাসই পরিচয় করিয়ে দেয় অজানাকে। তেমন দিবর দীঘির সম্পর্কে জানতে আমরাও তাকাব পেছনে ফিরি। দিবর বা ধীবর দীঘি নামে পরিচিত এই জলাশয় ও জলাশয়ের মাঝখানে স্তম্ভটি একাদশ শতাব্দীর কৈবর্ত্য রাজা দিব্যক, তার ভ্রাতা রুদোক ও রুদোকের পুত্র প্রখ্যাত নৃপতি ভীমের কীর্তি হিসেবে পরিচিত। ইতিহাস থেকে জানা যায়, পাল রাজা দ্বিতীয় মহীপালের (১০৭০-১০৭১ খ্রি.) অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বরেন্দ্রভূমির অধিকাংশ অমাত্য পদচ্যুত সেনাপতি বরেন্দ্রভূমির ধীবর বংশোদ্ভূত কৃতী সন্তান দিব্যকের নেতৃত্বে পাল শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় মহীপালকে হত্যা করেন। পরে দিব্যককে সর্বসম্মতিক্রমে বরেন্দ্রর অধিপতি হিসেবে নির্বাচন করা হয়। স্বল্পকাল পরে দিব্যক মৃত্যুবরণ করলে প্রথমে রুদোক ও পরে রুদোক-পুত্র ভীম সিংহাসনে আরোহণ করেন। এই তিন কৈবর্ত্য বংশীয় রাজা ২৫-৩০ বছর বরেন্দ্র ভূমি শাসন করেন বলে জানা যায়। পরে দ্বিতীয় মহীপালের ভ্রাতা রামপাল ভীমকে পরাজিত ও নিহত করে পালরাজ্য পুনরুদ্ধার করেন। বাংলাদেশের এই প্রাচীন জয়স্তম্ভ্ভটি কোন কৈবর্ত্য রাজা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আজ অবধি তা সঠিক জানা যায়নি। একটি অখণ্ড পাথর কেটে তৈরি এই স্তম্ভের নয়টি কোণ আছে। এর এক কোণ থেকে আরেক কোণের দূরত্ব ১২ ইঞ্চি। এই বিরট স্তম্ভের উপরিভাগে পর পর তিনটি বলয়াকারে স্ফীত রেখা আছে যা স্তম্ভের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। এর শীর্ষদেশে আছে নান্দনিক কারুকার্য যা বাহ্যত মুকুটাকারে নির্মিত। বর্ণনা মতে, পানির উপরে স্তম্ভের উচ্চতা প্রায় ১০ ফুট, পানির ভেতরে ১২ ফুট এবং মাটির নিচে সম্ভবত আরো ৮-১০ ফুট গ্রোথিত আছে। স্যার বুকানন হ্যামিলটনের মতে, স্তম্ভের সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট এবং স্যার আলেকজান্ডার কানিংহামের মতে ৩০ ফুট। কানিংহাম ১৮৭৯ সালে যখন এই দীঘি পরিদর্শন করেন তখন এর গভীরতা ছিল ১২ ফুট এবং প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ছিল ১২০০ ফুট। ধীবর দীঘির এই জয়স্তম্ভটি হাজার বছরের বাংলা ও বাঙালির শৌর্য-বীর্যের প্রতীক হিসেবে কালের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে আজও দণ্ডায়মান। গ্রানাইট পাথরে তৈরি এরকম প্রাচীন স্তম্ভ বাংলাদেশে আর কোথাও নেই।
কীভাবে যাবেন ও কোথায় থাকবেন: দেশের সব জায়গা থেকেই জেলা সদর নওগাঁয় আসা যায়। এরপর বাস টার্মিনাল থেকে সাপাহারের বাসে উঠে দিবর দীঘির মোড়ে নামতে হবে। নওগাঁ থেকে দিবর দীঘির দূরত্ব ৫৫ কি.মি.। বাসে সময় লাগবে দেড় থেকে ২ ঘণ্টা। ঢাকা থেকেও সরাসরি দিবর দীঘিতে আসতে পারেন। প্রতিদিন ঢাকা থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, নওগাঁ ট্রাভেলস, মৌ পরিবহণ, বরেন্দ্র একসপ্রেস, শাহ ফতেহ্‌ আলী, আল নাফি একাধিকবার সাপাহার পর্যন্ত চলাচল করে। সাপাহার এসে চার্জাভ্যান বা সিএনজিযোগে দিবর দীঘি যেতে পারেন। ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা। এবার থাকার কথা। পত্নীতলা উপজেলা সদর নজিপুর পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড কিংবা সাপাহারে কিছু আবাসিক হোটেল আছে (এসি/নন এসি)। তবে এগুলো যদি আপনার মনে না ধরে সেক্ষেত্রে কষ্ট করে নওগাঁ সদরে এলে আপনি ভালো আবাসিক হোটেল পাবেন। এখানে থাকার জন্য ১৫০ থেকে ১৫০০ টাকা মধ্যে রুম পাবেন। এসি রুমও আছে সেক্ষেত্রে বাজেট বাড়াতে হবে। আর খাওয়ার জন্য রেস্তোরাঁ ও হোটেলগুলো পাবেন হাতের কাছেই।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status