শেষের পাতা

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসায় আইনি বিশ্লেষণ

সোলায়মান তুষার

৭ মে ২০২১, শুক্রবার, ৯:৩০ অপরাহ্ন

ফাইল ছবি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন আছে কিনা তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। সরকার পক্ষ বলছে, আদালতের অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা বলেছেন, আদালতের অনুমতির প্রয়োজন নেই। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর করা আবেদনটি ইতিমধ্যে আইনমন্ত্রীর কাছে  পৌঁছেছে। তিনি খুব দ্রুত মতামত দিবেন বলে জানিয়েছেন। ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার চাইলে, বিনা শর্তে বা শর্তসাপেক্ষে দণ্ড স্থগিত করতে পারেন। পরবর্তীতে সরকার স্থগিতাদেশের সময় বৃদ্ধি করতে পারেন। আবার শর্ত ভঙ্গ করলে যেকোনো সময় উক্ত স্থগিতাদেশ বাতিল করে দিতে পারেন। পুলিশ যেকোনো সময় তাকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করতে পারবেন।  জেলে প্রেরণ করতে পারবেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিতেই হবে- এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সরকার ইচ্ছা করলে অনুমতি  দিতে পারে। অনুমতি না দিলেও আইনের কোনো ব্যত্যয় হবে না।

 কী আছে ৪০১ ধারায়:
ধারাঃ ৪০১। দণ্ড স্থগিত অথবা মওকুফ করার ক্ষমতা
 (১) কোনো ব্যক্তি কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে সরকার যেকোনো সময় বিনা শর্তে বা দণ্ডিত ব্যক্তি যা মেনে নেয় সেই শর্তে তার দণ্ড কার্যকরীকরণ স্থগিত রাখতে বা সম্পূর্ণ দণ্ড বা দণ্ডের অংশবিশেষ মওকুফ করতে পারবেন।
(২) যখন কোনো দণ্ড স্থগিত রাখা বা মওকুফ করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয় তখন যে আদালত উক্ত দণ্ড দিয়েছিলেন বা অনুমোদন করেছিলেন সেই আদালতের প্রিজাইডিং জজকে সরকার উক্ত আবেদন মঞ্জুর করা উচিত কিংবা মঞ্জুর করতে অস্বীকার করা উচিত, সে সম্পর্কে তার মতামত ও মতামতের কারণ বিবৃত করতে এবং এই বিবৃতির সঙ্গে বিচারের নথির নকল অথবা যে নথি বর্তমানে আছে সেই নথির নকল প্রেরণ করার নির্দেশ দিবেন।

(৩) যে সব শর্তে কোনো দণ্ড স্থগিত রাখা বা মওকুফ করা হয়েছে তার কোনটি পালন করা হয়নি বলে মনে করলে সরকার স্থগিত বা মওকুফের আদেশ বাতিল করবেন এবং অতঃপর যে ব্যক্তির দণ্ড স্থগিত রাখা বা মওকুফ করা হয়েছিল সে মুক্ত থাকলে যেকোনো পুলিশ অফিসার তাকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করতে পারবেন এবং তার দণ্ডের অনতিবাহিত অংশ ভোগ করার জন্য তাকে জেলে প্রেরণ করা যাবে।
(৪) সেই শর্তে এই ধারার অধীন দণ্ড স্থগিত বা মওকুফ করা হয় যা, যে ব্যক্তির দণ্ড স্থগিত বা মওকুফ করা হয় সেই ব্যক্তি পূরণ করবে অথবা শর্ত এমন হবে যা পূরণে সে স্বাধীন থাকবে।

(৪ ক) এই বিধি বা অন্য কোনো আইনের কোনো ধারা অনুসারে কোনো ফৌজদারি আদালত কোনো আদেশ দান করলে তা যদি কোনো ব্যক্তির স্বাধীনতা খর্ব করে অথবা তার বা তার সম্পত্তির উপর দায় আরোপ করে তাহলে উপযুক্ত উপ-ধারাসমূহের বিধান এই আদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
(৫) প্রেসিডেন্টের অনুকম্পা প্রদর্শন, দণ্ড স্থগিত রাখা বা কার্যকরীকরণের বিলম্ব ঘটানো বা মওকুফ করার অধিকারে এই ধারার কোনো কিছু হস্তক্ষেপ করবে বলে মনে করা যাবে না।
(৫ ক) প্রেসিডেন্ট কোনো শর্তসাপেক্ষ ক্ষমা মঞ্জুর করলে উক্ত শর্ত যে প্রকৃতিরই হোক না কেন উহা এই আইন অনুসারে কোনো উপযুক্ত আদালতের দণ্ড দ্বারা আরোপিত শর্ত বলে গণ্য হবে এবং তদানুসারে বলবৎ যোগ্য হবে।
(৬) সরকার সাধারণ বিধিমালা বা বিশেষ আদেশ দ্বারা দণ্ড স্থগিত রাখা এবং দরখাস্ত দাখিল ও বিবেচনার শর্তাবলী সম্পর্কে নির্দেশ দিতে পারবেন।

কারাগার থেকে হাসপাতালে: দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি ছিলেন। এর মধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তীতে গত বছরের ২৫শে মার্চ তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে পরিবারের সদস্যদের আবেদনে সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে সাময়িক সময়ের জন্য মুক্তি দেয় সরকার। এরপর খালেদা জিয়া রাজধানীর গুলশান এভিনিউয়ের নিজের বাসভবন ফিরোজায় যান। সেই ছয় মাস মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ফের মেয়াদ আরো বাড়ানো হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে গত ২৭শে এপ্রিল গুলশানের বাসা থেকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বিএনপি চেয়ারপারসনকে। গত ৩রা মে থেকে শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলতা দেখা দেয়ায় চিকিৎসকরা খালেদা জিয়াকে কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার সুপারিশ করে। বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার পরিবারও চাচ্ছে বিদেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হোক। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমণ্ডির বাড়িতে দেখা করে বিদেশে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করেন।

আইনজীবীদের বক্তব্য:  খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতির বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন  বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে। এখন এটা (বিদেশ নিতে) করতে গেলে আদালতে আসতে হবে। আমার তো তাই মনে হয়। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এদিকে মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারা মোতাবেক সরকার শর্ত সাপেক্ষে বা শর্ত ছাড়া যেকোনো আসামির সাজা মওকুফ বা সাজা স্থগিত করতে পারে। খালেদা জিয়াকে যখন মুক্তি দেয়া হয় তখন শর্ত দেয়া হয়েছিল, তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়া উচিত।  তিনি বলেন, এখানে আদালতের কোনো ভূমিকা নেই। এটা সম্পূর্ণ প্রশাসনিক আদেশ। সাজা স্থগিতও প্রশাসনিক আদেশ। এখানে আদালতের কোনো ভূমিকা নেই। আশা করি, সরকার তার সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেবে। এখানে আইনগত কোনো বাধা নেই।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status