বিশ্বজমিন

ফ্রান্স-বৃটেন উত্তেজনা, কামান-মেশিনগানবাহী বৃটিশ দুই টহল জাহাজ মোতায়েন

মানবজমিন ডেস্ক

৬ মে ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১২:৪০ অপরাহ্ন

ব্রেক্সিট পরবর্তী তুমুল উত্তেজনা দেখা দিয়েছে প্যারিস ও বৃটেনের মধ্যে। সেইন্ট হেলিয়ার বন্দরে প্রবেশের সব সুবিধা বন্ধ করে দিতে প্যারিসের ১০০ মাছধরা বোট। গোয়েন্দা এমন তথ্যের ভিত্তিতে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জার্সি এলাকায় ফরাসি মাছধরা বোটগুলোকে থামিয়ে দিতে পাঠিয়েছেন দুটি রয়েল নৌবাহিনীর সশস্ত্র নৌযান। এতে রয়েছে কামান ও মেশিনগান। উল্লেখ্য, জার্সি হলো চ্যানেল আইল্যান্ডসের অধীনে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের অধীনে সবচেয়ে বড় দ্বীপ। এখানে আছে বৃটেনপন্থি স্বায়ত্তশাসন। এর আছে বহু বিচ বা সমুদ্র সৈকত। এ জন্য জার্সির প্রতি আকর্ষণ আছে বহু মানুষের। উত্তেজনা নিয়ে জার্সির মুখ্যমন্ত্রী জন লা ফনদ্রে’র সঙ্গে কথা বলেছেন বরিস জনসন। জার্সির ওপর ব্লকেড বা অবরোধ দেয়া হতে পারে বলে সাবধান করেছে প্যারিস। তাই প্যারিসের ওইসব মাছধরা বোটকে থামাতে জনসন পাঠিয়েছেন এইচএমএস সেভার্ন এবং এইচএমএস তামার। সশস্ত্র এই দুটি নৌযান ওই চ্যানেলটিতে টহল দেবে বলে নিশ্চিত করেছে বৃটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডেইলি মেইল। এতে বলা হয়েছে, বরিস জনসন গত রাতে পূর্ব সতর্কতা হিসেবে ওই দুটি রয়েল নৌবাহিনীর অস্ত্রবাহী জাহাজ পাঠিয়েছেন জার্সির দিকে। একে দেখা হচ্ছে ব্রেক্সিটের পরে প্যারিসের সঙ্গে অপ্রত্যাশিত এক বড় উত্তেজনা হিসেবে। এতে বলা হয়েছে, আগের দিন প্যারিস সতর্ক করে দিয়েছে যে, তারা বৃটিশ ক্রাউনে সরবরাহ দেয়া বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। জার্সিতে বিদ্যুত সরবরাহ দেয়া হয় সমুদ্রতলে ক্যাবলের মাধ্যমে। প্যারিসের এমন সতর্কতায় কামান ও মেশিনগানে সমৃদ্ধ ওই দুটি বৃটিশ জাহাজ টহল দেবে চ্যানেলে। এর আগে গোয়েন্দারা প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে অবহিত করেন যে, মাছধরা ১০০ বোট সেইন্ট হেলিয়ার বন্দরে প্রবেশের সব সুযোগকে ব্লক করে দিতে পারে। এরপরই বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ওই এলাকায় টহল জাহাজ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন। ফ্রান্সের নৌ বিষয়ক মন্ত্রী আনিক গিরারডিন বুধবার চ্যানেল আইল্যান্ডের সবচেয়ে বড় এলাকা জার্সিকে অভিযুক্ত করেছেন যে, তারা ফ্রান্সের মাছধরা বোটগুলোকে নতুন করে লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসি করছে। এর জবাবে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে ফ্রান্স প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, লাইসেন্স দেয়া না হলে তারা জার্সিতে দেয়া বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারেন। উল্লেখ্য, জার্সিতে যে পরিমাণ বিদ্যুত প্রয়োজন, তার মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগই সরবরাহ দেয় ফ্রান্স।
গত রাতে নৌসীমানা চিহ্নিতকরণ বিষয়ক ওয়েবসাইটগুলো দেখায় যে, নৌপথে নিরাপত্তা টহল দিতে জার্সির দিকে যাত্রা শুরু করেছে এইচএমএস। এটি একটি পুরনো ব্যাচ ১-এর টহল জাহাজ। এতে আছে ২০ এমএম কামান এবং ৭.৬২ এমএম মেশিনগান। অন্যদিকে এইচএমএস তামার হলো ব্যাচ ২ জাহাজ। এতে আছে ৩০এমএম এমকে৪৪ বুশমাস্টার কামান। বৃটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, নৌসীমানায় নিরাপত্তা টহল নিশ্চিত করতে জার্সিতে মোতায়েন করা হচ্ছে এইচএমএস সেভার্ন এবং এইচএমএস তামার। এটা পূর্ব সতর্কতামূলক এক কঠোর পদক্ষেপ। জার্সি সরকার এ বিষয়ে একমত। ধারণা করা হচ্ছে পোর্টসমাউথে নোঙর করা এই দুটি জাহাজ আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে তার গন্তব্যে পৌঁছাবে।
কিন্তু এরই মধ্যে গত রাতের গৃহীয় পদক্ষেপ ‘কড’ যুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, যার শুরু হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকে নর্থ আটলান্টিকে। তখন বৃটেনের রয়েল নৌবাহিনী আইসল্যান্ডের বোটগুলোকে বৃটিশ ট্রলারগুলোর ওপর হস্তক্ষেপ বন্ধ করিয়েছিল। বর্তমানে বৃটেন এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যে যে বাণিজ্যিক চুক্তি আছে সে অনুযায়ী বোট চলাচলের জন্য নতুন সব নিয়ম প্রণয়ন করে তার বাস্তবায়ন করতে শুরু করে জার্সি। তাকে কেন্দ্র করেই এই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। নতুন নিয়মের অধীনে এর আগে যেসব বোট মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত থাকতো তাদেরকে এ এলাকার জলসীমায় মাছ ধরার জন্য নতুন করে লাইসেন্স নিতে বলা হয়েছে। এ অবস্থায় বুধবার উত্তেজনা নিরসনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে আলোচনা করার আহ্বান জানান বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি জার্সির মুখ্যমন্ত্রী জন লা ফনদ্রে’কে নিয়ে জার্সি ও ফ্রান্সের মধ্যে মাছধরার অধিকার নিয়ে আলোচনা করার আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, এই আলোচনায় জার্সি দ্বীপের পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী ইয়ান গোর্স্ট’কেও উপস্থিত থাকার আহ্বান জানানো হয়। ডাউনিং স্ট্রিটের মুখপাত্র বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী জার্সির প্রতি তার সমর্থন জোর দিয়ে প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, যদি কোনো রকম ব্লকেড বা অবরোধ দেয়া হয় জার্সির বিরুদ্ধে, তাহলে তা হবে পুরোপুরি অবিচার। তাই পূর্ব সতর্কতামূলকভাবে বৃটেন ওই অঞ্চলে অফসোর টহলে দুটি জাহাজ পাঠিয়েছে।
উল্লেখ্য, বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব এবং বাণিজ্যমন্ত্রী গ্রেগ হ্যান্ডস এ নিয়ে বুধবার ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং সাম্প্রতিক উস্কানি দেয়া নিয়ে উদ্বেগ তুলে ধরেছেন। সরকারি সূত্রগুলো বলেছেন, পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রী জর্জ ইউসটিস গত ৪৮ ঘন্টায় মিসেস গিরারডিনসের সঙ্গে মিটিং করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সেই আলোচনায় যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ফরাসি এই মন্ত্রী। তিনি বুধবার ব্রেক্সিট চুক্তির উল্লেখ করে বলেছেন, প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত ফ্রান্স। জার্সির বিষয়ে আমি আপনাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, সমুদ্রতল দিয়ে ক্যাবলের মাধ্যমে যে বিদ্যুত সরবরাহ দেয়া হয় তা বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। এই ক্যাবলের মাধ্যমে জার্সিতে ৪ কোটি পাউন্ডের বিদ্যুত দেয়া হয়। ২০১৬ সালে দ্বীপ জার্সি এবং ফ্রান্সের মধ্যে বসানো হয় এই ক্যাবল নেটওয়ার্ক। নর্মান্ডি ১ নামে ১৬.৭ মাইল এই ক্যাবল স্থাপনে সময় লেগেছিল এক সপ্তাহ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status