বাংলারজমিন

বিজয়নগরে মাদক পাচারের ১৫ স্পট

আমিরজাদা চৌধুরী, বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে

৪ মে ২০২১, মঙ্গলবার, ৮:২০ অপরাহ্ন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর সীমান্ত দিয়ে দিন দিন বাড়ছে মাদক চোরাচালান। এ অঞ্চলের ৩১ কিলোমিটার সীমান্তের ১৫টি স্পট দিয়ে নিয়মিত মাদক পাচার চলছে। অন্তত ৬ শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী সক্রিয় রয়েছে। অথচ মাদক মামলায় আসামি হয় মাত্র ৩-৪ জন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর তাদের নামে মামলা দিয়েই দায়িত্ব খালাস করছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের ত্রিপুরার মধুপুর পাহাড়ে উপজাতিরা গাঁজা চাষ করে। সেখান থেকে আগরতলার বামুটিয়া ও বিমানবন্দর থানার বগাদী নারায়ণপুরের ভাগলপুর নরসিংগর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর সিংগারবিল ইউনিয়নের নলগুড়ীয়া, কাশিনগর, নোয়াবাদী, মেরাশানী, বিষনপুরের কালাছড়া, কাশীমপুর, পাহাড়পুর ইউনিয়নের বামুটিয়া, চানপুর, ধোড়ানাল, শিয়ালউড়ী, ছড়ারপাড়, শানিপুর মকন্দপুর কামাল মুড়া, লেজামুড়া দিয়ে মাদক চালান আসে। প্রতি রাতে অন্তত ৫-৭ হাজার কেজি গাঁজা প্রতিকেজি কেনার পর বাংলাদেশি টাকায় ৫০০০ টাকা কেজি। মজুর খরচ এক হাজার টাকা পরিবহন খরচ প্রতি কেজি দুই হাজার টাকা। এ পথ ব্যবহার করে প্রতিদিন ফেনসিডিল আসে ৮-১০ হাজার পিস। প্রতিপিস ফেনসিডিল  ক্রয় ৯০০ শত থেকে ৯৫০ টাকা। বিক্রয় ১৫০০ টাকা, ইস্কফ সিরাফ ২০-২৫ হাজার কেনা ২২০ খরচ ১০০ বিক্রয় ৪৫০-৫০০ টাকা প্রতি পিস।
এছাড়াও ছোটবড় ইয়াবা নামছে ৫০ থেকে এক লাখ পিস। ছোট এবং বড় ঢাকার গাজীপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা দেশের বিভিন্ন স্থানে এই মাদক পাচার করে থাকে। বিভিন্ন পরিবহনে চানপুর সীমান্ত দিয়ে ২০-২৫ জন পাচারকারী পায়ে হেঁটে পওন ইউনিয়নের মনিপুর দওখলা চর ইসলামপুর ও নদী পার হয়ে সোহাতা জাদুঘর শিম সরাইল কান্দি মজলিশপুর মেড্ডা শ্বশ্মানঘাট ময়লাভিটা এসে মাদক নিয়ে ওঠে। পরে সুযোগ করে পরিবহনে এই সিন্ডিকেটটি পার্টিকে মাদক বুঝিয়ে দেয় বলে সূত্র জানায়। প্রতিটি বড় ইয়াবা কেনা পড়ে ৭০ টাকা। পাইকারি বিক্রয় হয় ৯০ টাকায়। সে সঙ্গে কৌশলে আদায় করছে মোটা অঙ্কের টাকা।
এসব নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এসআই এনাম ও এসআই কামরুলের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এরশাদ মিয়াকে মাদক মামলায় ফাঁঁসিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের গত বছরের ২৪শে ডিসেম্বর পত্তন ইউনিয়নের নোয়াগাঁও মোড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে এলাকাবাসী। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান রতনের নেতৃত্বে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরের মার্চ মাসে সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের কাশীনগর গ্রামের একাধিক মামলার আসামি ও মাদক সম্রাট জসিমকে আটক করে জেলা মাদ্রকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এসআই এনাম ও এসআই কামরুল। পরে ৮৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। গাঁজা পাচার মামলার চার্জশিটে ঢুকিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে এপ্রিল মাসে জেলা মাদ্রকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দুই এসআই জসিমের কাছ থকে ৯০ হাজার টাকা আদায় করে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের ইব্রাহিম মেম্বারের ছেলে জনিকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর ভয়ভীতি দেখিয়ে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা আদায় করে জেলা মাদ্রকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আলোচিত দুইজন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমোদাবাদের শফিককে মাদক মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে ১ লাখ টাকা আদায় করা হয়। জাহানা (জাহি) এর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা মাদক মামলার ভয় দেখিয়ে নেয়। সজল নামে একজনের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা আদায় করে মামলার ভয় দেখিয়ে। সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের উথারিয়াপাড়া শাহ পরানের কাছ থেকে দফায় দফায় ৫ লাখ টাকা নিয়েছে। কাশিনগরের জসিম, সজল ও রুবেল এর কাছ থেকে ২ লাখ টাকা আদায় করে মামলার ভয় দেখিয়ে। জহির এর কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা আদায় করে। একাধিক মাদক মামলায় ঢুকিয়েছে টাকা না দেয়ার জন্য পরিবারের অভিযোগ। জেলা মাদ্রকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, এসব ঘটনা আমার জানার বাইরে। এ রকম কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা অনেক চতুর। নিজেরা বাঁচার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status