শেষের পাতা
জাল টাকার কারবারে ইঞ্জিনিয়ারের কেরামতি
শুভ্র দেব
৩ মে ২০২১, সোমবার, ৯:২৯ অপরাহ্ন
ঈদকে ঘিরে ফের সক্রিয় হয়েছে জাল টাকার কারবারিরা। দেশের বিভিন্ন গোপন স্থানে কারখানা গড়ে তুলে তারা জাল টাকা তৈরি করছে। কৌশলে জাল টাকা ঈদ বাজারে ছড়িয়ে দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। জাল টাকার কারবারিরা যেভাবে সক্রিয় হয়েছে ঠিক তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও তাদেরকে ধরার জন্য নজরদারি ও তৎপরতা চালাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ গতকাল ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে অভিযান চালিয়ে জাল টাকা চক্রের এক নারী সদস্যসহ মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এই চারজনের দু’জন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। একটি খ্যাতনামা ফোন কোম্পানিতে নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ করতেন তাদের একজন। ভালো চাকরি ছেড়ে দ্রুত ধনী হওয়ার জন্য তারা এই কাজে জড়িয়ে পড়েন। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কারখানার খাটের তলায়, জাজিমের নিচ থেকে ৪৬ লাখ টাকার জাল টাকা ও টাকা তৈরির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি দুটি ল্যাপটপ, দুটি প্রিন্টার, হিট মেশিন, বিভিন্ন ধরনের স্ক্রিন, ডাইস, জাল টাকার নিরাপত্তা সুতা, বিভিন্ন ধরনের কালি, আঠা এবং স্কেল কাটারসহ আরো অনেক সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিবি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার এই চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে জাল টাকার কারবার করে আসছিল। এই কাজে তাদের বেশ দক্ষতাও আছে। বছরের দুই ঈদকে ঘিরেই তারা পরিকল্পনা করে থাকে। কারণ তখন দেশে লেনদেনের প্রবাহ বেশি থাকে। ধনী-গরিব সব শ্রেণির কাছেই টাকা থাকে। মূলত এই সুযোগটাই তারা কাজে লাগায়। এই চক্রের মূলহোতা জীবন এর আগেও জাল টাকা তৈরির অভিযোগে দুইবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। জামিনে বেরিয়ে ফের একই কাজ শুরু করে। তার গতিবিধি ডিবি আগে থেকেই নজরদারিতে রেখেছিল। এ ছাড়া গ্রেপ্তার ইমাম হোসেন বরিশাল পলিটেকনিক থেকে নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা করেছে। ইমাম নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতো। অপর আসামি পিয়াস বরিশাল সরকারি পলিটেকনিক কলেজ থেকে পাওয়ারের ওপর ডিপ্লোমা করেন। দ্রুত বড়লোক হওয়ার জন্য তারা ভালো চাকরি ছেড়ে এই কাজের সঙ্গে জড়িত হয়।
সূত্র জানায়, ঈদকে সামনে রেখে চক্রটি দেড় কোটি টাকার জাল টাকা তৈরি করার মতো সরঞ্জাম মজুত করেছিল। চক্রের দুই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার উন্নতমানের জাল টাকা তৈরি করতেন। এসব টাকা খালি চোখে দেখে বোঝার উপায় নেই আসলেই জাল টাকা কিনা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান মানবজমিনকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হওয়ায় মানুষ ঘরের বাইরে যাচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে কেনাকাটার জন্য অনেকে এখন শপিং মলে যাচ্ছেন। আর এই সুযোগেই একটি চক্র কিছুদিন আগেও তারা চুরি-ছিনতাইয়ের কাজ করতো। তারা এখন জাল টাকা তৈরি করছে। চক্রের মূলহোতা জীবন। বহুদিন ধরে এই কাজ করছে। বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারও হয়েছে। জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার জাল টাকা তৈরি করছে। অতিলোভ ও জীবনের পাল্লায় পড়ে দু’জন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এ পথে পা দিয়েছে। অথচ তারা ভালো বেতনে বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতো। তিনি বলেন, জাল টাকা তৈরি করে মানুষের পকেট কেটে অবৈধভাবে দ্রুত টাকা কামানো যায়। তাই অনেকেই লোভে পড়ে এই কাজে জড়িয়ে পড়ে। আমরা এ ধরনের চক্রকে সবসময় নজরদারিতে রাখি। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হবে।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, বহু বছর ধরে কিছু দুর্বৃত্ত ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কারখানা খুলে জাল টাকা তৈরি করে আসছে। বিশেষ করে দুই ঈদের আগে তাদের তৎপরতা বাড়ে। ওই সময় তারা কোটি কোটি টাকার জাল টাকা তৈরি করে বাজারে ছেড়ে দিতো। প্রতিটা চক্রে একাধিক সদস্য থাকে। এসব সদস্যদের আলাদা আলাদা কাজ। তবে এসব চক্র সরাসরি বাজারে টাকা ছাড়ে না। যারা জাল টাকা তৈরি করে তারা পাইকারি দামে বিক্রি করে দেয়। পাইকারি ক্রেতারা আবার আরো কিছু লাভ ধরে খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করে। আর খুচরা বিক্রেতারাই এসব টাকা বাজারে ছড়িয়ে দেয়। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, জাল টাকার উৎপাদনকারীরা প্রতি লাখ টাকা সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে। আর পাইকারি বিক্রেতারা ৪০ হাজার টাকায় পাইকারি বিক্রি করে। এসব চক্রের সদস্যদের প্রায়ই অভিযান চালিয়ে র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার করে। কিন্তু আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে তারা জামিনে বের হয়ে ফের একই কাজ করে। ঢাকা কেন্দ্রিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বেড়ে যাওয়াতে এখন চক্রের সদস্যরা ঢাকার বাইরে গিয়ে কারখানা গড়ে তুলে জাল টাকা তৈরি করছে। এসব চক্রের সারা দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক রয়েছে। সারা দেশে অন্তত ২০টির মতো চক্র এসব কাজ করছে।
এর আগে গত বছরের ৩০শে জুন মিরপুর ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার দুটি বাসা থেকে চার কোটি টাকার জাল টাকাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। গ্রেপ্তার ছয়জন জানিয়েছে তারা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ওই টাকা তৈরি করেছিল। এর পরের মাসের ১৮ই জুলাই পুরান ঢাকার বংশাল ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩৫ লাখ টাকার জাল টাকা এবং তা তৈরির বিভিন্ন উপকরণসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের করা মামলায় বলা হয়, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এই চক্রটি জাল টাকা তৈরি করছিল। কোরবানির পশুর হাট, শপিং মল ও অন্যান্য জায়গায় এই জাল টাকা ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল তাদের।
ডিবি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার এই চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে জাল টাকার কারবার করে আসছিল। এই কাজে তাদের বেশ দক্ষতাও আছে। বছরের দুই ঈদকে ঘিরেই তারা পরিকল্পনা করে থাকে। কারণ তখন দেশে লেনদেনের প্রবাহ বেশি থাকে। ধনী-গরিব সব শ্রেণির কাছেই টাকা থাকে। মূলত এই সুযোগটাই তারা কাজে লাগায়। এই চক্রের মূলহোতা জীবন এর আগেও জাল টাকা তৈরির অভিযোগে দুইবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। জামিনে বেরিয়ে ফের একই কাজ শুরু করে। তার গতিবিধি ডিবি আগে থেকেই নজরদারিতে রেখেছিল। এ ছাড়া গ্রেপ্তার ইমাম হোসেন বরিশাল পলিটেকনিক থেকে নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা করেছে। ইমাম নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতো। অপর আসামি পিয়াস বরিশাল সরকারি পলিটেকনিক কলেজ থেকে পাওয়ারের ওপর ডিপ্লোমা করেন। দ্রুত বড়লোক হওয়ার জন্য তারা ভালো চাকরি ছেড়ে এই কাজের সঙ্গে জড়িত হয়।
সূত্র জানায়, ঈদকে সামনে রেখে চক্রটি দেড় কোটি টাকার জাল টাকা তৈরি করার মতো সরঞ্জাম মজুত করেছিল। চক্রের দুই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার উন্নতমানের জাল টাকা তৈরি করতেন। এসব টাকা খালি চোখে দেখে বোঝার উপায় নেই আসলেই জাল টাকা কিনা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান মানবজমিনকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হওয়ায় মানুষ ঘরের বাইরে যাচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে কেনাকাটার জন্য অনেকে এখন শপিং মলে যাচ্ছেন। আর এই সুযোগেই একটি চক্র কিছুদিন আগেও তারা চুরি-ছিনতাইয়ের কাজ করতো। তারা এখন জাল টাকা তৈরি করছে। চক্রের মূলহোতা জীবন। বহুদিন ধরে এই কাজ করছে। বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারও হয়েছে। জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার জাল টাকা তৈরি করছে। অতিলোভ ও জীবনের পাল্লায় পড়ে দু’জন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এ পথে পা দিয়েছে। অথচ তারা ভালো বেতনে বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতো। তিনি বলেন, জাল টাকা তৈরি করে মানুষের পকেট কেটে অবৈধভাবে দ্রুত টাকা কামানো যায়। তাই অনেকেই লোভে পড়ে এই কাজে জড়িয়ে পড়ে। আমরা এ ধরনের চক্রকে সবসময় নজরদারিতে রাখি। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হবে।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, বহু বছর ধরে কিছু দুর্বৃত্ত ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কারখানা খুলে জাল টাকা তৈরি করে আসছে। বিশেষ করে দুই ঈদের আগে তাদের তৎপরতা বাড়ে। ওই সময় তারা কোটি কোটি টাকার জাল টাকা তৈরি করে বাজারে ছেড়ে দিতো। প্রতিটা চক্রে একাধিক সদস্য থাকে। এসব সদস্যদের আলাদা আলাদা কাজ। তবে এসব চক্র সরাসরি বাজারে টাকা ছাড়ে না। যারা জাল টাকা তৈরি করে তারা পাইকারি দামে বিক্রি করে দেয়। পাইকারি ক্রেতারা আবার আরো কিছু লাভ ধরে খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করে। আর খুচরা বিক্রেতারাই এসব টাকা বাজারে ছড়িয়ে দেয়। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, জাল টাকার উৎপাদনকারীরা প্রতি লাখ টাকা সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে। আর পাইকারি বিক্রেতারা ৪০ হাজার টাকায় পাইকারি বিক্রি করে। এসব চক্রের সদস্যদের প্রায়ই অভিযান চালিয়ে র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার করে। কিন্তু আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে তারা জামিনে বের হয়ে ফের একই কাজ করে। ঢাকা কেন্দ্রিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বেড়ে যাওয়াতে এখন চক্রের সদস্যরা ঢাকার বাইরে গিয়ে কারখানা গড়ে তুলে জাল টাকা তৈরি করছে। এসব চক্রের সারা দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক রয়েছে। সারা দেশে অন্তত ২০টির মতো চক্র এসব কাজ করছে।
এর আগে গত বছরের ৩০শে জুন মিরপুর ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার দুটি বাসা থেকে চার কোটি টাকার জাল টাকাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। গ্রেপ্তার ছয়জন জানিয়েছে তারা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ওই টাকা তৈরি করেছিল। এর পরের মাসের ১৮ই জুলাই পুরান ঢাকার বংশাল ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩৫ লাখ টাকার জাল টাকা এবং তা তৈরির বিভিন্ন উপকরণসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের করা মামলায় বলা হয়, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এই চক্রটি জাল টাকা তৈরি করছিল। কোরবানির পশুর হাট, শপিং মল ও অন্যান্য জায়গায় এই জাল টাকা ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল তাদের।