বাংলারজমিন

দুর্দিনে জামদানি শিল্প!

জয়নাল আবেদীন জয়, রূপগঞ্জ থেকে

৩ মে ২০২১, সোমবার, ৭:৫৬ অপরাহ্ন

শাড়িতে বঙ্গ নারী, আর নারীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে দেশের ঐতিহ্যের প্রতীক জামদানি শাড়ি। ঈদে বাঙালি রমণীদের জামদানি শাড়ি ছাড়া না-কি চলেই না। এ ছাড়া বিয়েশাদিসহ অনুষ্ঠান, পার্বণের সময় জামদানির চাহিদা বেশি থাকায় ঐ সময় জামদানি শিল্পীরা ব্যস্ত সময় কাটান। ঈদের আগে নাওয়া-খাওয়ার ফুরসতটুকু পান না জামদানি শিল্পীরা। কিন্তু এবারের চিত্র ঠিক উল্টো। এবার জামদানি শিল্পীরা বেকার ও অলস সময় কাটাচ্ছেন। বিগত বছরগুলোতে ভারত, সৌদি, দুবাই, ইন্দোনেশিয়ায় জামদানি শাড়ি রপ্তানি করা গেলেও এবার লকডাউনের কারণে তা সম্ভব হয়নি। ফলে ১০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশ। ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত জামদানি পল্লীর ১০ হাজার শিল্পীর মাথায় হাত। গতকাল সকালে নোয়াপাড়া জামদানি পল্লী ঘুরে দেখা গেছে, জামদানি পল্লীতে আগের মতো খুটখাট শব্দ নেই। নেই কোলাহল। লকডাউনের কারণে গত প্রায় ৪ সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে জামদানি কারখানাগুলো। জামদানি বিক্রির হাটও বন্ধ। অথচ প্রতিবছর ঈদ এগিয়ে এলে নাওয়া-খাওয়া ভুলে কারিগররা কে কতো শাড়ি বুনতে পারেন তা নিয়ে চলতো প্রতিযোগিতা। এবার দেখে মনে হবে যেন এক ভুতুড়ে নগরী। আবার তাঁতিরা শুয়ে-বসে অলস সময় পার করছেন। কেউ লুডু খেলা অথবা আড্ডা দিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। তবে কোনো তাঁতী স্বল্প পরিসরে জামদানির কাজ করলেও বিক্রি করতে পারছেন না। তাঁত বুননের কাজ না থাকায় তাঁতিদের অনেকে কাচাঁমালসহ রমজানের বিভিন্ন পণ্য বিক্রিসহ ঝুঁকছেন ভিন্ন পেশায়। জামদানি শাড়ির পাইকার ও স্থানীয় কাউন্সিলর হামিদুল্লাহ মিয়া বলেন, ঈদে দেশের বাজার ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, মিশর, সৌদি আরব, দুবাই ও বৃটেনসহ বিভিন্ন দেশে জামদানি শাড়ি রপ্তানি হতো। লকডাউনের কারণে এবার জামদানি রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। ফলে ১০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশ। তাঁতীরা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে তাঁতীদের তেমন কোনো ব্যস্ততা নেই। কর্মহীনভাবে দিন কাটছে তাদের। তবে কয়েকজন শাড়ি তৈরি করলেও তা বিক্রি করতে পারছেন না। সংসার চালাতে গিয়ে দু’চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন তারা। কথা হয় শিল্পী নুরুল হক মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘করোনা আমাগো শেষ কইরা দিছে। এহন লুডু খেইলা সময় কাটাই। সংসার চালানোর মতো টেকা নাই। সরকার হগলতরে প্রণোদনা দিতাছে। অথচ জামদানি শিল্পীরা বাংলাদেশরে বিশ্ব দরবারে তুইলা ধরে। জামদানি শিল্পীগো খবর নেয় না কেউ।’ শিল্পী ঝর্ণা বেগম, সাবেকুন, বিউটি আক্তার, আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ঘাম ঝরাইয়া একটা শাড়ি বানাই। এই শাড়ি সারা দুনিয়াতে চলে। কিন্তু আমাগো দাম নেই। মহাজন এরশাদ, ইসমাঈল, আনোয়ার, মজিবুর বলেন, আগে ঈদ আসলে ভারত, সৌদি, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে জামদানির চাহিদা থাকতো। লকডাউনের কারণে সব শেষ। জামদানি পল্লী বিসিকের সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, লকডাউনের কারণে শতকরা ৯০ ভাগ তাঁতি কর্মহীন হয়ে কষ্টে দিন পার করছে। তাদের প্রণোদনার দাবি জানাচ্ছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status