প্রথম পাতা

কয়েকটি দেশে সংক্রমণ কমাচ্ছে টিকা

‘১৫ কোটি লোককে টিকার আওতায় আনতে হবে’

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

১ মে ২০২১, শনিবার, ৯:২০ অপরাহ্ন

করোনার প্রতিষেধক হিসেবে টিকা কাজ করছে। এমন  সাফল্যের কথা আসছে বাইরের দুনিয়া থেকে। বিশ্বের অনেক দেশেই ভ্যাকসিন নেয়ার কারণে সংক্রমণ কমে আসছে। মৃত্যুও কমছে সেসব দেশে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলমান রাখতে হবে। সংক্রমণ রোধ করার জন্য এটা ভীষণ প্রয়োজন। সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধিও কঠোরভাবে পালন করতে হবে। টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে এশিয়ার ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৫তম। দেশে কমপক্ষে ১৫ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। সেই হিসাবে দুই ডোজ করে টিকা দিলে মোট ৩০ কোটি ডোজ টিকার দরকার হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশে এক ডোজ টিকা নিয়েছেন এমন সংখ্যা ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৬৫৬ জন। সবাইকে টিকার আওতায় আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ দেখছেন তারা। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০২১ অনুসারে, বাংলাদেশ প্রতি ১০০ জনে তিন দশমিক তিন ডোজ টিকা দিয়েছে। আর তালিকায় সবার শীর্ষে থাকা পালাউ দিয়েছে ৭৪ দশমিক তিন ডোজ।

দেশে কত মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং সংস্থাটির উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন মানবজমিনকে বলেন, ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। সেই হিসাবে দেশে ১৫ কোটির কিছু বেশি মানুষকে টিকা দিতে হবে। জনসংখ্যা ১৭ দশমিক ৫ কোটি অনুমান করে এই হিসাব করেছে কোভিড ভ্যাকসিন প্রয়োগ পরিকল্পনায়। প্রথমে ১৮ বছরের নিচের মানুষকে টিকার পরীক্ষা নেয়া হয়নি। কিন্তু এখন এই জনগোষ্ঠীর উপরেও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাইকে ভ্যাকসিন দিতে হবে।

জাতীয় পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ১৮ বছরের উপরে ১৩ কোটি মানুষকে দেশে ভ্যাকসিন দিতে হবে। এজন্য আমাদের নিজেদের ভ্যাকসিন উৎপাদনের দিকে নজর দিতে হবে এখনই। তিনি বলেন, আমাদের এখানে করোনার যে ধরন এখন সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করেই আমাদের ভ্যাকসিন তৈরি করতে হবে। ভ্যারিয়েন্টকে প্রতিরোধ করতে পারে এমন ভ্যাকসিন তৈরি করার প্রতি জোর দেন এই ভাইরোলজিস্ট।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য মতে, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ২৮ লাখ ৫ হাজার ৬৯৪ জন। প্রথম ও  দ্বিতীয় মিলে টিকা দেয়া হয়েছে ৮৬ লাখ ২৫ হাজার ৩৫০ ডোজ। বিতরণ করা টিকা বাদ দিলে হাতে মজুত আছে মাত্র ১৫ লাখ ৭৪ হাজার ৬৫০ ডোজ। এ পর্যন্ত দেশে মোট প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৬৫৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৩৬ লাখ ৮ হাজার ৭৬৭ জন এবং নারী ২২ লাখ ১০ হাজার ৮৮৯ জন।
গত ২০শে জানুয়ারি তৎকালীন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নান জানিয়েছিলেন, কোভ্যাক্স থেকে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ হিসাবে ৬ কোটি ৮০ লাখ ভ্যাকসিন আসবে। ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ দেয়া হবে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষকে। আর ভারত থেকে কিনে আনা ৩ কোটি ডোজ দেয়া হবে এক কোটি ৫০ লাখ মানুষকে। তাতে করে ৪ কোটি ৯০ লাখ মানুষ এই দুই সোর্স থেকে আসা ভ্যাকসিন পাচ্ছেন। সঙ্গে রয়েছে উপহারের টিকা। এই হিসাবে মোট জনসংখ্যা হয় ৫ কোটির বেশি। কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি হচ্ছে যেন নিদেনপক্ষে দেশের ৮ থেকে ৯ কোটি মানুষকে টিকা দেয়া যায়, সে চেষ্টা করা হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যদি দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়া যায়, তাহলে সে দেশে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে। আমাদের মাইক্রো প্ল্যানে এই ৮০ শতাংশ মানুষকেই টিকা দেয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। মোট ৫ কোটি ১০ লাখের মানুষকে টিকা দেয়ার পরেও যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে আরো টিকা আমদানি করা হবে। আগামী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে আমাদের দেশেই ভ্যাকসিন তৈরি হবে এবং এটা অ্যাভেইলেবল হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ অর্থাৎ ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ড ইন ডাটার তথ্যমতে, চীনে ২৪ কোটি ৪০ লাখ ডোজ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বিতরণ করা হয়েছে ২৩ কোটি ৪৬ লাখ ডোজ টিকা এবং দেশটির ৪২ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে কমপক্ষে এক ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। ইসরাইলে দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন (৬৩ শতাংশ জনগোষ্ঠী কমপক্ষে এক ডোজ নিয়েছেন), ভারতে দেয়া হয়েছে ১৪ কোটি ৭০ লাখ ডোজ (৯ শতাংশ জনগোষ্ঠী কমপক্ষে এক ডোজ নিয়েছেন), পাকিস্তানে দেয়া হয়েছে ২২ লাখ ডোজ (শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ জনগোষ্ঠী কমপক্ষে এক ডোজ নিয়েছেন), ভুটানে দেয়া হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার ডোজ (৬২ শতাংশ জনগোষ্ঠী কমপক্ষে এক ডোজ নিয়েছেন), বৃটেনে দেয়া হয়েছে ৪ কোটি ১৪ লাখ ডোজ টিকা (৫০ দশমিক ২ শতাংশ জনগোষ্ঠী কমপক্ষে এক ডোজ নিয়েছেন), ব্রাজিলে ৪ কোটি ১ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন (১৩ দশমিক ৩ শতাংশ জনগোষ্ঠী কমপক্ষে এক ডোজ নিয়েছেন), জার্মানিতে ২ কোটি ৭০ লাখ (২৫ দশমিক ৭ শতাংশ জনগোষ্ঠী কমপক্ষে এক ডোজ নিয়েছেন), সৌদি আরবে ৯০ লাখ ডোজ, আরব আমিরাত- ১ কোটি ডোজ (৫১ শতাংশ জনগোষ্ঠী কমপক্ষে এক ডোজ নিয়েছেন), বাহরাইনে ১২ লাখ ডোজ (৪০ দশমিক ১ শতাংশ জনগোষ্ঠী কমপক্ষে এক ডোজ নিয়েছেন) এবং রাশিয়ায় ১ কোটি ৯০ লাখ ডোজ (৮ দশমিক ২ শতাংশ জনগোষ্ঠী কমপক্ষে প্রথম ডোজ নিয়েছেন)।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা সরবরাহ অনিশ্চিত হওয়ায় সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে স্থানীয়ভাবে কোভিড-১৯ টিকা উৎপাদনের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে। বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারীদের সঙ্গে সমন্বয় করে নীতিগতভাবে রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি ও চীনের সিনোফার্ম টিকা দেশে উৎপাদনের অনুমোদন দিয়েছে। গত বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ দেশের অভ্যন্তরে টিকার উৎপাদন সক্ষমতার প্রয়োজনের ওপর জোর দেয়ার কথা জানিয়ে বলেন, টিকাদান এক বছরের জিনিস না। টিকা উৎপাদনে সহায়তায় বাংলাদেশে টিকা উৎপাদন করতে পারে এমন ভালো কিছু ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি তা হয়ে থাকে তবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধান হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status