শেষের পাতা
সিলেট-৩ উপনির্বাচন
আতিকের ইউটার্ন এনামের পোস্টার নিয়ে নানা জল্পনা
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১ মে ২০২১, শনিবার, ৯:১৫ অপরাহ্ন
সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে ‘ইউটার্ন’ আতিকের। ফের সিলেটমুখী হয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি ছিলেন হবিগঞ্জের বাসিন্দা। তার রাজনীতির ধ্যান-জ্ঞানে ছিল হবিগঞ্জকে ঘিরে। ফের তিনি সিলেটে ফিরে আসায় দলের নেতাকর্মীদের ভেতরেই তাকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে আতিককে উদ্দেশ্য করেই দক্ষিণ সুরমা উপজেলা জাতীয় পার্টির দায়িত্বশীল দুই নেতা বিবৃতি দিয়েছেন। আর এই বিবৃতিতে তারা দলের নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক। তার নিজ বাড়ি সিলেট-৩ আসনে। ফলে এ আসনকে ঘিরে সরব ছিল আতিকের রাজনীতি। সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির এক সময়ের তুখোড় নেতা আব্দুল মুকিত খানের প্রস্তুত করা মাঠে রাজনীতি শুরু করেছিলেন তিনি। দলের চেয়ে ভোটের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি সরব আতিকুর রহমান আতিক। এ কারণে নির্বাচন এলেই তাকে নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। তিনিও নির্বাচন এলেই ঝাঁপিয়ে পড়েন ভোটের মাঠে। নিজ এলাকা সিলেট-৩ আসনে ২০০৮ সাল থেকে সুবিধা করতে পারেননি আতিকুর রহমান আতিক। প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ‘থিতু’ হয়ে বসেছিলেন এ আসনে। ফলে এ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন না পেয়ে হবিগঞ্জে চলে গিয়েছিলেন আতিক। ওখানকার রাজনীতিতে তিনি সবার কাছে পরিচিত। কিন্তু মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর আবার ‘ইউটার্ন’ দিয়েছেন আতিক। আবারো তিনি হয়েছেন সিলেটমুখী। পুরোপুরি নির্বাচনী মাঠ দখলে চালাচ্ছেন তৎপরতা। এদিকে- আতিকের এই তৎপরতায় জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরেও তোলপাড় চলছে। কেউ কেউ তার পক্ষে অবস্থান নিলেও দায়িত্বশীলরা তাকে সমঝে নিচ্ছেন না। এমনকি আতিকের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে তারা বিব্রতও হচ্ছেন। সম্প্রতি দক্ষিণ সুরমা উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক শাহ আলম ও সদস্য সচিব তাজ উদ্দিন আহমদ এপলু এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন- ‘সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো সম্ভাব্য প্রার্থী সুকৌশলে জাতীয় পার্টিকে ও দক্ষিণ সুরমার নেতাকর্মীদের হেয়প্রতিপন্ন করার চক্রান্তে মেতে উঠেছেন। তারা উপজেলা জাতীয় পার্টির এবং অধীনস্থ ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির নেতাকর্মীকে পাশ কাটিয়ে চলছেন। নতুন করে ওয়ার্ড ও সেন্টার কমিটি গঠনের কাজ গোপনে চালাচ্ছেন।’ তারা নির্বাচনী মাঠে থাকা সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন- ‘আপনারা দলের সাংগঠনিক কাঠামো এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংখ্যতা বজায় রেখে কাজ করুন। নতুবা নেতাকর্মীরা ভবিষ্যতে বিভ্রান্তিতে পড়বেন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ প্রার্থীদের আচরণে বিভ্রান্তিতে পড়ে ক্ষুব্ধ হওয়া নেতাকর্মীদের বিশৃঙ্খলা অবস্থার সৃষ্টি না করে ধৈর্য্য ধারণের আহ্বান জানান তারা।’ এদিকে- সিলেট-৩ আসনের নির্বাচনী মাঠে থাকা প্রার্থী স্যার এনাম উল ইসলামকে নিয়ে দলের ভেতরে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ তার পোস্টার ও ব্যানার নিয়ে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন কবে হবে কেউ জানি না। কারণ- করোনার কারণে এই নির্বাচন আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী কে হবে সেটি নির্ধারণ করবেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে সবাই। আওয়ামী লীগের হয়ে কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে সরব। এরমধ্যে এনাম উল ইসলামও একজন। তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা ব্যানার ও পোস্টারে সংযোজন করে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। এতে করে দলীয় নেতাকর্মীরা বিভ্রান্তিতে পড়ছে। দক্ষিণ সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জ আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন- স্যার এনাম উল ইসলাম নৌকা সংযোজন করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারেন না। এটা স্পষ্টই তার বাড়াবাড়ি। বিষয়টি তারা দলের হাই কমান্ডের কাছে জানাবেন বলে জানান। তাদের মতে- আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত দল। দলের ভেতরে এ নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে। তবে- এনাম উল ইসলামের ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন- শুধু এনাম উল ইসলামই নয়, আরো কয়েকজন প্রার্থী আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা ব্যবহার করে ব্যানার ও পোস্টার টানিয়েছেন। তাদের দেখাদেখি পরে স্যার এনাম উল ইসলামের ব্যানার ও পোস্টার বানানো হয়। সিলেট-৩ আসনে সব হিসাব পাল্টে যাচ্ছে। কারণ- এ আসনে প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী প্রার্থী হতে চাইলে নেতাকর্মীরা তার পক্ষে থাকার ঘোষণা অনেক আগেই দিয়েছেন। কেউ কেউ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোরও আগাম ঘোষণা দিয়েছেন। সম্প্রতি ফারজানা চৌধুরী নির্বাচনে নামার ইঙ্গিত দিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি সকল মহলের সহযোগিতাও কামনা করেছেন। ফলে অনেকেই ধীরে ধীরে নির্বাচনী মাঠে নীরব হয়ে পড়ছেন।