শেষের পাতা

বিটিসিএল কর্মকর্তা সুমনের মৃত্যু

সাড়ে তিন মাসেও রহস্যের কিনারা হয়নি

আল-আমিন

১ মে ২০২১, শনিবার, ৯:১৫ অপরাহ্ন

বিটিসিএল’র উপ-প্রকৌশলী আফতাবুল ইসলাম সুমনের মৃত্যুর সাড়ে ৩ মাস পার হলেও মৃত্যুর কারণ উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি  পুলিশ। প্রতিদিনের মতো ঘটনার দিন তিনি ফজরের নামাজ পড়তে গিয়ে আর বাসায় ফেরেননি। পরে গলায় দড়ি প্যাঁচানো অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয় বাড়ির পাশের নালা থেকে। পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর বলেছিল যে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়েছিল নালায়। বাড়ির পাশের নালায় বিটিসিএল প্রকৌশলীর মরদেহ উদ্ধারের সময় লাশের মুখে থাকা ভিন্ন ধরনের নতুন একটি মাস্ক পাওয়া গেছে। ওই মাস্ক থাকার কারণে তার মৃত্যুকে ঘিরে নানা রহস্য দেখা দিয়েছে। গত বছর ২৮শে ডিসেম্বর ভোরে স্থানীয় বিটিসিএল কলোনি জামে মসজিদে ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য বাসা থেকে বের হন সুমন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বাসার পাশেই ড্রেনে তার লাশ পড়ে থাকতে দেখে পরিবারের লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। সুমন মারা যাওয়ার পর তার সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন হাতিরঝিল থানার এসআই শরিফুল ইসলাম। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, নাইলনের লাল রশি গলায় ও চারতলা বিল্ডিংয়ের ছাদের ওপর পানির পাইপের সঙ্গে বেঁধে নিচে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে হাতিরঝিল থানার ওসি আব্দুর রশীদ জানান, আমরা এখনো ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাইনি। প্রতিবেদন পেলে তার মৃত্যুর রহস্য জানা যাবে।’

এ বিষয়ে হাতিরঝিল থানার এস আই শরিফুল ইসলাম জানান, সুমনের গলায় একটি লাল নাইলনের রশি বাঁধা ছিল। রশিটা ছেঁড়া ছিল। তিনি আরো জানান, ওই রশিরই অন্য অংশ তিনি যে চারতলা ভবনে থাকতেন, সেই ভবনের পানির ট্যাংকের সঙ্গে লাগানো ছিল। এর থেকে ধারণা করা হচ্ছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

পারিবারিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ‘বিটিসিএল কর্মচারী ইউনিয়নের মহাসচিব ছিলেন সুমনের বন্ধু ও সহকর্মী মুকিতুল ইসলাম হিরু। তিনি সুমনের মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। হিরু মারা যাওয়ার পর কে সিবিএর মহাসচিব হবেন এটা নিয়ে একটা স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল। অনেকই মনে করেন হিরুর পর সুমন ছিলেন সিবিএ’র মহাসচিব হওয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তি। তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কেউ কেউ তাকে পথের কাঁটা  ভেবে পরিকল্পিতভাবে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এমন কোন ক্লু পায়নি পুলিশ।
ঘটনার দিন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন যে, চারতলা থেকে প্রায় ৮০ কেজি ওজনের একজন মানুষ পড়লে যে বিকট শব্দ হবে এ রকম কোনো শব্দ আমাদের কানে আসেনি। তাছাড়া এ রকম শব্দ হলে আশপাশের বাসিন্দাদের কেউ না কেউ শুনতে পেতো।

সূত্র জানায়, ঘটনার কয়েকদিন আগে স্থানীয় একটি চা দোকানে বিটিসিএলের অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যক্তির সঙ্গে সুমনের ঝগড়া হয়েছে। ওই ঝগড়া থেকে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বিবাদ মিটান। এটাও রহস্য উদ্‌ঘাটনের মোটিভ হিসেবে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সূত্র জানায়, সুমন বিটিসিএল ভবনে একটি নিজস্ব বলয় গড়ে তুলেছিলেন। সে বলয়ে তার অনেকজন সমর্থক ছিলেন। এতে সিবিএ’র অনেক নেতার পছন্দ হয়নি। এ ছাড়াও ঘটনার দিন তার কাছ থেকে যে মাস্ক উদ্ধার হয়েছে ওই মাস্কও কোথায় থেকে এলো তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। এ বিষয়ে বিটিসিএল কলোনি মসজিদের মোয়াজ্জিন লোকমান  হোসেন সাংবাদিকদের জানান, সুমন মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি ছিলেন। আগের দিনও আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়েছেন। তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন এমন মানুষ ছিলেন না। তার মধ্যে ইসলামের গভীর জ্ঞান ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল আজিজ জানান, সুমন এলাকার লোকজনের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন। মসজিদের উন্নয়নের কাজে তিনি বাড়ি বাড়ি যেতেন। তার মৃত্যুতে এলাকার লোকজন ব্যথিত হয়েছেন। সুমনের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার ইছাপুর এলাকায়। তার বাবার নাম মীর হায়দার আলী।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status