অনলাইন

আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য ও কৃষিতে ব্যয় বাড়ানোর পরামর্শ সিপিডির

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২৯ এপ্রিল ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৩:৩৯ অপরাহ্ন

আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি বাড়িয়ে ব্যয় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার পলিসি ফর ডায়লগ (সিপিডি) বলেছে, আগামী অর্থবছরে স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলা, অর্থনীতির বিরুপ পরিস্থিতিতে প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ছোট ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা এবং কৃষি খাতকে গতিশীল করতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। একইসঙ্গে সংস্কার কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া, রাজস্ব আহরণ ঠিক রাখতে ধনীদের থেকে কর সংগ্রহ বাড়ানো, ব্যবসায় যেসব প্রণোদনা দেয়া হয়েছে সেগুলো অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার  অনলাইন মাধ্যমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশ করে সিপিডি। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের সুপারিশ তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আগামী বাজেটে সরকারি ব্যয়ে কোথায় গুরুত্ব দেয়া দরকার, সম্পদ আহরণ কেমন হবে, বাজেট ঘাটতি কিভাবে মেটাবে ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেন সিপিডির গবেষকরা।

এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের বাস্তবায়ন প্রেক্ষিত, আর্থসামাজিক খাতের করোনার প্রভাব এবং করোনা আরো কয়েক বছর থাকবে এমন ধরে নিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। চলতি অর্থবছরে কৃষি খাত কার্যকর ও গতিশীল ছিলো। রেমিট্যান্স ছাড়া বহিঃখাত ভাল যায়নি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ম্লথ গতি দেখা গেছে। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছরের বাজেট হতে হবে সম্প্রসারণমুলক। তিনি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে জিডিপির ৪ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করেন।

সিপিডির প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সংস্থাটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে বিনিয়োগ হয়নি। বাজেটের বাস্তবায়নও কম হচ্ছে। এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সরকার যে ৫ দশমিক ২ শতাংশ আশা করছে তা নাও হতে পারে। এজন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারের ব্যয় বাড়াতে হবে। সম্প্রসারণমূলক ব্যয়ের নীতি নিতে হবে। অর্থাৎ যেখানে ব্যয় করা দরকার সেখানে করতে হবে।

সিপিডি মনে করে, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে চার জায়গায় গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমত লক্ষ্যমাত্রা যেনো অবাস্তব না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কর বহির্ভূত যেসব খাত থেকে রাজস্ব সংগ্রহ বেড়েছে তা পরিস্কার করতে হবে। কর আহরণের সময় যেসব জায়গায় দূর্বলতা দেখা গেছে, সেসব দূর্বলতা দূর করতে হবে। স্বল্প মেয়াদি কর সুবিধা কী সেগুলো পরিষ্কার করে ব্যবসায়ীদের জানাতে হবে। একইসঙ্গে মধ্যমেয়াদি কর সুবিধাগুলো আলাদা করতে হবে। অনেক কর সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে। এজন্য কর ফাঁকির প্রবণতা ও পথ বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতি রোধ করতে হবে। সংস্থাটির বক্তব্য করোনার কারণে সংস্কার কর্মসূচি যেন পিছিয়ে না পড়ে।

সিপিডি ব্যবসায় যেসব সুবিধা দেয়া হয়েছে সেগুলো অব্যাহত রাখা, করোনার ওসুধ ও অন্যান্য সামগ্রী আমদানি শুল্ক মুক্ত রাখা, আমদানি করা খাদ্যদ্রব্যে আগাম আয়কর ও ভ্যাট প্রত্যাহার, ইন্টারনেটের খরচ কমানোর উদ্যোগের সুপারিশ করেছে। আর রাজস্ব আহরণ ঠিক রাখতে যাদের সক্ষমতা আছে তাদের থেকে কর সংগ্রহ বাড়ানো, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ, টিআইএনধারীদের রিটার্ন দাখিল নিশ্চিত করা, বিদেশি নাগরিকদের রিটার্ন দাখিল ও কর প্রদান নিশ্চিত করার প্রস্তাব করেছে।

বাজেটে ঘাটতি মেটাতে বিদেশি অর্থায়নে জোর দেয়ার প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি। বিদেশি অর্থ ব্যবহারের প্রস্তুতি ও যে দুর্বলতা রয়েছে তা দূর করারও পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ঋণ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। সিপিডি বলছে, ব্যাংকগুলোতে অলস তারল্য পড়েআছে। সরকার এ অর্থ ব্যবহার করতে পারে।

সংস্থাটি স্বাস্থ্য খাতের কর্মীদের প্রণোদনা দেয়া, সরাসরি কৃষকদের থেকে ধান চাল কেনার ব্যবস্থা করা, কৃষিতে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহারে প্রণোদনা দেয়া, এসএমই খাতে যে প্রণোদনা বিতরণ হয়েছে তা ফেরত দেয়ার সময় বাড়িয়ে তিন বছর করা, ছোটদের ক্ষেত্রে মওকুফ করা, ছোট ব্যবসায়ীদের করোনাকালীন সময়ে ভ্যাট ছাড় দেয়ার প্রস্তাব করেছে। রপ্তানি খাতে যারা ছোট তাদেরকে বড় ধরনের সুবিধা দেয়া, নন কটন পোশাক যারা তৈরি করছে তাদের নগদ প্রণোদনা দেয়া, শিল্প খাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে কর সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব করেছে সিপিডি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বড় প্রকল্পের চেয়ে আগামী অর্থবছরে যেখানে বেশি কর্মসৃজনের সুযোগ আছে এমন ছোট প্রকল্পে গুরুত্ব দিতে হবে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া ঠিক হবে না। কারণ এতে অনেকে কর পরিশোধ না করে সুযোগ নেয়ার জন্য বসে আছেন। দরিদ্র্য সরাসরি নগদ টাকা দেয়া এবং পারলে বছরে একাধিকবার দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে দরিদ্র শ্রেণির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা ঠিক থাকবে।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, নতুন দরিদ্র, বিদেশ ফেরত ও চাহিদা সম্পন্ন মানুষের কথা মাথায় রেখে আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ রাখতে হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status