বিশ্বজমিন

কেন ভারতের কোভিড পরিস্থিতি বিশ্বের কাছে গুরুত্বপূর্ণ

মানবজমিন ডেস্ক

২৮ এপ্রিল ২০২১, বুধবার, ৫:১৮ অপরাহ্ন

ভারতের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি পুরো বিশ্বকেই চমকে দিয়েছে। মহামারি দেশটিতে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এটি শুধু ভারতের একার সমস্যাই নয়, এটি বিশ্বের সকল মানুষের সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন বলেন, করোনাভাইরাস সীমান্ত, জাতীয়তা, বয়স, ধর্ম কিংবা লিঙ্গ মানে না। ভারতে যা হচ্ছে তা অন্য দেশেও হয়েছে।

এই মহামারি দেখিয়ে দিয়েছে যে, বিশ্বের দেশগুলো নিজেদের মধ্যে কতোখানি সংযুক্ত। তাই যখনই একটি দেশে কোভিডের উচ্চ সংক্রমণ দেখা যায়, সেখান থেকে অন্য দেশগুলোতেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পরে। সম্প্রতি নয়া দিল্লি থেকে হংকং যাওয়া একটি বিমানের ৫০ জন যাত্রীর মধ্যেই করোনা ধরা পরে। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, একাধিক পরীক্ষা এবং কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতের পরেও সংক্রমণ বেড়েই চলেছে।

তবে ভারতের পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বের চিন্তিত হওয়ার কারণ হচ্ছে এর ভ্যারিয়েন্ট। দেশটিতে করোনার একটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে। এর নাম দেয়া হয়েছে বি.১.৬১৭। ভাইরাসের ¯পাইকে দুটো প্রধান মিউটেশনের পর এই ভ্যারিয়েন্টটি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। গবেষণায় জানা গেছে, এটি তুলনামূলক অধিক সংক্রমিত হতে পারে এবং শরীরের এন্টিবডির পক্ষে এটি শনাক্ত করে আটকে দেয়াও কঠিন বলেই মনে হচ্ছে। তবে বিজ্ঞানীরা এখনো ইমিউনিটির মাত্রা বোঝার চেষ্টা করছেন। কোভিড বিশেষজ্ঞ জেফ ব্যারেট বিবিসিকে বলেন, আমি মনে করি না ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট একটি 'এসকেপ মিউটেশন'। অর্থাৎ, ভ্যাকসিন এটি প্রতিরোধ করতে পারবে। তারপরেও আমাদেরকে আরো পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এ নিয়ে আলাদা করে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।

কিন্তু যখন একটি দেশে কোভিডের উচ্চহার দেখা যায় তখন সেটি নতুন একটি আতঙ্কের কারণ হয়ে ওঠে। সেখানে নতুন ভ্যারিয়েন্ট সৃষ্টির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই যেভাবেই হোক বিশ্বকে বাঁচাতে হলে কোভিড সংক্রমণ কমিয়ে রাখার বিকল্প নেই। এ জন্য লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। তবে একইসঙ্গে ভ্যাকসিন কার্যক্রমও চালিয়ে যেতে হবে। ভারতে এখন পর্যন্ত মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছে। উভয় ডোজ পেয়েছেন মাত্র ২ শতাংশ।

যদিও বিশ্বের সবথেকে বড় ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া ভারতে অবস্থিত। দেশটিতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা বিদেশে ভ্যাকসিন রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। একইসঙ্গে জাতিসংঘের কোভ্যাক্স প্রজেক্টেও এখন ভ্যাকসিন সরবরাহ করছে না ভারত। এদিকে গ্লোবাল ভ্যাকসিন এলায়েন্স গাভি জানিয়েছে, তারা এখনো ভারতের সরবরাহ চালুর ঘোষণার অপেক্ষায় আছে। ভারতের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বজুড়ে অনেক দেশে ভ্যাকসিন কার্যক্রমে বড় প্রভাব পড়বে। আবার এর অর্থ হচ্ছে, এখন থেকে ভারতীয়রা তুলনামূলক অধিক ভ্যাকসিন পাবে। দেশটির এখনকার যে অবস্থা তাতে বিজ্ঞানীরাও বিষয়টিকে সমর্থন দিচ্ছেন। স্বামীনাথন বলেন, যত দ্রুত সম্ভব আমাদেরকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের হার দুইগুন করতে হবে।

বিশ্বজুড়ে এই মহামারি থেমে যাওয়ার কোনো নিদর্শন দেখা যাচ্ছে না। একের পর এক দেশ করোনা ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি পুরো বিশ্বের জন্য একটি সতর্ক বার্তা। এটি বলছে, আমরা কেউই ততক্ষণ নিরাপদ নই, যতক্ষণ বিশ্বের সবাই নিরাপদ নয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status