খোশ আমদেদ মাহে রমজান

রোজা আসলে হজের পূর্বাভাস

মাওলানা এমএ করিম ইবনে মছব্বির

২৬ এপ্রিল ২০২১, সোমবার, ৮:৫১ অপরাহ্ন

আজ চৌদ্দতম রমজান। পবিত্র রমজান মাসে উমরাহ্‌ এবং তার ফজিলতের আশায় জনৈক বেদুইন ব্যক্তি এই উদ্দেশ্যে ছাগল পালন করেছিল যে, সে ছাগলের বিক্রয়লব্ধ টাকা দিয়ে পবিত্র হজ পালন করবে। কিন্তু ঐ বছর আরব ভূমিতে দেখা দিলো তাউন অর্থাৎ মহামারি। অতঃপর ওই বেদুঈন ব্যক্তিটি তাঁর হজ্বের মানতকৃত টাকা গরিব অনাথদের মাঝে দান করে ফেললো। কেননা সে মহামারির কারণে পবিত্র হজ্ব করতে পারেনি। কিন্তু তাঁর প্রতিবেশী কয়েকজন বন্ধুপ্রতিম লোক স্বপ্নে দেখলো যে ওই বেদুঈন লোকটি পবিত্র কা’বা শরীফ তাওয়াফ করছে। অর্থাৎ সে হজ্ব পালন করছে। উক্ত স্বপ্ন বেদুঈন ব্যক্তির তিন-চারজন বন্ধু অবিকল স্বপ্ন দেখলেন। পরবর্তীতে তারা আল্লাহ্‌র এক ওলীর নিকট স্বপ্নের বিষয়টি বর্ণণা করেন। আল্লাহ্‌র ওই ওলী স্বপ্নের বিবরণ শুনে বললেন, যে মহান আল্লাহ্‌ পাক ওই ব্যক্তির উওম নিয়তের কারণে তাঁকে হজ্বের সমান সওয়াব দান করেছেন। (তথ্যসূত্র ইব্‌নে হাব্বান)। রাসূলে পাক সা: এরশাদ করেন- ইন্নামাল আমালু বিন্‌ নিয়াত। অর্থাৎ প্রত্যেক আমল নির্ভরশীল, তার নিয়তের উপর। সুতরাং মহামারি করোনাভাইরাসকালীন রমজান মাসে অনেকেই উমরাহ্‌ হজ্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু এবারের করোনাভাইরাসকালীন সময়ে তা অনেকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় আপনাদের সেই উমরাহ্‌ হজ্বের মানতকৃত টাকা পাড়া-প্রতিবেশী গরিব-দুঃখী, মিসকীন, এতিম অসহায়, অনাথদের মাঝে বিলিয়ে দেয়াটাই উওম।
হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌নে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী করিম (সা:) হজ্ব থেকে এসে উম্মে সিনান আনসারীকে বললেন, তুমি কেন হজ্ব করোনি? সে বললো অমুকের পিতা অর্থাৎ তার স্বামীর কারণে তার চাষাবাদের দু’টি উট ছিল। একটি দিয়ে সে হজ্ব করেছে অপরটি আমাদের জমি চাষ করেছে। নবী করিম (সা:) বললেন, নিশ্চয়ই রমজান মাসের উমরাহ্‌ হজ্ব আমার সঙ্গে বড় হজ্ব করার সমান (বোখারী শরীফ-১৭৬৪, মুসলিম শরীফ-১২৫৬)।
অপর বর্ণনায় নবী করিম (সা:) বলেছেন, যখন রমজান আগমন করে তখন উমরাহ্‌ হজ্ব করো, কারণ রমজান শরীফের উমরাহ্‌ হজ্ব বড় হজ্বের সমান (বোখারী-১৬৯০, মুসলিম- ১২৫৬)।
পবিত্র কোরআনুল করিমে আল্লাহ্‌ পাক ঘোষণা করেন, তোমরা মহান আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্য পবিত্র হজ এবং উমরাহ্‌ সম্পূর্ণ কর (সূরা বাকারা-১৯৬)।
রমজান শরীফের রোজা আসলে হজ্বের পূর্বাভাস। উমরাহ্‌র সঙ্গে তুলনা করলে ফরজ হজ্বকে হজ্বে আকবর অর্থাৎ বড় হজ্ব এবং উমরাহ্‌কে হজ্বে আসগর অর্থাৎ ছোট হজ্ব বলা যায়।
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত- নবী করিম (সা.) বলেছেন, দুইটি উমরাহ্‌ হজ্ব মধ্যবর্তী গুনাহের কাফ্‌ফারা হয়ে যায় এবং হজ্বে মাবরুরের পুরস্কারই হচ্ছে বেহেশ্‌ত (বোখারী শরীফ)।
হযরত ইব্‌নে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত- রাসূলে পাক (সা:) বলেন, আল্লাহ্‌পাক কাবাগৃহের হজ্ব পালনকারীদের প্রতিদিন ১২০টি রহমত নাজিল করেন। এর মধ্যে ৬০টি তাওয়াফকারীর, ৪০টি নামাজ আদায়কারীর এবং ২০টি তাদের জন্য যারা কাবামুখী হয়ে বসে থাকেন (তাবরানি) ।
রাসূলে পাক সা: আরও বলেন, বিশটি সওয়াব তাদের জন্য, যারা পবিত্র কাবামুখী হয়ে ইবাদত করে (রেওয়াহু তিবরানী)।
হযরত জাবির ইব্‌নে আবদুল্লাহ (রা:) থেকে বর্ণিত- নবী করিম (সা:) বলেন, আমার এই মসজিদ অর্থাৎ মসজিদুন নববীতে নামাজ আদায় মাসজিদুল হারাম ব্যতীত অন্যান্য মসজিদে নামাজ আদায়ের চাইতে হাজার গুণ শ্রেষ্ঠ। আর মসজিদুল হারামে নামাজ আদায় লক্ষগুণ শ্রেষ্ঠ (আহমদ)।

হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত- নবীয়ে করিম (সা:) বলেন, তুমি কি জান না হজ্ব অথবা উমরাহ্‌ হজ্ব ইসলাম পূর্ববর্তী গুনাহ্‌সমূহ মাফ করে দেয় (মুসলিম শরীফ)।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status