প্রথম পাতা

অজান্তে টাকা কেটে নেয়া হচ্ছে মোবাইল গ্রাহকদের

কাজী সোহাগ

২২ এপ্রিল ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:৩২ অপরাহ্ন

নিউজ অ্যালার্ট, ওয়েলকাম টিউন, গান, ওয়ালপেপার, ভিডিও, বিভিন্ন তথ্য (কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ধর্ম ইত্যাদি বিষয়ক), লাইফস্টাইল, মোবাইল গেম, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ইত্যাদি সেবার নামে গ্রাহকদের পকেট থেকে কেটে নেয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। গ্রাহকরা না চাইলেও এসব সেবা দিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) অভিযোগের পাহাড় জমেছে। এ প্রসঙ্গে বিটিআরসি জানিয়েছে, সমপ্রতি টিভ্যাস সংক্রান্ত বিষয়ে গ্রাহক পর্যায়ে কিছু অভিযোগ পাওয়া যায়। যেমন-গ্রাহকের অজান্তে টিভ্যাস সার্ভিস অ্যাক্টিভেট করে টাকা কেটে নেয়া, অপ্রয়োজনীয় সেবা চালু করে দেয়া ইত্যাদি। বিটিআরসি’র প্রাপ্য রাজস্ব পরিশোধ না করাসহ গ্রাহক স্বার্থ বিবেচনায় বিটিআরসি টিভ্যাস রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটধারী প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন শুরু করে। ইতিমধ্যে ১১টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন সম্পন্ন করেছে এবং এদের মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বেশকিছু ব্যত্যয় পাওয়া যায়। বিটিআরসি আরো জানায়, এর প্রেক্ষিতে ব্যত্যয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কমিশন হতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং এরূপ পরিদর্শন কার্যক্রম চলমান থাকবে। ইতিমধ্যে উইন মিয়াকি লিঃ, মিয়াকি মিডিয়া লিঃ ও বিনবিট মোবাইল এন্টারটেইনমেন্ট লিঃ নামক তিনটি প্রতিষ্ঠানকে প্রশাসনিক জরিমানা আরোপ করা হয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানসমূহের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এদিকে বিটিআরসি’র কার্যক্রমের কঠোর সমালোচনা করেছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। এর সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে টেলিকমিউনিকেশন ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস প্রতিষ্ঠান অনৈতিকভাবে অর্থ আদায়ের দায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন কিছুতেই এড়িয়ে যেতে পারে না। গ্রাহকদের দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ছিল তার অজান্তেই কিংবা তার অনুমতি ছাড়াই তার মোবাইল থেকে টাকা কেটে নেয়া হচ্ছে। আমরাও এ বিষয়ে গ্রাহকদের তথ্য-উপাত্তসহ কমিশনের বিগত চেয়ারম্যান এবং বর্তমান চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করে বলেছিলাম অনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টেলিকমিউনিকেশন ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস। তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের কোনো প্রয়োজন নেই এমন দাবি করেছিলাম। আমরা এও বলেছিলাম যে, যদি কোনো গ্রাহকের এই ধরনের সার্ভিসের প্রয়োজন হয় তাহলে স্বয়ং গ্রাহক নিজেই মুঠো ফোন অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করে সার্ভিস গ্রহণ করবেন। কিন্তু কমিশন আমাদের কথার কোনো মূল্য দেয়নি। এমন কি কমিশন থেকে যখন বলা হলো দুটি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের অজান্তে ৪৫ ও ৩০ লাখ টাকা লুটপাট করেছে। আমরা কমিশনের কাছে আবেদন করলাম যে, গ্রাহকদের টাকা গ্রাহকদের ফেরত দেয়া হোক। এ ব্যাপারে আজ পর্যন্ত কমিশন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে আমাদের জানা নেই। তিনি বলেন, কমিশন থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হলো তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জরিমানা করেছে এবং আরো ১১টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। হঠাৎ করে কমিশন কেন এ ব্যবস্থা নিলো সেটি পর্যালোচনা করলেই দেখা যায় যে, এসব সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কমিশন ৬ দশমিক ৫ ভাগ রাজস্ব ভাগাভাগির অর্থ পেয়ে থাকে। অডিট রিপোর্ট জমা না দেয়া ও ভাগাভাগি অর্থ না দেয়ার কারণেই কমিশন মূলত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গ্রাহকদের অভিযোগের বিষয়টি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি। এতে প্রতীয়মান হয় যে, কমিশন তাদের রাজস্ব সংগ্রহ বিষয়টি মাথায় রেখে তদন্ত ও শাস্তির ব্যবস্থা নিয়েছে। যেহেতু কমিশন অনৈতিক অর্থের ভাগ পায় তাই গ্রাহকদের অর্থ লুটপাটের দায় কমিশন এড়াতে পারে না। তিনি বলেন, সরকারের কাছে দাবি করতে চাই এসকল অনৈতিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের সঙ্গে কমিশনের  ভেতরে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী জড়িত আছে কিনা সে বিষয়টিও তদন্ত করে দেখার। এবং আজ আবারো দাবি করে বলতে চাই গ্রাহকদের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে আদায়কৃত অর্থ গ্রাহকদের ফেরত দেয়া হোক। না হলে ভবিষ্যতে আমরা মহামান্য আদালতের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হবো। প্রসঙ্গত বাংলাদেশে ২০১০ সালের দিকে স্বল্প পরিসরে টিভ্যাস সেবা প্রদান শুরু হয়। কিন্তু ২০১৮ সাল নাগাদ এর ব্যবহার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিটিআরসি হতে টিভ্যাস রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়। সে সময় হতে টিভ্যাস রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট প্রদান শুরু করা হয়। বর্তমানে বিটিআরসি’র অনুমোদিত টেলিকমিউনিকেশন ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (টিভ্যাস) প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ১৮২টি। টিভ্যাস প্রোভাইডারগণ চারটি মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির মাধ্যমে মোবাইল গ্রাহকদের শর্টকোড, এসএমএস, আইভিআর, ওয়াপ, মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিভ্যাস সেবা দিয়ে থাকে। সেবার বিনিময়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রাপ্য অর্থের একটা অংশ সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী মোবাইল অপারেটররা পেয়ে থাকে। এ ছাড়াও টিভ্যাস প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অর্জিত রাজস্বের মোট ৬ দশমিক ৫ ভাগ বিটিআরসি/সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status