অনলাইন

ডাক্তার-পুলিশ বাকবিতণ্ডা : পাল্টাপাল্টি বিবৃতি

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ এপ্রিল ২০২১, সোমবার, ৯:৩৬ অপরাহ্ন

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে চিকিৎসক, পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের বাক-বিতণ্ডার ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশের কর্মকাণ্ডের  প্রতিবাদ জানিয়েছে, বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যদিকে ডাক্তারের অসৌজন্যমূলক কর্মকাণ্ডের  প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশন সার্ভিস।
ডক্টরস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ডা. শাহ মো. জাকির হোসেন সুমন স্বাক্ষরিত প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ১৮ই এপ্রিল ২০২১ এ রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাইদা শওকত জেনীর ব্যবহৃত গাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো, স্টিকার এবং বিশেষ অনুমতি থাকা সত্ত্বেও তা অন্যায়ভাবে আটকানো হয়। তিনি নিজের পরিচয় দেয়ার পরেও বাগবিতণ্ডায় জড়ানো হয়। এছাড়াও তাকে উত্তেজিত করার উদ্দেশ্যে ‘ভুয়া চিকিৎসক’ এবং ন্যক্কারজনকভাবে ‘পাপিয়া’ নামে অভিহিত করা হয়। পরবর্তীতে সেই বাকবিতণ্ডার দৃশ্য খণ্ডাকারে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ইলেট্রনিক মিডিয়াতে ছড়ানো হয়। এতে সারা দেশের চিকিৎসক সমাজের মধ্যে প্রচণ্ড  ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন (বিডিএফ) উক্ত ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

এতে আরো বলা হয়, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে করোনাকালীন সময়ে ফ্রন্টলাইনার হিসাবে চিকিৎসকদের মনোবল ধরে রাখা আবশ্যক বলে আমরা মনে করি। এমতাবস্থায় উক্ত ভিডিও খণ্ডাকারে কে বা কারা কি উদ্দেশ্যে ভাইরাল করেছে, সেটি তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। উপরন্তু লকডাউন চলাকালীন সময়ে চিকিৎসকবৃন্দ যাতে  নির্বিঘ্নে কর্মস্থলে যাতায়াত করতে পারেন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা একান্ত কাম্য। উক্ত ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে লকডাউনের সময়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন লঙ্ঘন করে চিকিৎসকদের কর্মস্থলে যেতে হেনস্তার সঙ্গে জড়িত সকলকে বিচারের আওতায় আনার দবি জানায় বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন (বিডিএফ)।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ডা. মোছা. সাঈদা শওকত দায়িত্ব পালন শেষে অত্র প্রতিষ্ঠানের লোগো সম্বলিত গাড়িতে আরোহিত অবস্থায় এলিফ্যান্ট রোডে পৌঁছার পর কর্তব্যরত পুলিশের টহলদল কর্তৃক তাকে থামানো হয়। পরিচয় চাওয়া হলে তিনি নিজেকে চিকিৎসক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থাকার পরিচয় জানান। পক্ষান্তরে, উক্ত টহলদল তার চিকিৎসক পরিচিতিকে ‘ভুয়া’ বলে অভিহিত করে। অসৌজন্যমূলকভাবে তাকে গাড়ি থেকে নামতে বলা হয়। এ সময় তিনি তার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সম্বলিত অ্যাপ্রোন পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। উল্লেখ্য, অ্যাপ্রোন বিশ্বব্যাপী চিকিৎসকগণের পরিধেয় পেশাগত পোশাক হিসেবে বিবেচিত হয়। পরবর্তীতে, দায়িত্ব পালনকারী পুলিশের আচরণে এবং তার পরিচিতি ভুয়া হিসাবে অভিহিত করার প্রেক্ষিতে ডা. মোছা. সাঈদা শওকত বিক্ষুব্ধ হন এবং পুলিশের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় লিপ্ত হন, যার খণ্ডকালীন সচিত্র প্রতিবেদন সামাজিক মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে।

বিষয়টি চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, এ ঘটনা দেশব্যাপী চিকিৎসাসেবা ব্যাহত করার শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। চিকিৎসককে হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীগণের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, চিকিৎসকের অসৌজন্যমূলক আচরণের কথা উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন। এসোসিয়েশনের সভাপতি মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ওই ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, পুলিশের উপস্থিতিতে একজন বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনৈক চিকিৎসককে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে তিনি অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। একজন পেশাদার ও সচেতন নাগরিকের কাছ থেকে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তিনি শুধু এই পুলিশ সদস্যদেরই অপমান করেননি, গোটা পুলিশ বাহিনীকেই কটাক্ষ ও হেয় প্রতিপন্ন করেছেন যা মিডিয়া চিত্রে প্রতীয়মান। শুধু তাই নয় তিনি নিজ পেশার পরিচয় বাদ দিয়ে অপ্রাসঙ্গিক পরিচয় তুলে ধরে পুলিশ ও বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর সামনে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন এবং জাতির সামনে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করেছেন। উক্ত চিকিৎসক বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাদানুবাদকালে যে শব্দ প্রয়োগ করেছেন তা অত্যন্ত অরুচিকর ও লজ্জাজনক। তিনি কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ‘তুই’ বলে সম্মোধন করেছেন এবং আর ‘আমি কি সেটা এখন তোদের দেখাচ্ছি হারামজাদা’ বলে হুমকি দিয়েছেন।

পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যকে চিকিৎসক কর্তৃক অপেশাদার অরুচিকর আচরণে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি পুলিশ অত্যন্ত মর্মাহত। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের বৈধ আদেশ লঙ্ঘন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের নিকট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status