অনলাইন

মৃত্যুর স্কোর বোর্ড, ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি

সাজেদুল হক

১৮ এপ্রিল ২০২১, রবিবার, ১১:২৯ পূর্বাহ্ন

মায়ের জন্য একটি আইসিইউ বেড জোগাড়ে ছেলের আকুতি। যদি নিজের জীবনের বিনিময়েও মাকে বাঁচানো যায়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মাকে বাঁচানো যায়নি। আইসিইউ বেডের জন্য অপেক্ষায় বহু মানুষ। কেউ মারা গেলে অথবা সুস্থ হয়ে রিলিজ পেলে একটি সিট মিলছে। কি নিষ্ঠুর অপেক্ষা! অক্সিজেন সিলিন্ডার নিজের শরীরের বেঁধে মোটরসাইকেলে করে মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন ছেলে। বরিশালের এমন একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আহা কি সময়!

শুরুটা এক বছরের বেশি সময় আগে। অদৃশ্য এক ভাইরাস। পুরো পৃথিবীটাই ওলটপালট করে দিয়েছে। মৃত্যুর স্কোর বোর্ড। প্রতিদিন এই সংখ্যা বড় হচ্ছে। বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে। শনাক্ত হয়েছেন ১৪ কোটির বেশি রোগী। বাংলাদেশেও মৃত্যু ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না। এটি কেবল অফিসিয়াল সংখ্যা মাত্র। বাস্তবে এ সংখ্যা আরো বেশি। গত দুদিনে প্রতিদিনই একশ’র বেশি মানুষ মারা গেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই সংখ্যা আরো বাড়বে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, করোনার তীব্রতা বেড়েছে। আক্রান্ত রোগীরা খুব দ্রুত মৃত্যুবরণ করছে। ২৮শে জানুয়ারি থেকে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত দেখা যায়, রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির হার ছিল ৪৪%। মৃতদের মধ্যে ৫২% উপসর্গ শুরুর ৫ দিনের মধ্যেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো। মৃত রোগীদের মধ্যে ৪৮% হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ৫ দিনের মধ্যে মারা গেছেন। ১৬% মৃত্যুবরণ করেন ভর্তির ৫-১০ দিনের মধ্যে। গত বছরের চেয়ে নারীরা বেশি মৃত্যুবরণ করছে। এছাড়া এই সময়ে দেশে মানসিক সমস্যাও বেড়ে যাচ্ছে।

টিকা নিয়ে আশা জেগেছিল একসময়। কিন্তু এখন তৈরি হয়েছে নানা সংশয়। মুক্তবাজার অর্থনীতি আর স্বার্থপর পৃথিবীতে প্রথম টিকার অগ্রাধিকার পাচ্ছে উন্নত দুনিয়ার মানুষেরাই। ধনী ও প্রভাবশালী দেশগুলোর জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ টিকা নিতে পারলেও অনেক গরিব দেশ এখনো টিকা পায়ইনি। বাংলাদেশ টিকা নিয়ে আশা জাগানিয়া শুরু করলেও এখন তা হোঁচট খেয়েছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট প্রতিশ্রুত টিকা সরবরাহ করছে না। মূলত ভারতীয় সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণেই সেরাম বিভিন্ন দেশকে সময়মতো টিকা পৌঁছাতে পারছে না। তবে টিকা দিয়েও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না করোনার ব্যাপারে। কারণ টিকা কতদিন কাজ করবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তারচেয়ে বড় ব্যাপার চরিত্র বদল করা করোনার ক্ষেত্রে টিকা কতটা কাজ করবে তাও বুঝা যাচ্ছে না।
এই অনিশ্চিত অবস্থায় দেশে চলছে লকডাউন। জীবনের পাশাপাশি বহ মানুষ লড়ছে জীবিকার জন্য। অসম সমাজে বেঁচে থাকাই যেন দায়। আবার স্বার্থপরতা আর যেকারণেই হোক না কেন একজনের দুর্ভোগ এখন অন্যকে অতোটা স্পর্শ করে না। স্বাস্থ্যকর্মী ইশান জাহান গণমাধ্যমকে বলছিলেন, আসলে এটা খুবই দুঃখজনক যে সাধারণ মানুষ বুঝতেই পারছেন না যে পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক। যখন একজন রোগী নিয়ে হাসপাতালে যান তখন সেই ব্যক্তিটাই বুঝেন যে, হাসপাতালের একটা সিট পাওয়ার জন্য, একটা অক্সিজেনের সিলিন্ডারের জন্য, একটা আইসিইউ বেডের জন্য কী পরিমাণ হাহাকার চলছে।

এই হাহাকার ও অসহায় সময়ে আসলে বাঁচার চেষ্টা ছাড়া আর কিইবা করার আছে। চারদিকে ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status