প্রথম পাতা

দরজা ভেঙে তারেক শামসুর রেহমানের লাশ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার

১৮ এপ্রিল ২০২১, রবিবার, ৯:১৭ অপরাহ্ন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, রাজনীতি বিশ্লেষক ড. তারেক শামসুর রেহমানের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে রাজধানীর তুরাগ থানাধীন ১৮ নম্বর সেক্টরের রাজউক ফ্ল্যাট প্রকল্পের দোলনচাঁপা ভবনের ১৩০৪, নম্বর ফ্ল্যাট থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিজের এই ফ্ল্যাটে তারেক শামসুর রেহমান একাই থাকতেন। পুলিশের ধারণা, শুক্রবার রাতের যে কোনো সময় হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তার লাশ গতকাল রাতে সোহ্‌রাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। সেখানে পোস্টমর্টেমের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ড. তারেক শামসুর রেহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তিনি এ বিভাগের চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন। ড. তারেকের মৃত্যুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ইউজিসি ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে।

নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল পৌনে ৮ টার দিকে তার ফ্ল্যাটে কর্মরত গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম দরজা নক এবং কলিংবেল বাজান। প্রায়  পৌনে ১  ঘণ্টা ধরে ডাকাডাকি করার পর তিনি কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ভবনের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্‌কে বিষয়টি জানান। জিন্নাহ্‌ এ বিষয়টি ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে থানা পুলিশকে জানাতে বলেন। পরে তুরাগ থানা পুলিশ বাসায় এসে ভবনের অন্যান্য লোকজনের সহযোগিতায় ভেতর থেকে ছিটকানি লাগানো দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখতে পান যে, ডাইনিং রুমের লাগোয়া বাথরুমের ভেতরে এক পা এবং বাইরে দেহের অন্য অংশ পড়ে আছে। সেখানে রক্ত ও বমি ছড়িয়ে ছিল। তার পরনে ছিল সাদা রঙের স্যান্ডো গেঞ্জি ও কালো রঙের প্যান্ট। ডান পায়ে একটি মোজাও ছিল। প্যান্টের দুই পায়ের কাপড় হাঁটু পর্যন্ত ভাঁজ করা ছিল। নাক দিয়ে রক্ত ঝরে তা শুকিয়ে গেছে। ডান কাঁধে ঠেস দিয়ে কাত হয়ে তিনি মেঝেতে পড়ে ছিলেন। ডান হাত বুকের সঙ্গে স্পর্শ করা ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তার বেডের ওপরও রক্তবমি দেখা গেছে। তবে শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পরে সিআইডি’র ক্রাইম সিনের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত উদ্ধার করেন।

গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম মানবজমিনকে জানান, প্রত্যেকদিন তিনি সকালে এসে কলিং বেল বাজান। স্যার (তারেক) নিজেই খুলে দেন। কিন্তু, গতকাল সকালে এসে ঘণ্টাখানেক দরজা নক ও কলিং বেল বাজিয়ে কারও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে তিনি ফ্ল্যাটের লোকজনকে জানান। তিনি আরও জানান, স্যার খুব জরুরি ছাড়া বাসার বাইরে যেতেন না। বাজার-সদাই নিজেই পাশের শমিং মল থেকে নিয়ে আসতেন। জরুরি কাজ ছাড়া তিনি বাইরে যেতেন না। তার নিজস্ব স্টাডি রুমে সব সময় বই পড়া ও লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন।

দোলনচাঁপা ভবনের সুপার ভাইজার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্‌ জানান, সর্বশেষ শুক্রবার সকাল ৮ টার দিকে ভবন থেকে বাজার করতে বের হয়েছিলেন। সেটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে রেকর্ড আছে। তিনি খুব জরুরি ছাড়া কথা বলতেন না।   

এ বিষয়ে মৃতের খালাতো ভাই বদরুল আলম সাংবাদিকদের জানান, ড. রেহমানের স্ত্রী এবং এক কন্যাসন্তান থাকেন আমেরিকায়। এই ফ্ল্যাটে তিনি একাই থাকতেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি  আমরা তার স্ত্রী-সন্তানকে জানিয়েছি। মৃতের ভাই মিঠু থাকেন পিরোজপুরে। তিনি এলাকা থেকে রওনা দিয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তার উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ছিল। এ বিষয়ে দোলনচাঁপা ফ্ল্যাটের সভাপতি প্রফেসর একরামুল হক জানান, গত ২ বছর হলো তিনি এ ফ্ল্যাটটি কিনেছেন। সকালে হাঁটার সময় তার সঙ্গে দেখা হতো। তবে করোনাকালীন সময়ে তার সঙ্গে কম দেখা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা অঞ্চলের ডিসি মো. শহীদুল্লাহ জানান, বাসার গৃহকর্মীরা তাকে অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে তার লাশ উদ্ধার করে। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি যে, অধ্যাপক শামসুর রেহমান হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। সিআইডি’র ক্রাইম সিন এসে আলামত সংগ্রহ করেছে। ময়নাতদন্তের পর তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

বাংলাদেশ, দক্ষিণ এশিয়া ও বৈশ্বিক রাজনীতি নিয়ে বই লেখার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখতেন। বছর দুই আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরে যান ড. রেহমান। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রির অধিকারী ড. তারেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ইরাক যুদ্ধ পরবর্তী আন্তর্জাতিক রাজনীতি, গণতন্ত্রের শত্রু-মিত্র, নয়া বিশ্ব ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, বিশ্ব রাজনীতির চালচিত্র, উপ-আঞ্চলিক  জোট, ট্রানজিট ইস্যু ও গ্যাস রপ্তানি প্রসঙ্গ, বাংলাদেশ: রাষ্ট্র ও রাজনীতি, বাংলাদেশ: রাজনীতির ২৫ বছর, বাংলাদেশ: রাজনীতির চার দশক, গঙ্গার পানি চুক্তি: প্রেক্ষিত ও সম্ভাবনা,  সোভিয়েত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর ইত্যাদি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আইভিপি ফেলো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status