দেশ বিদেশ

বিশেষজ্ঞ মতামত

ভারতের বিরুদ্ধে পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে চীন

অনলাইন ডেস্ক

১৭ এপ্রিল ২০২১, শনিবার, ১:৩০ অপরাহ্ন

ভারত সীমান্তের কাছেই তিব্বতের বৃহত্তম নদী ইয়ারলুং জাংবুতে একটি সুপার বাঁধ নির্মানের পরিকল্পনা করেছে চীন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন চীন নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে ভারত নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল পৃথক করার জন্য অনুমিত সীমারেখা লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের (এলএসি) কাছে এই বাঁধ নির্মাণ করা হবে, এর মাধ্যমে বেইজিং মূলত নদীটির পানি নিয়ন্ত্রন এবং তা ভারতের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে।

স্বায়িত্ত¡শাসিত অঞ্চল তিব্বত থেকে উৎপন্ন ইয়ারলুং জাংবু নদী ভারতের অরুনাচল প্রদেশে প্রবাহিত হয়েছে, সেখানে নদীটি ‘সিয়াং’ নামে পরিচিত। নদীটি আসাম রাজ্যে ‘ব্র²পুত্র’ নামে প্রবাহিত হয়ে তা বাংলাদেশেও প্রবেশ করেছে। এই নদীতে চীনের পরিকল্পনা অনুযায়ি বিশাল বাঁধ নির্মাণ করা হলে তা ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে চরম পানিসংকট তৈরি করবে।

ওাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত¡ সংবাদ সংস্থা স্পুটনিকের প্রতিবেদন অনুযায়ি,পরিকল্পিত বাঁধটির জলবিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা চীনের বর্তমান থ্রি জর্জেস ড্যামের তিনগুন বেশি হবে। উল্লেখ্য, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতায় ২০১২ সাল থেকে বিশ্বে সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ স্টেশন এই থ্রি জর্জেস ড্যাম।

চীনের ১৪তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২৫) প্রস্তাব উত্থাপনকালে এই সুপার ড্যাম পরিকল্পনাটি প্রকাশ করা হয়। চায়নিজ কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সেন্ট্রাল কমিটি আগামি ২০৩৫ সালের মধ্যে বাঁধটি নির্মান করবে। বাঁধটি বছরে ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট পরিস্কার, নবায়নযোগ্য এবং জিরো-কার্বন নিঃসরিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে বলে জানা গিয়েছে।

হাইড্রোজিয়োলজিস্ট রিতেশ আরিয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আন্তঃসীমান্তিয় নদীগুলোর ক্ষেত্রে কৌশলগত সুবিধায় ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে চীন। তারা বলছে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং জমিতে সেচের জন্যই তারা এ বাঁধটি নির্মাণ করছে। কিন্তু প্রকৃত বিষয় হলো চীন পানি নিয়ন্ত্রন করতে চাইছে এবং তা ভারতের বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে। অদূর ভবিষ্যতে ভারতের কৌশলগত অবস্থানের জন্য যা বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘তিব্বতের মালভূমি বেয়ে অনেক নদীই বিভিন্ন দেশে প্রবাহিত হয়েছে। চীন তিব্বতকে নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি জলবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পকে ভারতের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে এই হুমকি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। উপযুক্ত প্লাটফর্মে বিষয়টি উত্থাপন করে চীনকে এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণে রাখা যেতে পারে।’

সিডনিভিত্তিক একটি স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থা লউলি ইনস্টিটিউট গত জুলাইয়ে ‘ভারত-চীন সম্পর্ক এবং পানির ভূরাজনীতি’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘তিব্বতের পানির ওপর স্পষ্ট মালিকানা দাবি করার মাধ্যমে এশিয়ার সবচেয়ে সাতটি শক্তিশালী নদীর (ইন্দুস, গঙ্গা, ব্রক্ষ¥পুত্র,ইরাবতী,সালওয়েন, ইয়াংজি এবং মেকং) নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে চায় চীন। এই নদীগুলো পাকিস্তান,ভারত,বাংলাদেশ,মিয়ানমার,লাওস এবং ভিয়েতনামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।’

প্রতিবেদনটিতে প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ি , প্রতি বছর তিব্বতের মালভূমি ও শিনজিয়াং এবং অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলিয়া হয়ে প্রতিবেশি দেশগুলোয় ৭১৮ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয়। আর এই পানির ৪৮ শতাংশই সরাসরি ভারতে প্রবেশ করে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status