শেষের পাতা

সিলেটে পরকীয়া নিয়ে তুলকালাম

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১৭ এপ্রিল ২০২১, শনিবার, ৯:০৪ অপরাহ্ন

জাকারিয়া-ফারহানার পরকীয়া জন্ম দিলো অনেক ঘটনার। এ নিয়ে জকিগঞ্জ থানায় হয়েছে পাল্টাপাল্টি মামলা। কোমরে লোহার জিঞ্জির বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার প্রেমিকা ফারহানা এখন কারাগারে। মামলার আসামি হলেন জাকারিয়াও। ঘটনাটি নিয়ে জকিগঞ্জে তোলপাড় চলছে। জকিগঞ্জের কামালপুর গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে জাকারিয়া আহমদ। আর একই গ্রামের প্রবাসী আতাবের স্ত্রী ফারহানা বেগম। দু’জনের পরকীয়া চলছিল বেশ ক’বছর ধরে। আতাব সিঙ্গাপুর প্রবাসী হওয়ায় জাকারিয়া ও ফারহানা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তারা অবাধে মিলামেশা করতো। এসব ঘটনা জানতেন এলাকার মানুষও। গ্রামের সবার কাছে অনেক আগেই ধরা পড়ে তাদের সম্পর্কের বিষয়টি। ফারহানার দাবি ছিল, জাকারিয়া তার সঙ্গে অন্তরঙ্গ অবস্থায় মেলামেশার ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করছিল। এ নিয়ে জাকারিয়াকে শত অনুরোধ করলেও সে ওই ভিডিও ডিলিট করেনি। বিষয়টি পুলিশকে অবগত করা হলেও জকিগঞ্জ থানা পুলিশ এতে গুরুত্ব দেয়নি। ঘটনা গত মঙ্গলবারের। ওই দিন প্রেমিক জাকারিয়া বিয়ে করে নতুন বউ ঘরে তুলে। পাশের বাড়ি হচ্ছে ফারহানার। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তারাবির নামাজের সময় ফারহানা নতুন বউ দেখতে জাকারিয়ার বাড়িতে আসেন। এ সময় বউকে দেখার পর ফারহানার সঙ্গে দেখা হয় জাকারিয়ার। এ সময় ফারহানা জাকারিয়াকে অনুরোধ করেন তার কাছে থাকা ভিডিও ফুটেজকে মুছে ফেলার। জাকারিয়া অনুরোধ মানেনি। উল্টো ভিডিওটি ইন্টারনেটে ছাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এ নিয়ে জাকারিয়া ও ফারহানার মধ্যে বিয়ে বাড়িতেই কথা কাটাকাটি হয়। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের সময় জাকারিয়ার পরিবারের সদস্যদের নজরে আসে বিষয়টি। এগিয়ে আসেন জাকারিয়ার ফুফু সালেহা বেগম। এ সময় হাতাহাতির ঘটনা ঘটলে সালেহা বেগম, জাকারিয়াসহ কয়েকজন মিলে ফারহানাকে লোহার জিঞ্জির দিয়ে বেঁধে ফেলেন। তারা ফারহানাকে বেধড়ক মারধর করে। খবর পেয়ে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। পরে জাকারিয়ার ফুফু সালেহা বেগম বাদী হয়ে ফারহানার বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ফারহানা গ্রেপ্তারের পর জকিগঞ্জ থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। কারণ পুলিশ লোহার জিঞ্জির দিয়ে বাধা অবস্থায় ফারহানাকে উদ্ধার করেছিল। তাকে মারধর করা হয়েছে। বাধা অবস্থায় উদ্ধারের সময় ফারহানা জকিগঞ্জ থানা পুলিশকে জানিয়েছিল যে, তাকে মারধর করে বেঁধে রাখা হয়েছে। জাকারিয়ার কাছে রাখা ভিডিও ফুটেজ মুছে দেয়ার কথা বললেই তাকে মারধর করা হয়। কিন্তু পুলিশ ফারহানার বক্তব্য না শুনেই একতরফা মামলা রেকর্ড করে তাকে কারাগারে পাঠায় বলে জানান ফারহানার স্বজনরা। এদিকে স্ত্রীর এমন অবস্থায় ফারহানার স্বামী আপ্তাব উদ্দিন আতাব জানিয়েছেন, পরিবারের দুঃখ ঘুছাতে তিনি প্রায় ১০ বছর সিঙ্গাপুরে ছিলেন। ওই সময় পার্শ্ববর্তী বাড়ির জাকারিয়া আহমদ তার বাড়িতে খরচ এনে দিতো। বিগত কয়েক বছর থেকে জাকারিয়া তার অগোচরে স্ত্রী ফারহানার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলে নিজের মোবাইলে বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও তুলে রাখে। তিনি দেশে এসে নিজ স্ত্রীর সঙ্গে জাকারিয়ার পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টি বুঝতে পেরে তাকে বাড়িতে আসতে নিষেধ করেন। তবুও সে মোবাইলে সম্পর্ক রেখে সময় সময় ধর্ষণের চেষ্টা করে। ঘটনার দিন তিনি তারাবির নামাজ পড়তে বের হলে জাকারিয়া মোবাইল ফোনে তার স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের হতে বললে তিনি বের হন। এ সময় সে জড়িয়ে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় স্ত্রী শোর-চিৎকার শুরু করলে পার্শ্ববর্তী জাকারিয়ার বাড়ির লোকজন এসে তার স্ত্রীকে ধরে বাড়িতে নিয়ে মারধর করে লোহার শিকল দিয়ে বারান্দায় বেঁধে রাখে। তিনি অভিযোগ করেন, তার স্ত্রীর নানা আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও মোবাইলে তুলে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে জাকারিয়া দীর্ঘদিন থেকে তার স্ত্রীর নিকট থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে। পুলিশ মঙ্গলবার রাতে জাকারিয়ার ফুফু সালমা বেগমের মামলা রেকর্ড করে। আর গত বৃহস্পতিবার রাতে ফারহানার স্বামী আপ্তাব উদ্দিন আতাব মিয়ার মামলা গ্রহণ করেছেন। এ মামলায় ফারহানার স্বামী আতাব মিয়া আসামি হিসেবে জাকারিয়া ও তার ফুফু সালমা বেগমসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে সালেহা বেগম যে মামলা করেছিলেন সেখানে তিনি পরকীয়া প্রেমের কারণে বসতঘরে অনধিকার প্রবেশ, মারধর, ভাঙচুর ও ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ করেন। জকিগঞ্জ থানার ওসি মো. আবুল কাসেম জানিয়েছেন, ঘটনার খবর পেয়ে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ ফারহানা বেগমকে শেকল থেকে ছাড়িয়ে থানায় নিয়ে আসে। এর পরও ফারহানার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ঘটনার দিন ফারহানাকে লোহার জিঞ্জির দিয়ে বেঁধে মারধরের ঘটনায়ও তার স্বামী বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেছেন। সেই মামলায় জাকারিয়াসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়েছি। তিনি বলেন, যখন বিবদমান পক্ষ যে অভিযোগ নিয়ে এসেছেন সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে পুলিশ কোনো পক্ষপাতিত্ব করেনি বরং নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status