অনলাইন

করোনা ভাইরাসের ‘ব্রাজিল ভ্যারিয়েন্ট’ কী

মানবজমিন ডেস্ক

১৫ এপ্রিল ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৩:৩২ অপরাহ্ন

গত বছর অ্যামাজন থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাসের অধিক সংক্রামক রূপান্তরিত ‘ব্রাজিল ভ্যারিয়েন্ট’। এখনও তা এই মহামারিকে আরো নতুন করে খারাপ থেকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এর ফলে ব্রাজিল থেকে ফ্লাইট স্থগিত করেছে বেশ কিছু দেশ। ব্রাজিল ভ্যারিয়েন্ট ‘পি১’ হিসেবে পরিচিত। এই রূপান্তরিত করোনা ভাইরাস সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায়নি। তবে এটা মূল করোনা ভাইরাসের চেয়ে বেশি সংক্রামক। যেসব মানুষকে মূল করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত করেছিল তাদেরকে নতুন করে সংক্রমিত করতে পারে পি১। অণুজীব বিজ্ঞানী নাতালিয়া পাস্তারনাক বলেন, পি১ নিয়ে যে আতঙ্ক তার যৌক্তিক কারণ আছে। এই ভাইরাস অতি মাত্রায় সংক্রামক। ব্রাজিলজুড়ে দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে তা। এই মুহূর্তে ব্রাজিলে করোনা মহামারি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।  

উল্লেখ্য, শুধু গত মাসে করোনা ভাইরাসে ব্রাজিলে মারা গেছেন ৬৬ হাজার ৫০০ মানুষ। ২০২০ সালের জুলাই মাস ছিল সেখানে সবচেয়ে ভয়াবহতা। তখন যে পরিমাণ এক মাসে মারা গিয়েছিলেন গত মাসে মৃতের সংখ্যা তার দ্বিগুণেরও বেশি। বর্তমানে ব্রাজিলে মোট মৃতের সংখ্যা ৩ লাখ ৫৮ হাজার। মৃতের দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরই ব্রাজিলের স্থান। চলতি এপ্রিল মাস সেখানকার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ভাইরাস নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

গবেষকরা মনে করেন, উত্তরাঞ্চলীয় শহর মানাউসে অথবা এর আশপাশে গত ডিসেম্বরে বিস্তার ঘটে পি১-এর। কিন্তু এটাকে প্রথম জাপানে নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেখানে ব্রাজিল থেকে ভ্রমণকারীরা দেশে ফেরার পর এই ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। এখন পর্যন্ত বিশ্বের কমপক্ষে ৩৫টি দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করা হয়েছে, যদিও সংক্রমণের সংখ্যা কমিয়ে রাখা গেছে। কিছু দেশ মনে করে ব্রাজিলে বা ব্রাজিল থেকে ফ্লাইট চালানোর কারণে এই সংক্রমণের বিস্তার ঘটেছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার এমন মন্তব্য করেছে ফ্রান্স।

কেন এত সংক্রামক?
দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের মতো পি১ রূপান্তরিত হয় ই৪৮৪কে হিসেবে। এই রূপান্তরের ফলে ভাইরাসগুলো আমাদের দেহের এন্টিবডিকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়। রূপান্তরের ফলে ভাইরাসগুলোর ‘স্পাইক প্রেটিন’কে পরিবর্তন করে। ফলে খুব সহজেই সে কোষে আক্রমণ করতে পারে। ব্রাজিলিয়ান পাবলিক হেলথ ইন্সটিটিউট ফায়োক্রুজের গবেষক জেসেমি ওরেলানা বলেন, এটা মাস্টার কী বা চাবির মতো, যা অনেক দরজাকে খুলতে পারে।

এই ভাইরাস কি প্রাণঘাতী
পি১ ভাইরাস অধিক প্রাণঘাতী কিনা তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেননি গবেষকরা। প্রাথমিক গবেষণায় ওরেলানা পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, মানাউসের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে উচ্চ হারে মৃত্যু ঘটায়নি এই ভ্যারিয়েন্ট। তিনি মনে করেন, ব্রাজিলে এখন অনেক মৃত্যুর কারণ হাসপাতালে রোগীর গাদাগাদি। অন্য গবেষণায় ইঙ্গিত মিলিছে যে, পি১ অধিক মাত্রায় প্রাণঘাতী।

টিকা কি কাজ করে
পি১ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন টিকা তা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে চীনে তৈরি করোনাভ্যাক, ফাইজার ও এস্ট্রাজেনেকার টিকা এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে আংশিক কার্যকর। যদিও বাস্তব ভিত্তিক ফল আসতে এখনও বাকি। করোনাভ্যাক ব্রাজিলে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও খারাপ খবর আছে। ব্রাজিলে ভাইরাসের বিস্তার থেকে আরো রূপান্তর দ্রুত হচ্ছে। যেমন পি২ এবং পি৪ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। রিও ডি জেনিরোতে পি২ এবং প্রতিবেশী রাজ্য মিনাস জেরাইসে শনাক্ত করা হয়েছে পি৪। ওরেলানা বলেছেন, ব্রাজিল এখন যেন এই ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টের এক উন্মুক্ত ল্যাবরেটরিতে পরিণত হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status