শেষের পাতা

চট্টগ্রামের শপিংমল মানুষের ঢল

জালাল রুমি, চট্টগ্রাম থেকে

১২ এপ্রিল ২০২১, সোমবার, ৯:২৩ অপরাহ্ন

সম্ভাব্য লকডাউনের কারণে গতবারের মতো এবারের ঈদেও শপিং করতে না পারার আশঙ্কায় নগরীর মার্কেট ও শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে ভিড় লেগেছে ক্রেতাদের। রমজান আসার আগেই মার্কেটগুলোতে কেনাকাটার 
ধুম পড়েছে। আর এই ‘খুশির’ সদাইয়ে নেই স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই।
সরজমিন গতকাল রোববার নগরীর নিউমার্কেট, জহুর হকার্স মার্কেট, ২নং গেট শপিং কমপ্লেক্স, ইউনেস্কো ও স্যানমারসহ কয়েকটি মার্কেটে গিয়ে দেখা যায় এই অবস্থা। সব মার্কেটে মানুষ আর মানুষ। এতো মানুষের ভীড় দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই যে করোনা মহামারি চলছে। এদিকে, মার্কেটে আসা ক্রেতাদের একটি বড় অংশের মুখে মাস্ক থাকলেও অধিকাংশ বিক্রেতার নেই। থাকলেও কারওটা থুতনির নিচে, কারওটা মাথায়। আবার কারওটা পকেটে। জিজ্ঞেস করতেই তাদের কয়েকজন জানালেন, এতো গরমের মধ্যে মাস্ক পরে থাকা যাচ্ছে না। তবুও তারা মাস্ক পরে থাকার চেষ্টা করছেন।
সকাল ১১টার দিকে নগরীর ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় মানুষের ভীড়। কাস্টমারদের মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীই বেশি। এদের কেউ কেউ পরিবার নিয়ে কেনাকাটা করছেন। কেউ আবার বন্ধুবান্ধব নিয়ে মার্কেট দেখতে এসেছেন। এদের কারো কাছে মাস্ক আছে, কারো নেই। তবে মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব।
নগরীর জিইসি স্যানমারে পরিবার নিয়ে শপিং করতে আসা আবদুল করিম শিশুপুত্র, স্ত্রীসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন। তাদের মুখে মাস্ক থাকলেও সঙ্গে থাকা শিশুপুত্রের মুখে নেই। এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাচ্চাকে কোনোভাবেই মাস্ক পরিয়ে রাখা যাচ্ছে না। পরানো মাত্রই ফেলে দেয়।
খাতুনগঞ্জের এই ব্যবসায়ী জানান, গত বছরে মার্কেটে গিয়ে শপিং করা হয়নি। এটা নিয়ে স্ত্রী ও পরিবারের অন্যদের মনে কষ্ট ছিল। সে সময় অনলাইনে কিছু কেনাকাটা করলেও এতে কারো মন ভরে নাই তখন। তাই এবার আগে আগে চলে আসলাম। লকডাউন যদি আবার ঈদ পর্যন্ত বেড়ে যায় তখন তো গতবারের অবস্থা হবে। তবে শপিং শেষে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ভালোভাবে হাত মুখ ধোয়ার কথা বলা আছে। বাকিটা আল্লাহ যা করেন আর কি। এদিকে, মার্কেটে প্রায় সব দোকানে প্রবেশ করতে স্যানিটাইজার রাখা হলেও প্রয়োগ নেই অধিকাংশের। অধিকাংশ দোকানে দেখা যায় ক্রেতাদের ভীড়। বিশেষ করে উঠতি বয়সী নারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে নগরীর বিপণী বিতানের এক বিক্রেতা এই প্রতিবেদককে বলেন, আপনারা আছেন সামাজিক দূরত্ব নিয়ে। এতো আইন মানতে গেলে আমরা খাবো কি? আল্লাহ যেমন করোনা দিয়েছেন, পেটও তিনি দিয়েছেন। সবকিছুই তো মাথায় রাখতে হবে। করোনা পরিস্থিতিতে মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জানতে চাইলে নগরীর ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামীম মানবজমিনকে বলেন, সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এখানে ব্যবসায়ীরা বিকিকিনি করছেন। দোকানদারদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রত্যেক দোকানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মাস্ক ছাড়া মার্কেটে প্রবেশ ইতিমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এটা নিয়ে মার্কেটের ভেতর বিভিন্ন লিফলেট দেয়ার পাশাপাশি নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি যেসব ক্রেতা মাস্ক ছাড়া আসছেন তাদের জন্য মাস্কেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এতকিছুর পরও বিচ্ছিন্ন কিছু বিষয় তো আছে। কারণ আমরা স্বভাবগতভাবে আইন অমান্য করে মজা পাই। তবে একইসঙ্গে ভবিষ্যতে লকডাউন দিলে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলবেন বলে জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।
চলমান করোনা সংকটে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ না মানায় নগরীতে গত শুক্র ও শনিবার দুইদিনে ৭১টি মামলা দায়েরের পাশাপাশি বিভিন্ন দোকানপাট থেকে মোট ১ লাখ ২৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। জেলা প্রশাসনের ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এই অভিযানে সে সময় প্রায় ৬ হাজার মাস্ক বিতরণ করা হয়। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আইন না মানলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দু’দিনে ৭১টি মামলা ও লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status