প্রথম পাতা

ঢাকার বাইরেও বেসামাল পরিস্থিতি

নূরে আলম জিকু

১১ এপ্রিল ২০২১, রবিবার, ৯:৫৩ অপরাহ্ন

সারা দেশেই করোনার আগ্রাসী থাবার বিস্তার হচ্ছে। এতদিন ঢাকায় প্রকোপ বেশি থাকলেও এখন জেলা-উপজেলায় বাড়ছে সংক্রমণ। কোথাও কোথাও রেকর্ড রোগী শনাক্ত হচ্ছে। বাড়ছে মৃত্যু। জেলা-উপজেলা এমনকি বিভাগীয় পর্যায়েও করোনায় আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা না থাকায় অনেকে রোগী নিয়ে রাজধানীতে আসছেন। তবে এখানে এসেও অনেকে রোগী ভর্তি বা আইসিইউ’র সেবা পাচ্ছেন না। গত মার্চ মাসে ঢাকার তুলনায় বাইরের জেলাগুলোতে করোনার সংক্রমণ অনেক কম থাকলেও, চলতি মাসের প্রথম দিক থেকেই শনাক্ত বেড়েছে কয়েকগুণ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরীক্ষার সেবা সমপ্রসারিত হওয়ার পর থেকেই দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যত বেশি পরীক্ষা করা হবে রোগীর সংখ্যা তত বাড়বে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিনই জেলায় জেলায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।  ঢাকার বাইরের প্রাপ্ত নমুনার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি। এতে একদিকে যেমন বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। তেমনি বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। হাসপাতালে বেড়েছে রোগী ভর্তির সংখ্যা। ভর্তিকৃত রোগীদের অর্ধেকের বেশি প্রয়োজন হয় অক্সিজেন। অক্সিজেন সংকটে পড়ে বহু রোগী জেলা থেকে বিভাগীয় শহরের হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। আইসিইইউ’র সুবিধা না পেয়ে মারা যাচ্ছেন করোনায় আক্রান্ত রোগীরা। চাপ বেড়েছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও। এছাড়া উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন অনেকেই।

গত মার্চ মাসে জেলা শহরগুলোতে শনাক্তের হার ছিল ২ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যে। চলতি মাসে করোনায় শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের উপরে উঠেছে। গত বুধবার বরিশালে আক্রান্তের হার ছিল ৩৯ শতাংশ। এদিন ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে তার মধ্যে ৭৩ জন করোনা পজিটিভ হন। মৌলভীবাজর জেলায় গত মাসে করোনা আক্রান্তের হার ছিল ৫ শতাংশের নিচে। ওই মাসের শেষ সপ্তাহে দৈনিক আক্রান্তের হার ২২ থেকে ৩০ শতাংশে পৌঁচ্ছায়।  গত শুক্রবার ৯৬ টি নমুনা পরীক্ষা করলে তার মধ্যে ২৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এতে শনাক্তের হার প্রায় ২৮ শতাংশ। এদিকে কিশোরগঞ্জ জেলায় গত এক সপ্তাহে ১ হাজার ৭৮১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে ২৪৮ জনের করোনা পজিটিভ আসে। শনাক্তের হার প্রায় ১৪ শতংশ। নারায়ণগঞ্জে চলতি মাসের প্রথম ৯ দিনে শনাক্তের হার গড়ে ২২ শতাংশের অধিক। এই সময়ে ৪ হাজার ৯৭৭ জনের নমুনা টেস্টে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ১১৩ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশব্যাপী করোনার বিস্তার বাড়লেও এখনো পরীক্ষা নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। অনেকেই নমুনা দিতে এসে ভোগান্তির শিকার হয়ে বাসা বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার নমুনা দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। এতে করে সংক্রমণ আরো বেশি পরিমাণে ছড়িয়ে পড়ছে। হাসপাতালগুলোতে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরো বাড়ালে শনাক্তের হার আরো বৃদ্ধি পাবে। গ্রামে-গঞ্জে জনগণের করোনা নিয়ে অসচেতনতার কারণে সঠিক শনাক্তের হার জানা যাচ্ছে না। এদিকে দেশের বিভিন্ন জেলায় পিসিআর ল্যাব না থাকায় সংকটে পড়েছেন আক্রান্ত রোগীরা। নমুনার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে দিনের পর দিন। রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরে যাচ্ছে নমুনা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো অনেক  জেলায় নমুনার ফলাফলও পেতে বিলম্ব হচ্ছে। এতে মানুষের মধ্যে নমুনা টেস্টের আগ্রহ কমছে।

কিশোরগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, কিশোরগঞ্জে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে জেলায় ১ হাজার ৭৮১টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে ২৪৮ জনের কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে মারা গেছেন তিনজন। করোনা উপসর্গ এবং আক্রান্ত হয়ে বেড়েছে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা। শুক্রবার রাতে পাওয়া রিপোর্টে কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬৫ জন। যাদের মধ্যে ৬ জন আইসিইউতে রয়েছেন। এ পর্যন্ত জেলায় মোট ৪১৩২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ৩৬৮২ জন আর ৭০ জন মৃত্যু হয়েছে। জেলায় বর্তমানে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৮০ জন। তাদের মধ্যে ৪০ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ৩৪০ জন হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। শনাক্ত, সুস্থ ও মৃত্যু সব সূচকেই জেলার মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা শীর্ষে রয়েছে। এরপরেই রয়েছে ভৈরব উপজেলা।

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান,  নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা বেড়েই চলছে। প্রতিদিনই আশঙ্কাজনকভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। গত ৯ দিনে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৪ হাজার ৯৭৭ জনের। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, গত ১লা এপ্রিল থেকে ৯ই এপ্রিল পর্যন্ত জেলায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছে ৯৯৯ জন। মারা যাওয়া ১২ জনের মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকায় ৫ জন, সদরে ৩ জন, রূপগঞ্জে ২ জন ও সোনারগাঁয়ে ২ জন।

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, বরিশালে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। গত ৪দিনে মৃত্যু হয়েছে ১৪জনের। আক্রান্তের হারে দেশের সবোচ্চ সীমা অতিক্রান্ত করেছে। গত বুধবার  বরিশালে আক্রান্তের হার ছিল সর্বোচ্চ ৩৯ভাগ। ১৮৮জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে ৭৩জন পজেটিভ হন । শনিবার বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল শের-ই-বাংলা  মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৪জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. আব্দুর রাজ্জাক। এ নিয়ে বরিশালে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ২২৫। এদিকে শুক্রবার বরিশালে মোট শনাক্ত ছিল ১০২ জন। মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। তবে বৃহস্পতিবার আক্রান্তের সকল রেকর্ড অতিক্রম করে করোনা। এদিনে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৪৭ জন। মারা গেছেন ৫ জন।

স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার থেকে জানান, গত মার্চ মাসে মৌলভীবাজরে করোনা আক্রান্তের হার ছিল ৫ শতাংশের নিচে। ওই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আক্রান্তের হার দাঁড়ায় ২২ থেকে ৩০ শতাংশে। আর চলতি মাসে এই হার কম-বেশি অব্যাহত রয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৬২৮টি নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকা এবং সিলেটের ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে পজিটিভ এসেছে ২ হাজার ১১০টি।  জেলায় বর্তমানে করোনার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৬০। এরমধ্যে তিনজন হাসপাতালে, অন্যরা নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২৫ জন। সর্বশেষ শুক্রবার সিভিল সার্জন অফিস জানায় শাহ্‌জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিসিআর ল্যাবে ৯৬ টি নমুনা পরীক্ষায় ২৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ২৮ শতাংশ। এদের মধ্যে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ২২ জন, শ্রীমঙ্গলের ৩ জন, রাজনগরের ১ জন এবং কমলগঞ্জের ১ জন রয়েছেন। জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ১৩৮ জন। মারা গেছেন ২৫ জন।

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে জানান, গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ-মৃত্যুহার বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৫ জন। এনিয়ে বন্দরনগরীতে এখন পর্যন্ত  ৪৪ হাজার ৯১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মোট মৃত্যু হয়েছে ৪১৪ জনের। করোনা  সংক্রমণ বাড়লেও চট্টগ্রামে মানুষের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না তেমন কোনো সচেতনতা। আগের তুলনায় মাস্ক পরার হার বাড়লেও সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই কোথাও। চারদিন লকডাউন শেষে মার্কেট-শপিংমল খোলায় সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status