প্রথম পাতা

বাধ্য হয়ে টিসিবি’র লাইনে মধ্যবিত্তরা

আলতাফ হোসাইন

১১ এপ্রিল ২০২১, রবিবার, ৯:৪৭ অপরাহ্ন

করোনার প্রথম ধাক্কাতেই বিপর্যয়ের মুখে পড়ে মানুষের জীবন-জীবিকা। বন্ধ হয়ে যায় হাজার হাজার মানুষের আয়-রোজগারের পথ। এ অবস্থায় মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় নতুন করে হুমকির মুখে পড়েছে জীবন ও জীবিকা। এমন সংকটকালে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের। বাজারে এখনো চাল, তেল, ডাল, চিনি, পিয়াজসহ অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম চড়া। এরমধ্যে রমজান ও লকডাউন ঘিরে নতুন করে বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে কম মূল্যে পণ্য কিনতে টিসিবি’র ট্রাকসেলে ভিড় করছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এতদিন টিসিবি’র লাইনে সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষদেরই বেশি দেখা যেত। কিন্তু বাজারে অস্থিরতার কারণে এখন অনেক চাকরিজীবী কিংবা মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষও টিসিবি’র লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। প্রচণ্ড রোদ-গরমের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছেন তারা।  

সরজমিন রাজধানীর মিরপুর ও তেজগাঁও এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, কমমূল্যে পণ্য নিতে দীর্ঘ লাইন পড়েছে টিসিবি’র ট্রাকসেলে। স্বল্প আয়ের মানুষের পাশাপাশি অনেক মধ্য আয়ের মানুষও দাঁড়িয়েছেন এসব লাইনে। ভ্রাম্যমাণ ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৪ কেজি চিনি, ৫৫ টাকা কেজি দরে ২ কেজি মসুর ডাল, ১০০ টাকা দরে ৫ লিটার সয়াবিন তেল এবং ২০ টাকা দরে ৫ কেজি পিয়াজ কিনতে পারছেন। এ ছাড়া ইফতার উপকরণের মধ্যে ২ কেজি ছোলা ৫৫ টাকা দরে এবং এক কেজি খেজুর ৮০ টাকা দরে কিনতে পারছেন ক্রেতারা।
তেজগাঁও থানার পাশে টিসিবি’র ট্রাকসেলে গিয়ে দেখা যায়, প্রচণ্ড রোদ, গরম ও ভিড় উপেক্ষা করে নানা বয়সী নারী-পুরুষ লাইনে দাঁড়িয়েছেন। রয়েছেন শিশুরাও। এদের মধ্যে স্বল্প আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্য আয়ের মানুষও রয়েছেন। লাইনে দেখা যাচ্ছে সরকারি- বেসরকারি চাকরিজীবীদেরও। তাদের মধ্যে ১ জন হাসিবুর রহমান। তিনি মানবজমিনকে জানান, একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন তিনি। মাসে বেতন পান সাড়ে ২৩ হাজার টাকা। তিনি বলেন, বাধ্য হয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছি। কিছু করার নেই। বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। এখান থেকে একটু কম দামে নিতে পারলে খারাপ কি? এখানে ১০০ টাকা দরে তেল নিতে পারছি। আর খুচরা বাজারে গেলে ১৪০ টাকায় নিতে হবে। চিনির দামও কম এখানে। আর বাজারে সবকিছুর দামই তো বেশি। তো এখান থেকে ২-৩টি পণ্য কম দামে নিতে পারলে কিছুটা তো সাশ্রয় হলো। তিনি ভ্রাম্যমাণ ট্রাক থেকে ৫ লিটার তেল, ২ কেজি চিনি ও ২ কেজি ডাল কিনেন। পরে তিনি বললেন, ঢাকায় থেকে যে বেতন পাই তাতে বাসা ভাড়া আর বাজার সদাই করতেই চলে যায়। এরপর ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ চালাতে হয়। সেজন্য কীভাবে একটু খরচ কমানো যায় সেই চিন্তাই করি। টিসিবি থেকে যে দামে তিনটা জিনিস কিনলাম এটা বাজারে গেলে প্রায় ৩০০ টাকা বেশি খরচ হতো। এটুকু সাশ্রয় আমাদের জন্য অনেক কিছু। কারণ এই শহরে আমাদের যুদ্ধ করেই চলতে হয়। চাকরি করি বলে লজ্জা করে তো লাভ নাই। এখানে যারা দাঁড়িয়েছে তাদের বেশির ভাগই স্বল্প আয়ের সেটা বোঝাই যাচ্ছে। তবে খেয়াল করে দেখেন আমার মতো চাকরি করা লোকও অনেক আছেন।

কচুক্ষেত এলাকায় টিসিবি’র লাইনে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ কাস্টমসে চাকরি করা মিজান। তিনি বলেন, এত কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়েছি শুধু একটু কম দামে কেনার জন্য। বাজারের তুলনায় এখানে কিছুটা কম। এখান থেকে ৫ কেজি তেল নিলে কেজিতে যদি ৪০ টাকা বাঁচে তাহলে ২০০ টাকা সাশ্রয় হয়। ২০০ টাকা আমাদের জন্য অনেক। চাকরি করি বলে লজ্জা নেই। বাজারে সব পণ্যের দাম বেশি। যে বেতন পাই সঞ্চয় তো দূরের কথা খেয়ে দেয়েই সব চলে যায়। বউ-বাচ্চা নিয়ে কুলাতে পারি না।

ট্রাকসেলের বিক্রেতা আলাউদ্দিন বলেন, আগে শুধু গরিব মানুষ টিসিবি থেকে জিনিস কিনতো। রিকশাচালক ও বস্তির লোকজন আসতো। এখন গরিব মানুষের পাশাপাশি অনেক মধ্যবিত্ত লোকরাও আসেন। বাজারে বেশি দাম সেজন্যই এখানে আসেন। আগের তুলনায় ভিড়ও বেড়েছে। সেজন্য বরাদ্দও এখন বেশি করা হয়েছে। আগে এক টন তেল বরাদ্দ ছিল। লকডাউনের পরে এখন ২০০ কেজি বেড়েছে। আগের বরাদ্দ থেকে ১০০ কেজি বাড়িয়ে এখন ৮০০ কেজি চিনি দেয়া হচ্ছে। আর প্রতি ট্রাকের জন্য বর্তমানে ৬০০ কেজি ডাল ও ৪০০ কেজি ছোলা বরাদ্দ থাকছে।

টিসিবি’র তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির মানবজমিনকে জানান, বর্তমানে রাজধানীর ৮০টি স্থানে ট্রাকসেলের মাধ্যমে কয়েকটি পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। সারা দেশে ৫০০ ট্রাকে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা বেশি হওয়ায় ট্রাকগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়ও বেড়েছে। সেজন্য পণ্যের পরিমাণও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
ওদিকে লকডাউন ও রমজানকে ঘিরে বাজারে ভিড় দেখা গেছে। অনেকে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পণ্য কিনছেন। ফলে বি?ভিন্ন বাজারে মানভেদে সব ধরনের চাল, সয়াবিন তেল, মশুর ডাল, পিয়াজ, খেজুর, আলু, দেশি রসুন ও আদাসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়তি দেখা গেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status