শেষের পাতা

জরিপ

করোনা মহামারিতে প্রান্তিক পরিবারের ঋণের বোঝা বেড়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

৯ এপ্রিল ২০২১, শুক্রবার, ৯:১৭ অপরাহ্ন

করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলোর ঋণের বোঝা বাড়ছে। পাশাপাশি সঞ্চয় হারাচ্ছে তারা। খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত ব্যয় কমানো, সঞ্চয় ভেঙে চলার মতো পদক্ষেপের পরও ৬০.৫ শতাংশ পরিবার দেনার মধ্যে পড়েছে বলে অতিমারির প্রভাব নিয়ে পরিচালিত এক জরিপে উঠে এসেছে। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম ফেব্রুয়ারি মাসে এ জরিপ পরিচালনা করে।

বৃহস্পতিবার ‘কীভাবে অতিমারিকে মোকাবিলা করছে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী; একটি খানা জরিপের ফলাফল’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে ফলাফল উপস্থাপন করেন জরিপের প্রধান গবেষক বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ইশতিয়াক বারী। মহামারি চলাকালীন সময়ে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য, আর্থিক ও জীবনধারণের উপর প্রভাব নিয়ে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। দেশের এক হাজার ৬০০ খানায় সরাসরি পরিচালিত এ জরিপে কোভিড-১৯ বিষয়ক বিভিন্ন জিজ্ঞাসার জবাবও দিয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা। এদের মধ্যে ৮২ শতাংশ পরিবার সরকারের বিনামূল্যের ভ্যাকসিন নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। অন্যদিকে ৭৮.৭ শতাংশ করোনাভাইরাস নিয়ে খুব বেশি ভোগেননি বলে জরিপে তুলে ধরেন গবেষক ইশতিয়াক। জরিপে দেশের চর, হাওর ও উপকূলীয় এলাকার ১০০ করে ও বস্তির ৪০০ পরিববার এবং ৩০০ আদিবাসী পরিবারের কাছে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

গবেষণার ওপর মূল্যায়ন করতে গিয়ে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি’র বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অতিমারি চলাকালীন সময়ে প্রান্তিক মানুষের জন্য সরকারি সহায়তা যথেষ্ট নয়। এই সহযোগিতা আরো বহুগুণ বাড়ানো উচিত। তিনি বলেন, এই অতিমারি সংকটাপন্ন মানুষকে আরো বিপন্ন করেছে। তাদের এই সমস্যা বহুমাত্রিক। একদিকে তাদের আয় কমে গেছে, খাদ্য সংকটে পড়েছে, আবার ঋণগ্রস্ত হচ্ছে। মহামারি মোকাবিলায় আগামী বাজেটে ‘সংহতি তহবিল’ গঠনের পরামর্শ দিয়ে ড. দেবপ্রিয় বলেন, এই তহবিল থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ নিশ্চিত করা গেলে প্রান্তিক মানুষের সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে সিপিডি’র আরেক বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সংহতি তহবিল গঠনকে যৌক্তিক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে এটি সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পরিচালনার কাঠামো গঠনের কথা বলেন। তিনি আগামী বাজেটে এজন্য বিশেষ বরাদ্দ দেয়ার পরামর্শ দেন।

এক প্রশ্নের জবাবে জরিপের প্রধান গবেষক ইশতিয়াক বলেন, জরিপকালে এসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠী জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের সময়কার কষ্টের মধ্যে টিকে থাকতে প্রথমে খাদ্য বাছাইয়ে সামঞ্জস্য আনার অর্থাৎ সুষম খাবার বাদ দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এরপর খাদ্য বহির্ভূত পণ্য কেনা বাদ দিয়েছেন। এরপরও ৬০.৫ শতাংশ পরিবার বলেছেন তারা ঋণগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, মহামারির মধ্যে তারা চলমান আয় দিয়ে চলতে পারছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে- উপকূলীয় এলাকার ৮৬ শতাংশ, বস্তিবাসীর ৮৭ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি (এমএসএমই) উদ্যোক্তাদের প্রায় ৯৩ শতাংশ মানুষ তাদের চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।
গবেষণার উপাত্ত তুলে ধরে তিনি জানান, অতিমারির সময়কালে পরিবারগুলোর মধ্যে ৮০.৬ শতাংশ খাদ্যের জন্য ব্যয় কমিয়েছে। খাদ্য বহির্ভূত ব্যয় কমিয়েছেন ৬৪.৫ শতাংশ পরিবার।

জরিপ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৯.৪ শতাংশ পরিবার সরকারি ও বেসরকারি উৎস থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন। এর মধ্যে ২৩.৫ শতাংশ পরিবার সরকারি আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। ২৬.৪ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় ভেঙেছে বলে উল্লেখ করে। অন্যদিকে, ৮.৪ শতাংশ পরিবার আর্থিক অনটনে পড়ে গবাদিপশু বিক্রি করেছে। ২.৯ শতাংশ পরিবার জমি বা স্বর্ণ বন্ধক দিয়ে অর্থের সংস্থান করেছে।

জরিপের ফলাফল তুলে ধরে ইশতিয়াক বলেন, এ সময়ে চরাঞ্চলের ২১.১ শতাংশ মানুষের আয় কমে গেছে। অন্যান্য এলাকায়ও ১৪-১৮ শতাংশের আয় কমেছে। একই সময়ে এদের মধ্যে ৭-১০ শতাংশ ব্যয় কমিয়েছেন। জরিপের তথ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ মানুষের সঞ্চয় কমে গেছে বলে জানান তিনি।

জরিপে ৭০ শতাংশ পরিবারের সদস্য জানিয়েছেন, তারা কোভিড-১৯ টেস্টের প্রয়োজন অনুভব করেননি। ১২.৩ শতাংশ বলেছে আর্থিক অক্ষমতার কারণে তারা টেস্ট করাতে পারেননি। আবার ২.৫ শতাংশ মানুষকে চিকিৎসক পরামর্শ দিলেও তারা পরীক্ষা করাননি। এদের মধ্যে কোথায় যেতে হবে তা না জানা এবং সামাজিক নিপীড়নের ভয়ের কথাও উল্লেখ করেন তারা। তবে এসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সরকার ফ্রি ভ্যাকসিন দিলে তা নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে ৮২ শতাংশ মানুষ।

গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, মহামারিকালে ৩৭.৩ শতাংশ মানুষ সরকারি সহায়তা নিয়েছেন। ১১.৯ শতাংশ পারিবার, বন্ধু ও প্রতিবেশীদের থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন। বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন ২১.৯ শতাংশ। আবার বিভিন্ন দান বা অনুদান নিয়েছেন ৮.৬ শতাংশ মানুষ।
মহামারির প্রথমদিকে প্রতি ৭০ জনে একজন চাকরি হারিয়েছেন। পরে আবার প্রতি ৯১ জনের মধ্যে একজন চাকরি পেয়েছেন বলে জরিপের আরেক উপাত্তে দেখা গেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status