বাংলারজমিন
সন্তানের মুখ দেখা হলো না আনোয়ারের
মাহবুব খান বাবুল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে
৭ এপ্রিল ২০২১, বুধবার, ৭:৪৯ অপরাহ্ন
সরাইল সদর ইউনিয়নের সৈয়দটুলা গ্রামের সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। বয়স ৪৪ বছর। ১৫ বছর ছিলেন প্রবাসে। শিক্ষক সৈয়দ শাহজাহানের বড় ছেলে তিনি। সংসারের সুখ ও পিতা-মাতার মুখে হাসি ফুটাতে পাড়ি দিয়েছিলেন প্রবাসে। ভালোই চলছিল তাদের পরিবার। সর্বশেষ ৯ বছর আগে এসেছিলেন দেশে। বিয়ে করে সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে রেখে কয়েক মাস পরই আবার চলে যান। কন্যা সন্তানের বাবা হলেন। একমাত্র কন্যা মাওয়ার বয়স এখন ৮ বছর। সন্তানের খবর শুধু কানেই শুনলেন। চোখে দেখেননি। কথা হয়নি। সন্তানকে ছুঁয়ে কোনো দিন আদরও করতে পারেননি। এমন সব হাজারো চাওয়া অপূরণীয় রেখেই আনোয়ার গত ১৮ই মার্চ রাতে সৌদি আরবের রিয়াদের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চলে গেলেন পরপারে। তার আকস্মিক মৃত্যুর খবরে শুধু পরিবার নয়, শোকে কাতর হয়ে পড়েছে গোটা গ্রাম। একমাত্র মেয়ের মুখ আর দেখা হলো না আনোয়ারের। বাবাকেও জড়িয়ে ধরা হলো না মেয়ে মাওয়ার। পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সরাইল উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সৈয়দ ইসমাইল হোসেন উজ্জ্বলের বড় ভাই আনোয়ার। ৫ ভাই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। একমাত্র বোন জুঁই। মা মারা গেছেন অনেক আগে। সংসারের সুখের জন্য অনেক আগেই চলে গিয়েছিলেন সৌদি আরব। চাকরির পাশাপাশি সেখানে ব্যবসাও করতেন। সম্প্রতি প্রবাসে অসুস্থতায় ভুগছিলেন আনোয়ার। গত ১৭ই মার্চ দেশে ফেরার পূর্ণ প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ১৮ই মার্চ দিবাগত রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরপারে চলে যান আনোয়ার। দেশে আসা ও মেয়ের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে অপূরণীয়ই রয়ে গেল তার।
দীর্ঘ ৯ বছর স্বামী আসার অপেক্ষায় থাকা স্ত্রী রুমার স্বপ্ন ভেঙে গেল। আনোয়ারদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের স্বজনদের মাঝে চলছে শোকের মাতম। চিকিৎসার সময় আনোয়ারের সঙ্গে থাকা ছোট ভাই ইকবালকে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘আমি কি দেশে ফিরে স্বজনদের দেখে মরতে পারবো না?’ তার আক্ষেপই শেষ পর্যন্ত সত্য হলো। আনোয়ারের আরেক ছোট ভাই সৈয়দ ইসমাইল হোসেন উজ্জ্বল বলেন, জীবিত বাবাকে না দেখার বেদনা সারা জীবন তাড়া করে বেড়াবে মাওয়াকে। শিশু মাওয়া যেন পিতার নিথর দেহের মুখটা অন্তত একটি বার দেখতে পায়। তাই ভাইয়ের লাশটি দেশে আনার জন্য চেষ্টা করছি।
দীর্ঘ ৯ বছর স্বামী আসার অপেক্ষায় থাকা স্ত্রী রুমার স্বপ্ন ভেঙে গেল। আনোয়ারদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের স্বজনদের মাঝে চলছে শোকের মাতম। চিকিৎসার সময় আনোয়ারের সঙ্গে থাকা ছোট ভাই ইকবালকে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘আমি কি দেশে ফিরে স্বজনদের দেখে মরতে পারবো না?’ তার আক্ষেপই শেষ পর্যন্ত সত্য হলো। আনোয়ারের আরেক ছোট ভাই সৈয়দ ইসমাইল হোসেন উজ্জ্বল বলেন, জীবিত বাবাকে না দেখার বেদনা সারা জীবন তাড়া করে বেড়াবে মাওয়াকে। শিশু মাওয়া যেন পিতার নিথর দেহের মুখটা অন্তত একটি বার দেখতে পায়। তাই ভাইয়ের লাশটি দেশে আনার জন্য চেষ্টা করছি।